অনলাইন রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতকে রক্ষায় বিদেশি ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
একইসঙ্গে এই সঙ্কটকালে নতুন বাজার খুঁজতেও দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি আয়োজিত ‘রিকভারি অব দ্য অ্যাপারেল সেক্টর ফ্রম কোভিড-১৯ ক্রাইসিস ; ইস অ্যা ভ্যালু চেইন বেইসড সল্যুশন পসিবল?” শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সঙ্কট সামাল দিলেও এখন মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই ঢেউয়ে সঙ্কট আরও গভীরে পৌঁছেছে। এর ফলে ক্রেতারা এখন অর্ডারের পরিমাণ ও মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। এতে সঙ্কট আরও বাড়ছে।
ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্রেতারা যদি পোশাকের অর্ডার ঠিক রাখার পাশাপাশি মূল্যও কিছুটা বাড়িয়ে দেন, তাহলে এখাতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্দেশে টিপু মুনশি বলেন, “আমাদের নতুন নতুন বাজারে ঢুকতে হবে। যদি আমরা ঠিকমতো নতুন বাজারে ঢুকতে পারি, তাহলে হয়ত সঙ্কট কিছুটা কমতে পারে।”
তৈরি পোশাক খাতে সরকারের দেওয়া ঋণ সহযোগিতার সময় আরও বাড়ানো দরকার বলেও স্বীকার করেন তিনি।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
শ্রীলঙ্কার পোশাক রপ্তানির সঙ্কটের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেন তিনি।
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা দামি পোশাক রপ্তানি করে জানিয়ে মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ কারখানা সঙ্কটে রয়েছে, যেখানে শ্রীলঙ্কায় এই হার ৩১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সঙ্কট দীর্ঘায়িত হয়ে আগামী বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।
পোশাক খাতের সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার, মালিক, শ্রমিক ক্রেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেন মোয়াজ্জেম।
অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান উপস্থিত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম এর বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের কাছে ক্রেতা হিসেবে তার কোম্পানি কোনো দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী কি না জানতে চান।
এসময় জিয়াউর বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠান এই সঙ্কট দূর করতে প্রতিশ্রুত। যদি সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার, মালিক, ক্রেতা ও শ্রমিক নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে অবশ্যই এইচঅ্যান্ডএম পোশাকের মূল্য কিছুটা বাড়াতে রাজি আছে।”
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, “প্রথম সঙ্কট থেকে আমরা কিছুটা উত্তরণ করতে পারলেও এখন দ্বিতীয় সঙ্কটে পড়েছি। এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদুত হ্যারি ফারভেইজ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর পোশাকের জোগান দিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, কোনো সরকার কোনো কোম্পানিকে সরাসরি নির্দেশনা দিতে না পারলেও নেদারল্যান্ডস সরকার সেদেশের পোশাক আমদানকারকদের বাংলাদেশের অর্ডার বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়েছে।