জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারে নবেম্বরের নির্বাচনের পর বেসামরিক সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার থেকে দেশটির নতুন পার্লামেন্টের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। গত বছর ৮ নবেম্বর মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে বড় জয় পায় আউং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যেখানে ৩২২টি আসনে জয়ই যথেষ্ট, সেখানে সুচির দল জয় পেয়েছে ৩৪৬টি আসনে।
দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী সমর্থিত বিরোধীদল ইউনিয়ন সলিডারিটি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা নতুন করে আবার নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানায়। নতুবা হুমকির সুরে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতা দখলের আশঙ্কার কথা জানায়।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ‘নির্বাচনে প্রতারণার’ অভিযোগ নিয়ে যে রাজনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের ব্যবস্থা না করলে ‘ব্যবস্থা গ্রহণের’ পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। ওই ব্যবস্থা কি অভ্যুত্থান হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে এ সপ্তাহে সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
জান্তা আমলে তৈরি মিয়ানমারের সংবিধানে সেনাবাহিনীকে বেশ কিছু ক্ষমতা দেয়া আছে। যেমন: পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসনের সদস্য সরাসরি সেনাবাহিনী থেকে আসবেন। এতদিন পর্যন্ত দেশটির বেসামরিক সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই দেশ পরিচালনা করে আসছিল। নবেম্বরের নির্বাচন নিয়েই প্রথম দুই পক্ষ সরাসরি এতটা বিরোধে জড়িয়েছে।
গত বুধবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং সেনাসদস্যদের জন্য দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘যদি সংবিধান মেনে চলা না হয়, তবে সেটা বাতিল করাই উচিত।’
সুচি এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সঙ্গে এ বিরোধ নিয়ে জনসম্মুখে কোন কথা বলেননি। তবে এনএলডির এক মুখপাত্র জানান, গত বৃহস্পতিবার দলের সদস্যরা সঙ্কট সমাধানে সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু ওই বৈঠক ‘অসফল’ ছিল বলেও জানান তিনি। মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা হ্রাস করতে এনএলডি সংবিধান সংশোধনের পরিকল্পনা করছে বলে জানান দলের এক মুখপাত্র।
তিনি টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আরও বলেন, বিক্ষোভ হতে পারে আশঙ্কায় রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ পাহারা বাড়ানো হয়েছে। তবে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করবে না।
এনএলডি আইনপ্রণেতা জিন মার অং বলেন, পুলিশ পার্লামেন্ট ভবন প্রাঙ্গণে পাহারা দিচ্ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের সেখানে প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘কিছুই ঘটছে না, আমরা এমনটা ভান করতে পারি না।’
এ বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে।