এম শাহজাহান ॥ আসন্ন কোরবানির ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যেতে শ্রমিকদের নিরৎসাহিত করা হবে। মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে পোশাক খাতের মালিকরা তাদের শ্রমিকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন। করোনা সংক্রমণরোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শ্রমিকরা যাতে ৩-৪ দিনের ছুটি পেয়ে বর্তমান আবাসস্থলেই অবস্থান করেন সেজন্য তাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে শ্রমিকদের কাউন্সেলিং করানোর মতো কর্মসূচী গ্রহণের কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বেতন-বোনাস নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য নিদের্শনা রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রতিনিধিরা বলছেন, কিছু কারখানায় সমস্যা থাকলেও সিংহভাগ কারখানা কোরবানির আগে বেতন-বোনাস প্রদানে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
জানা গেছে, কোরবানির ছুটি এবং শ্রমিকদের গ্রামের বাড়ি যাওয়া ঠেকানো নিয়ে উদ্বিগ্ন মালিকপক্ষ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
উল্লেখ্য, কঠোর লকডাউনের মধ্যে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পোশাক খাতের কারখানাগুলো চালু রাখা হয়েছে। বড়দিন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বড় বড় অর্ডার এখন বাংলাদেশে আসছে। আর এ কারণে এই সময় গার্মেন্টসে কাজের চাপ খুব বেশি। গত রোজার ঈদে ছুটি পেয়েই পোশাক খাতের শ্রমিকরা নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি ছুটে গেছেন। ওই সময় শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়া বন্ধে গণপরিবহন ও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হলেও তা আমলে নেননি গার্মেন্টস শ্রমিকরা। বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সময় সিএনজি, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল, পণ্যবাহী ট্রাক, এ্যাম্বুলেন্স ও লেগুনার মতো পরিবহনে ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া গুনে তারা ছুটে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। এমনকি হেঁটে ছুটে গেছেন তারা। শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের বাড়ি যাওয়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের সব পদক্ষেপ সেই সময় প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। এরপর শ্রমিকরা ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু দেশের করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার এখন প্রতিদিন আগের রেকর্ড ভাঙ্গছে। এ অবস্থায় আসন্ন কোরবানির ঈদের ছুটিতে দেশের ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকের বাড়ি যাওয়া আটকানো চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি এসএম মান্নান কচি জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকরা কোরবানি ঈদের ছুটি পাবেন, তাদের বেতন-বোনাস নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। তবে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে তারা যাতে গ্রামের বাড়ি ছুটে না যান সে বিষয়টি আমরা তাদের বোঝাব। প্রয়োজনে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের অনুরোধ ও কাউন্সেলিং করানো হবে। শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং করোনামুক্ত রাখা মালিকপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এ মুহূর্তে বিদেশী অর্ডারের চাপ রয়েছে তাই কাজের চাপও বেশি। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বড় কঠিন এই বাস্তবতা শ্রমিক ভাই-বোনদের বুঝতে হবে। তিনি বলেন, আরও একটু কঠিন ভাষায় বলতে হয়, চাকরি করতে হলে নিজ কর্মস্থলে থাকতে হবে।
জানা গেছে, একদিকে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ। অপরদিকে করোনা মহামারী। রাষ্ট্র কোন্টিকে গুরুত্ব দেবে সেই ভাবনায় পড়েছে সরকার। ঈদকে গুরুত্ব দিলে লকডাউন তুলে নিতে হবে, নতুবা ঢিলেঢালা করতে হবে। এতে কারোনা সংক্রমণ বাড়বে। করোনা বাড়লে জীবন হুমকিতে পড়বে। অপরদিকে করোনাকে গুরুত্ব দিলে ঈদের আনন্দ ¤øান হবে। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামী ২১ জুলাই বাংলাদেশে ঈদ-উল আজহা উদযাপিত হবে। ২১ জুলাই ঈদ ধরে, এবার সরকারী ছুটি ২০-২১-২২ জুলাই (মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার)- এই তিন দিন ধরা আছে। পরের দুদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এই হিসেবে কোরবানিতে ঈদের সরকারী ছুটি হবে পাঁচদিন। করোনা নিয়ন্ত্রণে এবার ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে অফিস-আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য, দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট, গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে চালু রয়েছে দেশের সকল পোশাক খাত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানাগুলো চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা ঈদের ছুটিতে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে পোশাক খাতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।