
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে প্রচণ্ড ভিড় পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ঈদের ছুটির মতো চিত্র
ঢাকা ছাড়ছে মানুষ ॥ ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন

আজাদ সুলায়মান ॥ আগামী ১ জুলাই থেকে সাতদিনের কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে সারাদেশ। তার আগে সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন হচ্ছে। এবার কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় মানুষ বেশ সতর্ক। তুচ্ছ অজুহাতে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না- এমন বদ্ধমূল ধারণা থেকেই মানুষ ছুটছে নিজ গন্তব্যে। সরকারী, বেসরকারী অফিস-আদালতের পাশাপাশি ব্যবসাবাণিজ্য সব কিছু বন্ধ থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ায় শুক্রবার থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। শনিবার দিনভর বিভিন্ন যানবাহনে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই গ্রামে ফিরে গেছেন লাখ লাখ নগরবাসী। আজও যাবেন অনেকেই। একইভাবে যারা গ্রামে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন তাদেরও একটা অংশ ঢাকায় ফিরছেন। শনিবার রাজধানীতে ছিল ছুটির আমেজ। অনেককেই দেখা গেছে, এক-দুই সপ্তাহের নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে ফেলতে। বাজারে ছিল প্রচণ্ড ভিড়- দামও ছিল বাড়তি। রাজপথে যানবাহনের সংখ্যাও ছিল কম। রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে। পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটে গত ঈদের মতো ভিড়। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সিটি সার্ভিসের বাস, ট্রাক, হিউম্যান হলার, সিএনজি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে তাদের।
সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে এবং আগামী ১ জুলাই থেকে সাতদিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করছে সরকার। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার শনিবার রাতে জানান, সোমবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা আগামী ১ জুলাই থেকে ৭ দিন ঘোষণা করা হবে। সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করা হবে। শনিবার সন্ধ্যায় লকডাউন বিষয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিষয়ে বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
সরকারী সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনে আগের মতো আর কোন তুচ্ছ অজুহাতে ঘর থেকে বের হবার সুযোগ দেয়া হবে না। জরুরী সেবার আওতা ছাড়া সবার জন্য বিধিনিষেধ থাকবে নজিরবিহীন। মাঠে থাকছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। তবে পুলিশ জনগণের কল্যাণে জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যাবার জন্য গতবারের মতো এবারও রাখছে মুভমেন্ট পাসের সুযোগ। লকডাউনে সব অফিস বন্ধ থাকলেও অর্থবছর শেষ হওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও হিসাব সংক্রান্ত কিছু অফিস সীমিত পরিসরে খোলা রাখার কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। পাশাপাশি জরুরী সেবায় কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কিছু শাখায় কার্যক্রম চলবে।
এবারের লকডাউন পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ঈদ-উল-ফিতরে সরকারের বিধিনিষেধ জারি থাকা সত্ত্বেও ঈদ করতে রাজধানী ছেড়েছিল মানুষ। এবারও সামনে ঈদ-উল-আজহা। তাই সরকারের লকডাউনের ঘোষণা আসায় ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। গত ২২ জুন রাজধানীর আশপাশের চার জেলাসহ দেশের সাতটি জেলায় লকডাউন জারি করে সরকার। ওইদিন থেকে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন। কিন্তু সরকারের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই বাড়ির উদ্দেশে ছুটছে মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর গাবতলীতে বাড়িফেরা মানুষের ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। শনিবার রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী গিয়ে দেখা যায়-দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও মানুষ বিকল্প উপায়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঢাকা ছাড়ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে চড়ে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন মোঃ সোহেল। লকডাউনের খবর শুনে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে পাঠাতে গাবতলী এসেছেন তিনি। সোহেল বলেন, প্রাইভেটকার ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। লকডাউন এক থেকে দুই মাস থাকতে পারে। সবকিছু চিন্তাভাবনা করেই ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। তবে ঢাকার এত কাছে হওয়া সত্ত্বেও ভাড়া বেশি নিয়েছে। আমি পাঁচ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করেছি।
এদিন সরজমিনে আরও দেখা যায়, সরকারের দেয়া নির্দেশনা অমান্য করে সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পারছে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছে। যদিও স্বাভাবিক সময়ের মতো গণপরিবহন না চলায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষের অধিকাংশই শ্রমজীবী। তাদেরই একজন ঝিনাইদহের মোশারফ গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। চিন্তা করেছিলাম বাড়িতে যাব না। কিন্তু লকডাউনের ঘোষণায় বাড়িতে চলে যাচ্ছি। লকডাউনের সময়টুকু মা-বাবার ও আমার সন্তানের সঙ্গে থাকতে চাই। আজকেই সুযোগ, কাল থেকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। মোটরসাইকেল চালক সিহাব বলেন, সকাল থেকে তিনটা ট্রিপ মেরেছি। তিন ট্রিপে দুই হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া পেয়েছি। পাটুরিয়া ঘাটে খুব ভিড়। সব মানুষ বাড়ি চলে যাচ্ছে। আমি গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত এক হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছি।
একই দিন দেখা যায়, দুপুরে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে অসংখ্য মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে। তারা পরিবহন না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে গাদাগাদি করে রাজধানীতে আসছেন। শত শত মানুষ বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করছেন। সাত জেলায় লকডাউন চলায় ব্রিজ দিয়ে কোন বাস চলছে না। যাত্রীরা কোন উপায় না পেয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যানে চড়ে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ব্রিজ পার হচ্ছেন। অনেকে কোন উপায় না পেয়ে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন। লালবাগ বিভাগ ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহন ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। তাদের আটক করে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
এ সময় কোতয়ালি ট্রাফিক জোনের পরিদর্শক এ কে এম মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যানে করে ব্রিজ দিয়ে চলাচল অবৈধ। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। তাদের আটক করা হচ্ছে। সারাদেশে কঠোর লকডাউনের সরকারী ঘোষণা আসার পর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে শনিবার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে যাত্রা করা মানুষের ভিড়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করেই ঘাটে ভিড় জমাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ঘাটের দুই পাড়ে শতশত যান পারাপারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে চিরচেনা কোলাহল চোখে পড়েনি। যাত্রীদের উদ্দেশ করে হাঁকডাক নেই, সারি সারি থামিয়ে রাখা হয়েছে বাস। টার্মিনালের ভেতরে কিছু দোকান খোলা রয়েছে যেখানে গাড়ির শ্রমিকরা বসে আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন। তারা কজন একযোগে বলেন,“কাজ নাই, ইনকামও নাই। এবার বুইঝা নেন কেমন আছি। ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে চলাচলরত নিরালা পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাস দেখা-শোনার জন্য টার্মিনালে শুয়ে-বসেই দিন কাটছে রাসেলের।
জানা গেছে, রাজধানী ছাড়ার পাশাপাশি অনেকে আবার ফিরছেনও।
থাকবে সেনাবাহিনী-পুলিশ-বিজিবি ॥ লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি। শুক্রবার রাতেই জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সোমবার থেকে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। পরে প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। এটা যাতে সবাই কঠোরভাবে প্রতিপালন করে সেজন্য বেশ কড়াকড়ি থাকবে। সেজন্য পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। মানুষ অপ্রয়োজনে বাইরে আসবে না। অফিস বন্ধ থাকবে। ৩০ জুন বাজেট পাসের বিষয় আছে, এ সংক্রান্ত যে কার্যক্রম আছে, এনবিআর রিলেটেড, হিসাব রিলেটেড কাজটুকু করার জন্য স্বল্প পরিসরে অফিস খোলা থাকবে। এছাড়া সব বন্ধ থাকবে। ‘জরুরী সেবা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। সাংবাদিকদের গাড়ি ও ইন্টারনেট সেবা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত যানবাহনও চলবে।
কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না ॥ এবারের লকডাউনে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবার পুলিশ কাউকেই লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনে ছাড় দেবে না। গত লকডাউন চলাকালে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। কিন্তু এবার তা হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে থাকবে পুলিশের কড়া চেকপোস্ট। কারণ দর্শানো ছাড়া চেকপোস্ট পার হয়ে কেউ যেতে পারবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবার কঠোর ভূমিকায় মাঠে থেকে কাজ করবে পুলিশ। বিনা কারণে কেউ রাস্তায় বের হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পর বাসায় পাঠানো হবে।
এবারও লাগবে মুভমেন্ট পাস ॥ পুলিশ জানিয়েছে, নতুন লকডাউন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও লকডাউনের নির্দেশনা পালনে গতবারের চেয়ে পুলিশ আরও কঠোর হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে জরুরী প্রয়োজনে চলাচলের জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ চালু থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। লকডাউন চলাকালে বিশেষ কয়েকটি কারণে এবং পুলিশের দেয়া মুভমেন্ট পাস ছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যাবে না। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে লকডাউনে মানুষজনের অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মুভমেন্ট পাস চালু থাকবে। মুভমেন্ট পাস ছাড়া কাউকে বের হতে দেবে না পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, করোনার টিকা গ্রহণ, মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচা বাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা, চাকরি, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, মৃতদেহ সৎকার, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে নাগরিকেরা মুভমেন্ট পাস নিতে পারবেন। বিশেষ লিংকে ঢুকে মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। মুভমেন্ট পাস ক্লিক করে মোবাইল নম্বরটি প্রবেশ করাতে হবে। এরপর গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চলে যাবে। ওটিপি প্রবেশ করালে পাসের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। যে থানা এলাকা থেকে যাবেন, যে থানা এলাকায় যাবেন, নাম, লিঙ্গ, বয়স, ভ্রমণের কারণ, পাস ব্যবহারের তারিখ ও সময়, পাসের মেয়াদ শেষের তারিখ ও সময়, জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজস্ব গাড়ির তথ্য এবং ছবি এসব তথ্য দিতে হবে। এই পাসধারী ব্যক্তি বাধামুক্তভাবে সড়কে চলাচল করতে পারবেন। তবে সবাই এই পাস পাবেন না। শুধু জরুরী সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে এই পাস। যিনি পাস পাবেন শুধু তিনিই এটি ব্যবহার করে কাজ করতে পারবেন। পাস নেয়ার সময় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে চাইলে আবেদনকারী সেটাও করতে পারবেন। পাস কোনভাবেই হস্তান্তরযোগ্য না বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। তবে সাংবাদিকদের মুভমেন্ট পাস নেয়া লাগবে না। এই পাস শুধু যারা কাজে বাইরে বের হবেন তাদের নিতে হবে বলে একই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে, তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য অফিসিয়াল কিংবা জরুরী প্রয়োজনে মুভমেন্ট পাস নেয়া লাগবে। তবে এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের এই পাস নেয়া লাগবে না। মুভমেন্ট পাস নিতে হলে কিছু তথ্য লাগবে। যেমন-একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে। সেই নম্বরে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) যাবে। সেটা দিতে হবে। আবেদনকারীর জন্ম তারিখ দুই বার লিখতে হবে। জন্ম তারিখ যদি ০১-০২-১৯৯৪ হয় তাহলে ০১০২১৯৯৪ এভাবে লিখতে হবে। আবেদনকারী যে এলাকায় বা থানার আওতায় বাস করেন তার নাম উল্লেখ করতে হবে। জরুরী প্রয়োজনে যে এলাকায় যাবেন সেই থানার নাম উল্লেখ করতে হবে। সেই সঙ্গে পুরুষ নাকি নারী সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আপনি যেহেতু জরুরী প্রয়োজনে বের হবেন, অবশ্যই সেই কাজের নাম উল্লেখ করতে হবে। এ্যাপে ১৩টি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতেও যদি আপনার প্রয়োজনটি উল্লেখ না থাকে তাহলে অন্যান্য অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। আপনার কাজটি শেষ করতে কত সময় লাগবে তা উল্লেখ করতে হবে। পাস পেতে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি স্টুডেন্ট আইডি, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট নম্বর ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর জমা দিতে হবে। জরুরী কাজে বের হওয়ার সময়ে আপনার নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করবেন কি-না সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যদি নিজের গাড়ি ব্যবহার করেন তাহলে গাড়ির নম্বর উল্লেখ করতে হবে। সবগুলো শর্ত পূরণের পরে আবেদনকারীর একটি সদ্য তোলা ছবি জমা দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আবেদনকারী ফিরতি বার্তায় পাস পেয়ে যাবেন।
এদিকে ঢাকার বাইরের পরিস্থিতিও একই ॥ রাজবাড়ী থেকে সংবাদদাতা শফিকুল ইসলাম শামীম জানান, শনিবার সারাদিন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। প্রতিটি ফেরিতে গাদাগাদি করে আসছে যাত্রী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দূরের থাক অনেক যাত্রীর মুখে নেই মাস্ক।
জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। সরকারের এমন নির্দেশনার পর এই নৌরুট ব্যবহার করে শুক্রবার রাত থেকে ঢাকা ছাড়ছে অনেকে। মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সারারাত অনেক যাত্রী চরম দুর্ভোগ শিকার করে ঘরমুখী হয়েছে। ছোট ছোট যানবাহনে এবং ট্রাক ও কাভারভ্যানে গৌন্তব্যস্থানে গিয়েছে সাধারণ মানুষ। ঢাকা থেকে যশোরগামী রাবেয়া নামের এক যাত্রী বলেন, আয় না থাকার কারণে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। যে কারণে রাস্তায় দুর্ভোগ হবে জেনেও দুই সন্তান নিয়ে এসেছি। ঢাকা থেকে সকাল ৬টায় বের হয়েছি। ৬/৭ ঘণ্টা লাগল দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে। টাকাও লেগেছে অনেক। এখন যশোর কিভাবে যাবে সেই চিন্তা করছি। ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী সেতু নামের অন্য এক যাত্রী বলেন, বাড়িতে গেলে কোনভাবে চলতে পারব। ঢাকায় চলব কিভাবে। ঢাকায় থেকে না খেয়ে মরার চেয়ে বাড়িতে গিয়ে মরি সেই ভাল। রাজবাড়ীগামী মজিদ ফকির নামের এক যাত্রী বলেন, প্রয়োজনে ঢাকায় থাকতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় থাকার মতো কোন অবস্থা নেই। যে কারণে ঘরমুখী। তবে রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় ৩/৪ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ছোট ছোট যানবাহনে আসতে হলো।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ ফিরোজ শেখ জানান, পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরী যানবাহন নদী পারাপার করার জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে স্বল্প পরিসরে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। সেই সুযোগে অনেক যাত্রী ফেরিতে উঠছে। এই রুটে বর্তমান ৬টি ছোট বড় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।