স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন-এ তথ্য জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন বলেছেন, আমরা যে কোন সময় স্কুল খুলে দেব। প্রাথমিক শিক্ষকদের সাতদিনের মধ্যে টিকা নেয়া শেষ করব। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হবে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সচিবালয় ক্লিনিকে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে শিক্ষকদের টিকা দেয়ার উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এ সময় সচিবালয় ক্লিনিকের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। টিকা নেয়ার পর অনুভূতি ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হলো, আমরা অন্য যে ইঞ্জেকশন নেই, তার চেয়ে আমার কাছে অনেক আরামদায়ক মনে হলো। প্রাথমিকের চার লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক আগেই আমাদের দেশে টিকা নিয়ে আসার কারণে। পাশাপাশি উনি এতটাই আন্তরিক শিক্ষার প্রতি, উনি সোমবার এবং এর আগেও আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে যে তোমার সব শিক্ষককে টিকা দিয়ে নাও, আমরা যে কোন সময় স্কুল খুলে দেব। যাতে আমার কোন শিক্ষক আওতার বাইরে না থাকে।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য কবে থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে এমন প্রশ্নে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষকদের জন্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যে কোন সময় মঙ্গলবার থেকে সাতদিনের মধ্যে টিকা নেয়া শেষ করব। সচিবালয় ক্লিনিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মোঃ হাসিবুল আলমও টিকা নেন। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমি নিজেও নিয়েছি, আমাদের সচিবসহ সবাই নিয়েছেন। তাদের কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আমার এলাকায়ও নিয়েছেন, তাদেরও কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আমি অনুরোধ করব আমার শিক্ষকদের, যারা টিকার আওতায় পড়বেন চল্লিশোর্ধ বয়সের; সবাইকে টিকা নেয়ার জন্য অনুরোধ করব। আমার শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই যেন যথাসময়ে টিকা নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এগিয়ে আসে। আর মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সবাইকে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করা হবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থাতেও নিয়োগ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কাজ আমরা এগিয়ে রেখেছি। ইতোমধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ শেষ। পরীক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।
গত ২৪ নবেম্বর আবেদন প্রক্রিয়া শেষে জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। চলমান মহামারী ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আদালতে রিটের কারণে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয় ।
মহাপরিচালক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এরপরও অধিদফতর বসে নেই। আমরা নিয়োগ পরীক্ষার মত মহাযজ্ঞ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আয়োজনও প্রায় সম্পন্ন। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গেই নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, নিয়োগের বিষয়ে তো কোন মামলা হয়নি। তাই পরীক্ষা আয়োজনে কোন বাধা নেই। তবে মামলা বা রিট সংক্রান্ত একটা মিডিয়ায় নিউজ হয়েছে। এ বিষয়ে অধিদফতর কাজ করছে। এবার প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়োগ পাবেন ২৫ হাজার ৬৩০ জন। এই নিয়োগে ১৩ লাখ ৫ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে।