অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ড. মুকিদ চৌধুরী নেপোলিয়ন বোনাপাট। আধুনিক ইউরোপীয় ইতিহাসের চর্চা ও ব্যাখ্যায় এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছেন। স্থানকাল পরিপ্রেক্ষিতে, ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে তাঁর পারঙ্গমতা প্রশ্নাতীত। তথ্য সংগ্রহ ও বিচারবিশ্লেষণসমেত তাঁর সযত্নে সৃজিত নেপোলিয়ন বোনাপার্ট গ্রন্থিটি অন্যস্তরে উত্তীর্ণ হয়েছে। গ্রন্থটির মূল উপজীব্য ফরাসী বিপ্লবের সন্তান নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থান, বিস্তার ও পতন-এই ত্রিকালের সূত্রের মাধ্যমে গ্রন্থটি গ্রন্থিত। স্থান করে নিয়েছে আধুনিক ইউরোপীয় বিপ্লব-যুদ্ধ-শান্তি এবং জাতীয়তাবাদ থেকে মহাজাতীয়তাবাদ। লক্ষ্য ও উপায়ের প্রেক্ষিতে, ইউরোপীয় অন্যান্য ব্যক্তির তুলনায় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট স্বতন্ত্র। এ জন্যই উদ্ভাসিত আধুনিক ইউরোপীয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংঘাত এবং বেহাল অবস্থা। ঐতিহাসিক বিচার বিশ্লেষণে লেখক নিরপেক্ষতা রক্ষায় সজাগ। ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে গিয়ে কোন বিতর্কিত অপব্যাখ্যা স্থান দেননি। ফলে ইতিহাস ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এখানেই এই গ্রন্থের অভিনবত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব।
অপরদিকে ড. মুকিদ চৌধুরীর প্রকাশিত ইতিহাস আশ্রিত গ্রন্থ ইংল্যান্ড: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। একটি সমাজবিজ্ঞান, সাধারণত ত্রয়ী বিষয়ের সমাবেশ ঘটে থাকে- স্থান, কাল ও সমাজ। কোন একটি দেশের কোন বিশেষ কালের জনগোষ্ঠী ও সমাজের প্রভাব সন্দেহাতীত ইতিহাসের মর্মবস্তু। জনগোষ্ঠীর আচার-আচরণ ও কার্যকলাপের ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপরও নির্ভরশীল। মহাদেশীয় ইউরোপের মূলভূখ- থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং চারদিক সমুদ্র বেষ্টিত হওয়ায় ইংল্যান্ডের জনগোষ্ঠীর আচার-আচরণ ও কার্যকলাপের ইতিহাস এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে গড়ে ওঠে। ভূমির অনুর্বরতা ও শীতপ্রধান হওয়ায় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে ইংল্যান্ডের সমুদ্রমুখী জনগোষ্ঠী কষ্টসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। খাদ্যাভাব ও সমুদ্রের সান্নিধ্যের কারণে তারা সামুদ্রিক বাণিজ্য ও উপনিবেশ স্থাপনে মনোযোগী হয়। নৌবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে অদ্বিতীয় নৌশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করে।
ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপনে সমর্থ হয় ইংল্যান্ডের জনগোষ্ঠী। ‘ইংল্যান্ড : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ রোমান গ্রন্থাকারের বর্ণনা থেকে ইংল্যান্ডের ইতিহাস দিয়ে শুরু, শেষ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে; অর্থাৎ ‘রোম অধিকৃত ইংল্যান্ড’ থেকে শুরু করে ‘অ্যাংলো-স্যাকশন’ হয়ে ‘নরমান’, ‘প্যাঁতাজনে’, ‘ল্যাংকাস্টার ও ইয়র্ক’, ‘টিউডর’, ‘স্টুয়ার্ট’, ‘হ্যানোভার’ ও ‘স্যাকশে-কোবুর্গ-উইনসর’ রাজবংশের ইতিহাসের অবগুণ্ঠন উন্মোচন করা হয়েছে। ঘটনাক্রম ও বিশ্লেষণে ড. মুকিদ চৌধুরী নিজস্ব চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
অবিনাশ পুরকায়স্থ