অনলাইন রিপোর্টার ॥ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আজ শনিবার ভোর ৬টা থেকে হরতাল চলছে। হরতালের সমর্থনে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার কর্মী সমর্থকরা মিছিল বের করে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করছেন। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হরতাল পালন করবেন তারা। এর আগে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় ফেসবুক লাইভে এসে এ হরতাল ডাকেন কাদের মির্জা।
শুক্রবার বিকালে চাপরাশির হাটে কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদল অনুসারী আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের কাদের মির্জা নিজের অনুসারী দাবি করেন এবং তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে রাত ১০টায় ফেসবুক লাইভে এসে এই হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনাস্থল থেকে আসার সময় চরকাঁকড়া টেকের বাজার এলাকায় বাদল গ্রুপের সদস্য হিসেবে পরিচিত ফখরুল ইসলাম সবুজের নেতৃত্বে রাস্তায় ব্যারিকেড দিলে আবদুল কাদের মির্জা গাড়িবহরসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কয়েক ঘণ্টা পর কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ, অতিরিক্ত রিজার্ভ পুলিশ ও র্যাবের কয়েকটি গাড়ি গিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে দিয়ে মেয়র কাদের মির্জাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে নেতাকর্মী ও সাংবাদিকের কাদের মির্জা বলেন, সংসদ সদস্য একরাম চৌধুরীর বাড়িতে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বৈঠক শেষে সন্ত্রাসীদের দু’ভাগে বিভক্ত করে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে বাদলের নেতৃত্বে চাপরাশির হাট এবং সবুজের নেতৃত্বে টেকের বাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদল, চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, নজরুল ইসলাম শাহীন, হাসিবুস শাহীদ আলোক, ফখরুল ইসলাম সবুজ, ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত, মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু ও মাহবুবুর রহমান আরিফ অস্ত্র নিয়ে গুলি করেছে।
কাদের মির্জা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এ আক্রমণ সম্ভব নয়। এজন্য আমি মামলায় নোয়াখালীর ডিসি, এসপি, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও পরিদর্শক (তদন্ত)-কেও আসামি করবো। এছাড়া ফেনীর নিজাম হাজারী এমপি, নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, ফেনী পৌরসভার মেয়র স্বপন মিয়াজী, দাগনভুঞা উপজেলার চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপন, নোয়াখালী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন জেহান, সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব বেলায়েত হোসেন, সেতুমন্ত্রীর এপিএস মহিতুল, পিএ আবদুল মতিন, পিআরও নাছেরকেও এ মামলায় আসামি করা হবে।
অন্যদিকে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল এ ঘটনার জন্য মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছেন। তিনি তার ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘গত দুই মাস যাবৎ আবদুল কাদের মির্জা বিভিন্ন মাধ্যমে দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের অনেক সিনিয়র নেতাদের কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আসছেন। এর প্রতিবাদে একটি সংবাদ সম্মেলন করার জন্য শুক্রবার বিকালে চরফকিরা ইউনিয়নের সব ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বাড়িতে একটি প্রস্তুতি বৈঠকের ডাক দিলে কাদের মির্জার নেতৃত্বে শত শত অস্ত্রধারী সেখানে হামলা চালায়।’ এতে তার বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদল সমর্থিত আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী ও ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ, শর্টগানের ফাঁকা গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।