সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় গত ১৬ আক্টোবর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে প্রেক্ষাগৃহ। প্রথম দিকে দুটি ছবি মুক্তি পেলেও ছবি দুটি প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। তারপর এক মাস ছিল সিনেমা খরা। তবে গত ১১ ডিসেম্বর সিনেমা হল বাঁচাতে ২৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় বহু প্রতীক্ষিত আলোচিত ‘বিশ্বসুন্দরী’। রুম্মান রশীদ খানের কাহিনী, চিত্রনাট্য এবং সংলাপে ছবিটি পরিচালনা করেছেন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। এতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন পরীমনি-সিয়াম আহমেদ। ছবিটি সমালোচক এবং সাধারণ দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা যেমন পাচ্ছে তেমনি এই সিনেমার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শকেরাও হলমুখী হয়েছে। রুম্মান রশীদ খান একজন সাংবাদিক ও লেখক। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রবেশ করেন। ‘বিশ্বসুন্দরী’ নিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাতকার নিয়েছেন- রুহুল আমিন ভূঁইয়া...
বিশ্বসুন্দরী’ নিয়ে প্রথম দিন থেকে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কেমন লাগছে?
প্রতিটি কাজই সৃষ্টিশীল মানুষের জন্য সন্তানের মতো। আমাদের নতুন সন্তান ‘বিশ্বসুন্দরী’ ভূমিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টিকে সবাই এতটা সাদরে গ্রহণ করছেন-স্বাভাবিকভাবেই আমি আনন্দিত। কৃতজ্ঞ দর্শক, প্রদর্শক, হল মালিক, সাংবাদিক ভাই-বোনদের কাছে।
দুঃসময়ে তৃতীয় চলচ্চিত্রের সফলতা কিভাবে দেখছেন?
সফলতা আপেক্ষিক বিষয়। তবে আমি প্রযোজক সান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেডের কাছে কৃতজ্ঞ এবং তাদের নিয়ে গর্বিত, এই দুঃসময়ে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে ছবিটি মুক্তি দেয়ার জন্য। প্রযোজক অঞ্জন চৌধুরীর পরামর্শ মেনে নির্বাহী প্রযোজক অজয় কুমার কুন্ডু খুব কম সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে ১১ ডিসেম্বর মুক্তি দিয়েছেন। আমার মতে, তাদের মত নির্ভেজাল, স্বচ্ছ প্রযোজক যে কোনো পরিচালকের জন্যই আশীর্বাদ। ১১ বরাবরই আমার জন্য ‘লাকী’ ছিল। ১১ জুলাই আমার জন্মদিন, ২০১১ সালে বিয়ে হয়েছিল, ১১ ডিসেম্বরও আমার জন্য সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এলো।
মুক্তির আগে কি ধারণা করেছিলেন দর্শকরা এভাবে ছবিটি দেখতে আসবেন?
সত্যি বলতে, এতটা সাড়া পাব ভাবিনি। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল, এ ছবিতে আমি এমন একটি গল্প লিখেছি, যা এর আগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দেখিনি। সেন্সর বোর্ডের সম্মানিত সদস্য যারা মুক্তির আগে ছবিটি দেখেছিলেন, তাদের থেকে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুনেছিলাম। তারপরও ভয় ছিল। তবে সবকিছুকে মিথ্যে প্রমাণ করে দর্শক আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। গল্প নিয়ে, অভিনয়, গান, চিত্রগ্রহণ নিয়ে ইতিবাচক রায় জানিয়েছেন। এজন্য দর্শকের মাথা ঝুঁকে সালাম জানাই। কষ্ট একটাই, আমার মাকে সঙ্গে নিয়ে দেখাব বলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেছি। তবে সিনেমা মুক্তির দিনই মাকে স্কয়ার হসপিটালে ভর্তি করাই। মা এখনও সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
‘বিশ্বসুন্দরী’র ট্রেলার প্রকাশের পর অনেকেই সমালোচনা করেছেন। সিনেমা মুক্তির পর কি সমালোচনা পেয়েছেন?
আমি প্রস্তুত ছিলাম, সিনেমা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য শোনার। তবে এখন পর্যন্ত কারও মুখেই শুনিনি, ‘বিশ্বসুন্দরী’ বাজে সিনেমা। বরং সালাউদ্দিন লাভলুর মতো নির্মাতা আমাদের সালাম জানিয়েছেন, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে গর্ব করার মতো একটি চলচ্চিত্র উপহার দেয়ার জন্য। দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছবিটি দেখে ডুকরে কেঁদেছেন। জড়িয়ে ধরেছেন আমাকে। এর চেয়ে বিশাল প্রাপ্তি কি আর হতে পারে? এটা ঠিক, ছবির গল্প ঠিকঠাকভাবে এলেও আমার লেখা চিত্রনাট্যের কিছু জায়গা পরিচালক পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। তবে সম্পাদক ইকবাল কবীর জুয়েল, চিত্রগ্রাহক খায়ের খন্দকার, আবহ সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা এবং ছবির গানগুলো আমার গল্পটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাছাড়া পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন তার সহকারী অমিতাভ আহমেদ রানা, সুব্রত মিত্র, মইনুল ওয়াজেদ রাজীব। গল্পটি প্রাণ পেত না যদি না অভিনয়শিল্পীরা তাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে অভিনয় করতেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
‘বিশ্বসুন্দরী’র সাফল্যের পর নতুন কাজ নিয়ে কি ভাবছেন?
‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তির দিন থেকে এখন পর্যন্ত ৪টি চলচ্চিত্র লেখার প্রস্তাব পেয়েছি। তবে আমি শতভাগ বিশ্বাস না করে আর কোন চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না। সিনেমার জন্য নাটক থেকে দূরে ছিলাম প্রায় দুই বছর। বর্তমানে নাটকে মনোযোগ দিয়েছি। সামনে টেলিভিশন এবং ওটিটিতে বেশ কিছু ভাল কাজ দর্শকের উপহার দিতে চাই।