স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে দূর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ওই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে তারা দূর্যোগ মোকাবেলায় ৯দফা দাবি তুলে ধরে তা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র মিহির বিশ্বাস, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, কেএনএইচ জার্মানির প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মুকুল, স্ক্যান সভাপতি জাহাঙ্গীর নাকির, সচেতন সংস্থার সাকিলা পারভীন, সাংবাদিক মানিক লাল ঘোষ ও পলাশ আহসান, খানির সামিউল ইসলাম শোভন, লিডার্সের পরিতোষ কুমার বৈদ্য, ইঞ্জিনিয়ার তুহীন পারভেজ, উন্নয়ন কর্মী লোকেশ ঘোষ প্রমূখ।
সমাবেশে উত্থাপিত ৯দফায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ করতে হবে। পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারসহ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে জরুরী তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। উপকূলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। দূর্যোগ প্রবণ উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের জানমাল সুরক্ষায় কার্যকর অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে বছরব্যাপী বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। ঝড়-ঝঞ্ঝা ও ভূমিক্ষয় রোধে উপকূল, দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ এবং সবুজবেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে বিশ^ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর করোনা পরিস্থিতি ও সুপার সাইক্লোন আম্ফান এই সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আম্ফানের পর ৬ মাস পার হলেও জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। তাই এই সংকট মোকাবেলায় জরুরী কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, উপকুলীয় এলাকায় লবণ পানিতে উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানী করে সরকার প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কিন্তু ওই সকল এলাকায় চিংড়ি চাষের জন্য লবণপানি উত্তোলনের কারণে যে দীর্ঘমেয়াদী সুপেয় পানির সংকট তৈরী হয়েছে, সেই সংকট উত্তরণে এখনো যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনের আহ্বান জানান তারা।