ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

দারিদ্র্যের হিসাবে মিল নেই ॥ কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ২১ এপ্রিল ২০২১

দারিদ্র্যের হিসাবে মিল নেই ॥ কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে

রহিম শেখ ॥ করোনা মহামারীতে দেশে দারিদ্র্যের হার ও কর্মসংস্থান নিয়ে গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি বেসরকারী সংস্থা গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনায় দেশে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় দেড় কোটি লোক মহামারীর প্রভাবে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। এছাড়া মহামারীতে ১ কোটি ৪৪ লাখ কর্মী কাজ হারিয়েছেন বলে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের এক গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এক পর্যবেক্ষণে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, চলমান করোনায় নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়বে প্রায় চার কোটি মানুষ। তবে দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়লেও কোটিপতির সংখ্যাও ১০ হাজারের মতো বেড়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, গত বছর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০টি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৮ লাখ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে (শ্রম আইনের সুবিধা পান এমন) কর্মরত জনশক্তি মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সবচেয়ে বড় অংশ ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ কোটি দিনমজুর। যাদের শ্রম আইন-২০০৬ প্রদত্ত নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসাভাতা, বাড়িভাড়াসহ বেশিরভাগ অধিকারই নিশ্চিত নয়। কাজের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকার নিশ্চয়তা। করোনাভাইরাস এসব মানুষের জীবিকায় ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। তবে করোনা শুরুর কিছুদিনের মধ্যে এই সংখ্যা ৪২ শতাংশে গিয়ে ঠেকে বলে জানিয়েছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সংস্থাটির জরিপ অনুযায়ী, ৪২ শতাংশ মানুষ এখন দরিদ্র। অর্থাৎ শুধু করোনার কারণেই বাংলাদেশ প্রায় ২০ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। এরই মধ্যে এসেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সম্প্রতি বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও শ্রমবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের দেড় কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ‘লকডাউন’ দীর্ঘায়িত হলে তারা চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়বেন। করোনার প্রভাবে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে বলে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার সংস্থা দুটির জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন। অনুষ্ঠানে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কোভিডের আঘাত সব জায়গায় একইভাবে অনুভূত হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে তার প্রভাব কমই দেখা গেছে। সে কারণে শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত। তিনি মনে করেন, ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমেছে আশ্চর্যজনকভাবে। অরক্ষিত অদরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণীর মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একই সঙ্গে সব শ্রেণীতেই ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি করোনায় কর্মহীন জনগোষ্ঠী নিয়ে গবেষণা করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। তার গবেষণায় দেখানো হয়, দেশে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। অর্থাৎ মোট কর্মগোষ্ঠীর ৫৯ শতাংশ মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার হয়েছে সেবা খাতে। এ প্রসঙ্গে ড. আবুল বারকাত জানান, কাজ হারানো মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ সামনে কোন কাজ ফিরে পাবে না। তাদের জন্য তিনি সরকারের কাছে বেকারদের ভাতা চালুর সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সাময়িক ভাতা দেয়ার চেয়ে শ্রেয় হবে তাদের কাজ দেয়া। এ ব্যাপারে সরকারকে ভাবতে হবে। এই অর্থনীতিবিদের মতে, করোনার প্রভাবে আগামীতে কর্মসংস্থানের প্যাটার্নও পাল্টে যাবে। যেখানে গুরুত্ব বাড়বে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থানের। সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে। বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বলেন, করোনার প্রভাব দীর্ঘদিন হওয়ায় গরিব মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। অনেকে বেকার হয়ে নতুন করে কাজে ফিরতে পারছেন না। এরই মধ্যে আরও বড় আকারে ধাক্কা দিয়েছে করোনার প্রভাব। সরকারকে এখন বেকার ও দরিদ্র মানুষের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। আগামী বাজেটে বেকারদের জন্য বিশেষ কর্মসূচী রাখার সুপারিশ করেন এ অর্থনীতিবিদ। আবুল বারকাতের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় কৃষি খাতে কাজ হারিয়েছেন ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ পুনরায় কাজে ফিরতে পারেননি। এছাড়া শিল্প খাতে প্রায় ৯৩ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যার ৩৭ লাখ শ্রমিকের তাদের কাজ হারানোর শিল্পে ফেরার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি সেবা খাতে ১ কোটি ৫৩ লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ৬১ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। নতুন করে আগের কাজে ফিরতে পারেননি। ওই গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, কাজে ফিরতে না পারা এসব মানুষ দরিদ্রতার শিকার হচ্ছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে অর্থনীতিতে এক ধরনের দুষ্টচক্র সৃষ্টি হবে। যেখানে একজনের স্বল্প ব্যয়ের কারণে অন্যের আয় হবে স্বল্প। এটি মানুষের জীবন-জীবিকা উভয়কে অনিশ্চিত করবে। এর ফলে সঞ্চয় হবে না, হলেও হবে অতি স্বল্প। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এক পর্যবেক্ষণে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, চলমান করোনায় নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়বে প্রায় চার কোটি মানুষ। তৈরি পোশাক, রেস্তরাঁ ও শিল্পকারখানা চালু রাখার সুযোগ থাকলেও নির্মাণ, পরিবহন, পোলট্রিসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত অসংখ্য মানুষের জীবিকা পড়ছে সঙ্কটে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের হিসাবে সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। কঠোর লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এর আগে এক সপ্তাহের শিথিল লকডাউনেও দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে এরই মধ্যে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন এ খাতের কয়েক লাখ কর্মী। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতের শ্রমিকরা সবাই দিনভিত্তিক মজুরি পান। লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন তারা। একাধিক অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। আর মোট জনসংখ্যার সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন। কিন্তু সবাইকে ডাটাবেজের আওতায় না আনতে পারায় তাদের তালিকাভুক্ত করা যাচ্ছে না। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘গত বছর প্রধানমন্ত্রী এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সঠিক ডাটাবেজ না থাকায় ৩৮ লাখের বেশি পরিবারকে সহায়তা দেয়া যায়নি। এবারও আগের তালিকা ধরেই সহায়তা প্রদান করা হবে। যারা আগে পেয়েছেন, তাদেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু তালিকা আরও বাড়ানো দরকার। যারা তালিকার বাইরে আছেন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে দেশে। নতুন করে আরও ১ সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে লকডাউন। যা চলবে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। যদিও গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু ওই ‘লকডাউন’ তেমন কার্যকর না হলেও গণপরিবহনসহ অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন খেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষ। রাজধানী ঢাকায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হচ্ছে। এত কিছুর মধ্যেও রিক্সাচালকসহ দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, একদিন কাজ না থাকলে শিশু সন্তানসহ উপোস থাকতে হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক নি¤œ আয়ের মানুষ কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় এরই মধ্যে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন। বেসরকারী একটি বিনোদন পার্কে (প্লে-পার্ক) চাকরি করতেন মাহফুজুর রহমান। করোনায় এটি বন্ধ হয়ে গেলে তার চাকরি চলে যায়। পুরান ঢাকার বাসিন্দা মাহফুজ পরে আর ওই প্রতিষ্ঠানে ফিরতে পারেননি। চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরে একটি ভবনে কাজ করতেন শাহিদা বেগম (৩২)। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তাকে চলতি মাসের বেতন দিয়ে একেবারে বিদায় করে দিয়েছেন তার গৃহকর্তা। তিনি জানান, এ টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে বাড়ি চলে যাবেন। এবারও লকডাউন দীর্ঘ হলে সাধারণ মানুষ বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, কোভিড-১৯ ধাক্কায় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এখন আগামীতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হবে কর্মসংস্থানকে। এমন কিছু পদক্ষেপ থাকবে যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকনির্দেশনা থাকবে। বেকার সমস্যা ও কর্মসংস্থান প্রধান চ্যালেঞ্জ এটি অর্থমন্ত্রীর একটি বক্তব্য থেকে বেরিয়ে আসছে। সম্প্রতি এডিবির প্রেসিডেন্টকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, অর্থনীতির অবস্থা ভাল ছিল। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার কারণে প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হয় ৫ দশমিক ২ শতাংশে। তিনি আরও বলেন, করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী চাহিদা কমেছে। এদিকে মহামারীর মধ্যেও ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে। কোভিড-১৯ সময়ে ব্যাংকিং খাতে নতুন ১০ হাজার ৫১টি কোটিপতির ব্যাংক হিসাব যোগ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৯ সাল শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত জমা থাকা হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। অন্যদিকে, কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়ে যাওয়াকে ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে উল্লিখিত ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। যা ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ২০১৯ সাল শেষে কোটিপতি হিসাবগুলোতে মোট ৫ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা জমা ছিল যা ওই সময়ের মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সেই হিসাবে গত এক বছরে কোটিপতি হিসাবগুলোতে আমানত বেড়েছে ৬৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ২০২০ শেষে ব্যাংকগুলোতে খোলা মোট হিসাব সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৫৮ লাখ ১২ হাজার ৯৬৬টি। কোটি টাকার বেশি জমা থাকা ব্যাংক হিসাবের হার শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে কোটিপতি হিসাব বেড়েছিল ১১ শতাংশ বা ৮ হাজার ২৭৬টি। আর ২০১৮ শেষে দেশে ১ কোটির বেশি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৫৬৩। ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে যা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২ জন, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩ জন ছিল এবং ২০০৯ সালের মার্চে শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ জন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি অর্থনৈতিক বৈষম্য। বর্তমান পরিস্থিতিতেও কোটিপতির সম্পদ ও আয় বেড়েছে অন্যদিকে ব্যয় কমেছে। তাদের তাদের সম্পদ ও আয় দুটোই বাড়ছে। তাছাড়া বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো লোকসানে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবার আপদকালীন সময়ের জন্য ব্যাংকে টাকা রাখা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে নতুন কোন বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন। এসব কারণে কোটি টাকার আমানত বেড়েছে।’
×