শাহীন রহমান ॥ শীতের ব্যাপ্তিকাল কি কমে যাচ্ছে? সাম্প্রতিক বছরের শীত ঋতু পর্যালোচনা করে এই প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। পৌষ মাঘ দুই মাসে এখানে শীতকাল হিসেবে ধরা হলেও এখন পুরো দুই মাস শীত পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর ভরা পৌষে পর্যাপ্ত শীত ছিল না। আবার মাঘ মাস শেষ না হতেই প্রকৃতিতে বেশ উষ্ণ রূপ চলে এসেছে। নতুন করে আর শীতের আমেজ পাওয়া যাবে না এ বছর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শীত ঋতুর উপর। ফলে একেক বছর শীতের আচরণ একেক রকম হয়ে যাচ্ছে।
ঋতু বৈচিত্র্যের ধরণ অনুযায়ী বঙ্গ ভূখণ্ডে পৌষ এবং মাঘকে শীতকাল হিসেবে ধরা হয়। ইংরেজী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এখানে শীত নামে। থাকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী শীতের আসার আগেই আগমনী হাওয়া শুরু হয়। আবার ঋতুর বিদায়ের পরও প্রায় ১৫ দিন শীতের আমেজ থাকে। সব মিলিয়ে এখানে তিন মাস শীত পাওয়া যায়। কিন্তু সম্প্রতি বছরগুলোতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সব মিলিয়ে এক মাস শীতের ব্যাপ্তি থাকছে না। কখনও শীতের আবহাওয়া বসন্ত আবার কখনও চৈত্রের মতো আকার ধারণ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভবেই শীত ঋতু এমন আচরণ করছে।
আজ মাঘ মাসের ২৬ তারিখ। কাগজে কলমে আর মাত্রা চারদিন পর বিদায় নেবে শীত ঋতু। এখনি প্রকৃতি বেশ উষ্ণ রূপ ধারণ করছে। শুরু থেকেও এবারের শীতের আচরণ ছিল বৈচিত্র্যময়। অনেক দেরিতে শীত প্রকৃতিতে প্রবেশ করে। ভরা পৌষে শীতের জন্য অপেক্ষাও করতে হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যাচলোচনা দেখা গেছে পৌষ মাঘ মিলে এবারের প্রায় ৫ দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। তবে তা ছিল খুব স্বল্পস্থায়ী মাত্রায়। শৈত্যপ্রবাহেও শীত জাঁকিয়ে পড়তে দেখা যায়নি। তাপমাত্রাও বেশি নামেনি। দুই দফায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।
আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, শীতকালে ধরনও বৈশিষ্ট আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন পুরো ২ মাস শীত পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের তাপমাত্রাও আগের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে মূলত এটা হচ্ছে। তিনি জানান প্রতি ৩০ বছর অন্তর সারা বছরের স্বাভাবিক গত তাপমাত্রায় সমন্বয় হয়। এতেও দেখা গেছে, শীতকালের স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রায় কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, এই বছর নতুন করে আর শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। শীতের আমেজও আর পাওয়া যাবে না।
ইতোমধ্যে প্রকৃতিতে বসন্তের হাওয়া এসে গেছে। সেখানে রয়েছে বিরূপ আচরণ। শীত না যেতে বসন্ত অনেকটা উষ্ণভাব নিয়ে আসছে। তাদের মতে আবহাওয়ার ধরন এমন থাকলে বসন্তের আবহাওয়া আরও উষ্ণ হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে মাঘ না পেরোতেই দিনে সূর্যতাপ বেশ উষ্ণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মার্চ আসতে আসতে প্রকৃতি আরও উষ্ণ রূপ ধারণ করতে পারে। ফলে বসন্তের না শীত না গরমে ভাব আর পাওয়া যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশ থেকে শীতের তীব্রতা কমেছে। শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ার কারণে শীতকালীন ফসলের ওপর বেশ প্রভাব পড়ছে। শীতে যেসব ফসল হয় তার অধিকাংশই ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায়। গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এবং শীত কমে এলে শীতকালীন শস্য উৎপাদনের বেশ প্রভাব পড়তে পারে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের শিল্পকলকারখানা বেড়ে যাওয়ার প্রভাবও প্রকৃতিতে পড়ছে। ফলে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ শুরু হয়েছে।