ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ষোলো কোটি মানুষ শেখ হাসিনার লোক

প্রকাশিত: ২১:০২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ষোলো কোটি মানুষ শেখ হাসিনার লোক

সম্প্রতি ‘অল দি প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত টেলিভিশনটি গত ১ ফেব্রুয়ারি এক ঘণ্টা দৈর্ঘ্যরে যে তথ্যচিত্রটি প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করানো হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তি হিসেবে কয়েক ব্যক্তির দেয়া বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে তথ্যচিত্রজুড়ে। তথ্যচিত্রটিকে রসিকজনেরা বড়জোর থ্রিলার ফিল্ম ও রোমাঞ্চকর গোয়েন্দা কল্পকাহিনী বলছেন। প্রকৃত অর্থে এর কোন সংবাদমূল্য নেই। শক্তিশালী ভিত্তি তো নেই-ই। তথ্যচিত্রে যে সকল ব্যক্তিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে, যারা সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে বলেছেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই অনেক আগে থেকে বাংলাদেশবিরোধী শক্তির অনুচর হিসেবে স্বীকৃত। দেশের আদালত কর্তৃক দণ্ডিতও। তথ্যচিত্রের স্ক্রিনে সরকারের বিপক্ষে সোচ্চার ব্যক্তিদের কেউ বিএনপির রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত, কেউ যুদ্ধাপরাধীদের লবিস্ট। এদের মধ্যে কারও আবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রয়েছে পুরনো ক্ষোভ। আলজাজিরার এই তথ্যচিত্রের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছেন, যাদের স্ক্রিনে দেখা যায়নি। অনুঘটকের ভূমিকা পালনকারীদের অনেকে বিদেশে বসে দিন গুনছেন কবে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে! তারা এতবেশি অন্যায়-অনিয়ম করেছেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় না এলে তাদের দেশে ফেরার উপায় তৈরি হচ্ছে না। সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় হলো, তথ্যচিত্রটিকে ঘিরে অনেকে শেখ হাসিনার সরকারের পতন প্রত্যাশা করছেন। তারা হয়তো ভেবেছেন, মিথ্যা তথ্যে ভরপুর একটি তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে যাবে। পরদিনই বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী ক্ষমতায় চলে আসবে। আদতে তারা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক শক্তির শিকড় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তারা জানেন না যে, এদেশের মানুষের জন্য, এদেশের মানুষের মুক্তি আন্দোলনের সবচেয়ে ত্যাগী রাজনৈতিক শক্তির নাম আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানী শাসনের নাগপাশ থেকে মানবমুক্তির কারিগর হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই সুকঠিন বন্ধন ছিন্ন করা কোন অপশক্তির পক্ষে আর সম্ভব নয়। বিএনপিসহ অন্যান্য বাংলাদেশবিরোধী শক্তি যে রাজনীতি করে তা এদেশের মানুষ বহু আগে প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষ এখন সত্যিকার অর্থেই উন্নয়ন ও প্রগতির পথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও সার্বিক জীবনমানে বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখেছে, তাতে এখন কোন সচেতন মানুষ চাইবে না যে, দেশ আবারও পিছিয়ে যাক। আমরা দেখছি বিএনপির রাজনীতির অনেক কট্টর সমর্থকও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী হতে শুরু করেছে। তারা দেখছে, শেখ হাসিনার পক্ষেই কেবল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মাঝে একটি স্লোগান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে- আমি জয় বাংলার লোক। এখন আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলছি, আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার লোক। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও শেখ হাসিনার রাজনীতিকে তরুণ সমাজ খুব ভালভাবে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ এখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। এখনও আমাদের সামনে বহু কাজ বাকি পড়ে আছে। বাংলাদেশের তরুণদের সেইসব কাজ সমাধা করতে এগিয়ে আসতে হবে, নেতৃত্ব হাতে তুলে নিতে হবে। নষ্ট রাজনীতির চোরাগলিতে হারিয়ে যাওয়ার মতো সময় নেই এদেশের তরুণদের হাতে। নিজেদের শক্তি ও সম্পদের যথার্থ ব্যবহার করে কিভাবে বিশ্বদরবারে দাঁড়াতে হবে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সত্যিকার অর্থেই এদেশের তরুণ সমাজ এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নিজেদের দেশকে নিয়ে। তরুণরা এখন শিক্ষা-গবেষণা, মূল্যবোধ, উন্নত চিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে শিখছেন। তরুণরা দেখছেন, পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প এখন আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে পারছি। এই অদম্য বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল, বড় বড় উড়াল সড়ক, বঙ্গবন্ধু টানেল, মহাকাশে উচ্চকিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশে গড়ে আইটি পার্ক ও বহুমাত্রিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান। এই বাংলাদেশকে আর পিছিয়ে যেতে দেবে না এদেশের তরুণরা। বাংলাদেশকে নিয়ে যারা শেষ পর্যন্ত আশাবাদী তাদের অনেকেই আলজাজিরার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন নিয়ে ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এ ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়েছে। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক এই সংবাদমাধ্যমটির আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার কথা ছিল। বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট গ্রুপের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা উচিত হয়নি সংবাদমাধ্যমটির। এর মধ্য দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করল। দুঃখজনক বিষয় হলো, আলজাজিরা নামক টেলিভিশন বরাবরই ভুল স্থানে বিনিয়োগ করে থাকে। আলজাজিরার এ ভুল নীতি চ্যানেলটিকে জনপ্রিয়তার শীর্ষ থেকে তলানিতে নামানোর বড় কারণ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাপ্তাহিক দি ইকোনমিস্ট ‘হোয়াই আলজাজিরা ইজ আন্ডার থ্রেট’ শিরোনামে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের শুরুতে প্রশ্ন রাখা হয়, আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশনটি একটি স্বাধীন কণ্ঠ, নাকি একটি প্রপাগাণ্ডা যন্ত্র। সে সময় প্রতিবেদনটির একটি অনুবাদ সংস্করণ প্রকাশিত হয় দৈনিক প্রথম আলোয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম দিকে চ্যানেলটি (আলজাজিরা) নির্ভীক প্রতিবেদন, উত্তপ্ত বিতর্ক ও আরব অঞ্চলের স্বৈরাচারী শাসকদের বিষয়ে ঢালাও আলোচনা করে অন্যদের থেকে নিজেদের আলাদা করেছিল। অবশ্য এসবের মাধ্যমে চ্যানেলটি কাতারের মালিকদের সুরক্ষা দেয়ার কাজও করছিল। তারা সাদ্দাম হোসেনকে ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবে অভিহিত করেছিল, আবার ইসরাইলের বিভিন্ন খবরও সম্প্রচার করত। এটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী, ইসলামপন্থী ও আরব জাতীয়তাবাদীদের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছিল। চ্যানেলটির দাবি, ‘যাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছিল, তাদের কণ্ঠে’ পরিণত হয়েছিল তারা। অন্যদিকে, ‘আলজাজিরা কিন্তু মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগতও জানিয়েছে। ওসামা বিন লাদেন থেকে শুরু করে বিতর্কিত ধর্মবিষয়ক তাত্ত্বিক ইউসুফ আল-কারাদাবির বক্তব্য প্রচার করেছে চ্যানেলটি। কারাদাবি তো টক শোয়ে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। চারজন ইসরাইলী নাগরিককে হত্যা করা এক ব্যক্তির জন্মদিন নিয়েও সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছিল চ্যানেলটি। বৈরুতে থাকা আলজাজিরার ব্যুরো প্রধান ওই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলেন। যুদ্ধ নিয়ে যেসব প্রতিবেদন চ্যানেলটি প্রচার করেছিল, তা ছিল অনেকটা আগুনে ফুঁ দেয়ার মতো। পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই আলজাজিরার ইংরেজী সংস্করণকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে মনে করতেন। থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করা আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের হুসেইন ইবিশ বলেন, ‘এটি সহিংসতার খবর এমনভাবে প্রচার করত, যাতে মনে হতো তারা এর প্রতি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট।’ আলজাজিরার বেশিরভাগ ভাষ্য নিয়েই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক ও আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। টেলিভিশনটির প্রতিবেদন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাল্পনিক, মনগড়া, ভিত্তিহীন গোয়েন্দা কাহিনীর মতো। ঠিক যেমন আলোচিত ‘অল দি প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্রটিতে চলচ্চিত্রের উপাদান আছে, কিন্তু সংবাদমূল্য নেই একটুও। আলজাজিরার তথ্যচিত্রের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত ও হেয় করা। মোটাদাগে তাদের ও তাদের দোসরদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে চরমভাবে। এখন সময় হয়েছে আলজাজিরা ও তাদের দোসরদের সমূলে বয়কট করা। বাংলাদেশের মানুষ সকল অপশক্তির অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবাসি, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ ও লালন করি। সেই অর্থে আলজাজিরার তথ্যচিত্রের শিরোনাম ‘অল দি প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ যথার্থ। আমরা শেখ হাসিনার লোক। এদেশের ষোলো কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লোক। লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড
×