ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ অনেকে বেশি তীব্র যে সব কারণে

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৪ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ অনেকে বেশি তীব্র যে সব কারণে

অনলাইন ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ বাংলাদেশ সফলভাবে সামাল দিয়েছে বলে দাবির পর, এবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দেশে গত বছরের নবেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত করোনাভাইরসের সংক্রমণ ছিল নিম্নমুখী। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় মার্চ মাসে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ যেমন বেশি তীব্র, একইসাথে গুরুতর রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যাও প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানেই তা দেখা যাচ্ছে। নিম্নমুখী অবস্থা থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যায়। করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে বেশি গবেষণা করেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউণ্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড: সমীর সাহা বলেছেন, সংক্রমণ যখন নিম্নমুখী হয়েছিল, তখন সবার মাঝে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। সেজন্য সবক্ষেত্রে ঢিলেঢালাভাব থাকার বিষয়টি এবার সংক্রমণের তীব্রতার অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন। "আমরা বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত সব জায়গায় গেছি। সেটার কারণেই ভাইরাস খুবই যথেচ্ছভাবে আমাদের মাঝে এসেছে। ভাইরাস যখন শরীরে আসে, তখন সে মাল্টিপ্লাই ( সংখ্যাবৃদ্ধি ) করে এবং এর মধ্যে মিউটেশনগুলো হয়। একইভাবে বিস্তারও ঘটে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সব জায়গায় ঘুরে বেড়ানো বা জনসমাগম অন্যতম কারণ" বলেন ড: সমীর সাহা। তিনি জানিয়েছেন, গবেষণায় আরও কয়েকটি কারণ তারা পেয়েছেন। "আমাদের এখানে ইউকে এবং সাউথ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট এসেছে। এগুলোর বিস্তার হয়েছে সব জা্য়গায়। সব কিছু মিলিয়েই এই অবস্থা হয়েছে। ড: সমীর সাহা উল্লেখ করেছেন, এর বাইরেও আরও কারণ থাকতে পারে। সেগুলো চিহ্নিত করে গভীর গবেষণা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। আইইডিসিআর এর কর্মকর্তারাও তাদের গবেষণায় একই ধরনের কারণ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেছেন, গবেষণায় ঘাটতির কারণেও সংক্রমণ তীব্রতার কারণ বুঝতে বিলম্ব হয়েছে। "গবেষণা করার মতো প্রতিষ্ঠানের অভাব আছে। এবং মুশকিল হয়েছে যে, গবেষণাগুলোর উপরও সাধারণ মানুষ এবং নীতি নির্ধারকরাও অনেক সময় পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন না। যার ফলে এই যে ভেরিয়েন্ট এসেছে - এটা কিন্তু আমরা দুই তিন মাস পর জানতে পারলাম।" এদিকে, ভারতে পরিস্থিতি যে খারাপ হচ্ছে, সে ব্যাপারেও বাংলাদেশের নজর রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। ড: সমীর সাহা বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানসহ এই উপমহাদেশেই বড় আকারে একটা ঢেউ এসেছে। অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেছেন, "পশ্চিমবঙ্গে যে ট্রিপল মিউটেটেড ভাইরাস এসেছে, সেটা বাংলাদেশে এলে পরিস্থিতি কী হবে-সেটা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।" তিনি মনে করেন, ভারতে সংক্রমণের ধরন নিয়ে বিশ্লেষণ করে এখনই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশেষজ্ঞরা ভারতে সংক্রমণের গতিবিধির দিকে নজর রাখছে। তবে দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে বিশেষজ্ঞরা কোন পূর্বাভাস সরকারকে দিয়েছিল কীনা - এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন। সরকারের বিশেষজ্ঞ বা কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহীদল্লাহ বলেছেন, "যখন আমাদের সংক্রমণ কমা শুরু হলো, তখনও আমরা বলেছি যে আমাদের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।" "প্রতিরোধ এবং হাসপাতালের সেবা - দুটি বিষয়েই প্রস্তুত থাকার কথা আমরা বলেছিলাম।" অধ্যাপক মো: শহীদুল্লাহ আরও বলেছেন, "এটাও আমরা পরিস্কার বলেছি যে, এই মহামারী বিশ্ব থেকে কবে যাবে- এটা কেউ বলতে পারছে না।" "এটা বুঝতে পারলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে যা যা করণীয় - তার সবই আমাদের করতে হবে" - বলেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতেই সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপর দুই সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়। এখন এই লকডাউনের মধ্যেই ২৫শে এপ্রিল থেকে দোকানপাট এবং শপিংমল খুলে দেয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, দুই সপ্তাহের লকডাউন ২৮ শে এপ্রিল শেষ হলে বিধিনিষেধ আরও শিথিল করা হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন, জীবন এবং জীবিকা - দু'টি বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×