১৯৫৫ সালে ১৪ বছরের ইমেট টিল শিকাগো শহর থেকে বেড়াতে আসে মিশিগানের মানিতে। এক দোকানে আসে ক্যান্ডি কিনতে।
দোকানে ছিল মালিকের স্ত্রী ক্যারোলিন ব্রায়ান্ট। দুদিন পর তার স্বামী রয় ব্রায়ান্ট ও স্বামীর ভাই জে মিলাম ইমেটকে ধরে নিয়ে যায়। অভিযোগ সে দোকানিকে শিস দিয়েছে ও জড়িয়ে ধরেছে।
তাকে অমানুষিকভাবে পিটানো হয়। চোখ তুলে ফেলা হয়। মাথায় গুলি মারা হয়। তারপর গলায় ৭০ পাউন্ড ওজনের তুলা ছাড়ানোর ফ্যান তারকাটা দিয়ে গলায় বেঁধে ডুবিয়ে দেয়া হয় তালাহাচি নদীতে। বিকৃত লাশ পাওয়া গিয়েছিল নদীর অববাহিকায়। কিন্তু ইমেটকে চেনার কোন উপায় ছিল। মা মামি টিল তার হাতের আংটি দেখে শনাক্ত করেছিল।
মা বলল, শেষকৃত্যের সময় কফিনের ডালা খুলে রাখতে যেন মানুষ দেখতে পায় সাদা মানুষের মনে কত ঘৃণা কালোদের প্রতি।
আড়াই লাখ মানুষ তাকে দেখে গিয়েছিল পাঁচ দিন ধরে।
আদালতে বিচার পায়নি ইমেট। সেই বিচার ছিল প্রহসন। এরপর ইমেটের মা ও ভাইয়ের প্রকৃত বিচারের আশায় ছিল। টিমোথি টাইসনের লেখা বই ‘দি ব্লাড অফ ইমেট’ যা ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। যেখানে সাক্ষাশকারে দোকানি ক্যারোলিন ব্রায়ান্ট বলেছেন, ইমেট নির্দোষ। ইমেটের মামলাটা আবার খোলা হলো। তদন্ত হলো। কঙ্কাল তোলা হলো। তার মাথায় গুলির চিহ্ন, ভোতা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল।
ক্যারোলিনের প্রথম স্বামী মারা যায় ১৯৯৪ সালে। মিলাম মারা যায় ১৯৮০ সালে। ইমেটের মা মারা যায় ২০০৩ সালে। মামলাটা নিয়ে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
ইমেটের মৃত্যু সে সময় মানবাধিকার আন্দোলনে আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। নোবেল বিজয়ী বব ডিলান ইমেটকে নিয়ে এই জনপ্রিয় গানটা লিখেছিলেন।
** ইমেট টিলের মৃত্যু
বব ডিলান
মিশিগানের ঘটনাটা বেশিদিন আগের নয়
এক কিশোর বালক এসেছিল বেড়াতে দক্ষিণের দরজা দিয়ে শিকাগো শহর থেকে তার জীবনের ভয়াবহ দুঃখজনক ঘটনা আমার এখনও পরিষ্কার মনে পড়ে
তার গায়ের রং ছিল কালো, তার নাম ছিল ইমেট টিল। কিছু মানুষ তাকে টেনে হেঁচড়ে একটা খামারবাড়িতে এনে প্রচ- মেরেছিল তারা বলেছিল ছেলেটার দোষ আছে, তবে আমি তেমন কিছুই মনে করতে পারি না।
তারা যথেচ্ছ অত্যাচার করেছিল জঘন্যতম থেকে আরও জঘন্যতম কাজের পুনরাবৃত্তি সে এক, খামার বাড়ির ভেতর ভয়ার্ত চিৎকার আর বাইরে রাস্তায় ফেটে পড়া অট্টহাসি তার দেহটা গড়াতে গড়াতে উপসাগরে নিয়ে এসেছিল তারা ছুড়ে দিয়েছিল অতল পানিতে যেন তার আর্ত চিৎকার আর শোনা না যায়, কি কারণে মারা হলো তাকে-
আমি জানি এটা আর মিথ্যা নয়, এটা ছিল নিছক আনন্দে মেতে খুন করা, আস্তে আস্তে চোখের সামনে কাউকে মরতে দেখা।
তারপর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রকে থামানো যেন বিচারের দাবি বন্ধ হয়ে যায়।
দুই ভাই স্বীকার করেছিল আদালতে তাদের হাতে হয়েছে খুন ইমেট টিল।
জুরিদের ভেতর কিছু মানুষ ছিল যারা এই হত্যার সহযোগী,
বিচার এক মশকরা ছাড়া আর কিছু নয় তাদের যেন কেউ পায়নি কোন কষ্ট এতটুকু তাতে।
পরদিন সকালে পত্রিকা খুললাম, খুব কষ্ট হচ্ছিল দেখতে হেসে হেসে দুই ভাই নেমে যাচ্ছে আদালতের সিঁড়ি বেয়ে জুরিদের কাছে তারা নির্দোষ, মুক্তি পায় তারা।
ইমেটের দেহ ভেসে উঠেছিল দক্ষিণ সাগরের জিম ক্রোর বর্ণবাদী সাগরের ফেনা হয়ে।
তুমি যদি কথা বলতে না পারো এমন গর্হিত অপরাধ কাজের বিরুদ্ধে তোমার চোখ ভরে যাবে তবে কবরের মাটিতে
আর মন সয়লাব হবে ময়লায়।
তোমার হাত, পাগুলো আবদ্ধ হবে শিকল ও বেড়িতে।
তোমার শরীরের রক্ত অস্বীকার করবে প্রবাহিত হতে মানব প্রজাতিকে এমন নি¤œ স্তরে টেনে নামানোর জন্য।
এই কথাগুলো একটা স্মারক তোমার সঙ্গের মানুষগুলোকে মনে করায়ে দেয়ার জন্য,
এ রকম চিন্তা আজও বেঁচে আছে ভূত-তাড়িত ঘৃণাপূর্ণ উন্মাসিক মানুষের ভেতর।
আমরা যদি সবাই একই ভাবনা ধারণ করতে পারতাম, যদি দিতে পারতাম আমাদের সাধ্যমত সব,
এই বিশাল ভূখ- হতো তখন আমাদের বেঁচে থাকার অবাধ আবাসভূমি।
(অনুবাদ: তূয়া নূর)