আয় আয় সমতার পাখি
শফিক ইমতিয়াজ
মাঝে মাঝে নিকট আকাশে পাখির মিলিত ওড়া দেখি
কী দারুণ বোঝাপড়া!
পাখিওড়ার বিজ্ঞান বলে কিছুতো আছেই:
প্রত্যেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত, নিখুঁত স্থানবদল!
আমি প্রাণভরে ডাকি- আয় আয় সমতার পাখি
ত্রিভঙ্গ যাপনে দিয়ে যা রে সুঠাম কল্লোল।
কোন কোন দিন পাখি আসে ঝাঁক বেঁধে তৃষ্ণার্ত উঠোনে
দু একটা করতলে এসে বসে;
কখন অজান্তে
আমার হাতের দৃষ্টিকটু বেড়ে ওঠা নখ ওদেরকে খেতে দিই
ওরা খায় খুঁটে খুঁটে, তাই দেখে কিছু নষ্টজন আপত্তি জানায়
তাদের হাতের নখ আরো বড়, আর কী তীক্ষè
তাই দিয়ে তারা নিয়মিত ফুটো করে বৈচিত্র্যের মেঘ, উড়ন্ত বেলুন!
এসকল নষ্টজন নখ-খাওয়া পাখিকে দেখায় ভয়
রাতের আড়ালে আর পাখির আশ্রয়ে ছেড়ে দেয় সরীসৃপ!
** জীবাণু-চাষী
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
রোগীর মুখে রোগের বিবরণ খুঁজতে খুঁজতে
বার বার চলে আসে পৃথিবীর মুখ
প্রতিটি মুখ হয়ে ওঠে জলবায়ুর প্রভাবপীড়িত
তৃতীয় বিশ্বের এক একটি বিবর্ণ মানচিত্র।
রোগি ও রোগের শুনানি করতে করতে
কানে আসে নিপীড়িত মানুষের আর্তনাদ
প্রতিটি মুখ হয়ে ওঠে ধর্ষিতার প্রতিচ্ছবি
প্রতিটি শুনানি হয়ে যায় মানবতার পরাজয় বাণী।
জীবন ও জীবাণুর দ্বৈরথে জীবনের পক্ষ নিতে গিয়ে
বার বার হুমকি আসে সময়ের সোপান বেয়ে
পরকালী ফসলের গন্তব্যের খোঁজে উন্মাতাল মানুষ
হয়ে ওঠে আপন জীবন-বৈরী।
রোগীর অবয়বে জীবাণুর নিবাস খুঁজে খুঁজে
বার বার ফিরে পাই নির্যাতিতা পৃথিবীর মুখ
করোনা নয়, ভাইরাস নয়, নয় কোন অদৃশ্য প্রাণ
জীবাণুর চাষ করে লেবাসী মানব-জবান!
** সম্পর্কের মানে
চৌধুরী ফেরদৌস
সম্পর্কের ভেতরে
এক বৈকলিক বিকাল ওত পেতে থাকে...
অকস্মাত ওভার ব্রিজটা ভেঙে পড়ে গেলে
ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা:
বন্ধ হয়ে যেতে পারে সব সড়ক যোগাযোগ।
যে ভিখিরিটা প্রতিদিন
ওভার ব্র্র্রিজের কিউতে থালা পেতে পয়সা চেত,
তার আর বিকলাঙ্গ সাজতে হবে না:
হয় তো সে আর ফিরেও আসবে না।
ভেঙেপড়া ব্রিজটা ফের রেডি হতে হতে
কিছুটা সময় তো লাগবেই,
তাই বলে পুরনো জায়গাটা কিন্তু ফাঁকা থাকবে না:
যে আসবে সে হয়ত সাজবে কানা।
সম্পর্ক মানে পুরোটাই কূটকৌশল,
যদি না পার কিছুই পাবা না...
** বোধ
নুরুল ইসলাম বাবুল
দিশেহারা হয়ে গত বিকেলের শোকে
ঝিঁঝিরা ছেড়েছে তাদের মুখের গান
আমাদের ঘুম দিয়েছি ঝিঁঝির চোখে
আঁধার এনেছে নীরবতা সুনসান-
এমন মাতাল মধ্য রাতের ডাকে
আমরা ভুলেছি বিগত সকল রাত
একটা দোয়েল ঘুলঘুলিটার ফাঁকে
ছড়িয়ে পালক জানায় সুসংবাদ।
তখন শীতের শিশিরেরা থরে থরে
গলে-গলে যায় ফাগুন দিনের ছলে
বুকের পকেট উষ্ণতা দিয়ে ভরে
আরাম আরাম হৃদয় আকাশ বলে।
** মহাবাঙালি
ফারুক আফিনদী
আঙুুলে ঘোরানো হচ্ছে বল।
দুর্বা ঘাসের দল
চার কিনারে ঢোল কলমির গাছ
উদ্ধত, দাঁড়ানো
নরম রঙের
ফুল নয়- কান বুঝি পেতে আছে
রেসকোর্স
এখানেই, অথবা
ঐ- ঐখানে-
ধরে নিন টেইট্টা বিশ নন্দীর কোনও পাড়া
এ মাঠে
সূর্য্যটা এভাবেই ধরা দিয়েছিল
মহাবাঙালির হাতে।
** প্রতিবিম্ব
কুমকুম দত্ত
কেন হরিণী চোখ তুলে
অবাক অরণ্যে ডাক পাড়ে;
আছি সর্বদা জলমগ্ন কালে
পুড়ে প্রতিবিম্ব জলের উপরিতলে।