অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেগম রোকেয়া দিবস ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে বক্তারা বলেন, জনগণের স্বাস্থ্যকে সংবিধানে কেবল মৌলিক চাহিদা হিসেবে নয়, বরং পূর্ণ মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের জাতীয় অর্জনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে, সত্যিই আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়বাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি কি না।
দেশব্যাপী প্রায় ৭০০ বেসরকারি সংস্থা (বিডিসিএসও প্রসেস) ও কোস্ট ট্রাস্ট বুধবার যৌথভাবে একটি ভারচুয়াল সেমিনার আয়োজন করে। যার শিরোনাম ছিল “উত্তম স্বাস্থ্য মানবাধিকারের জন্য লড়াই”।
অনলাইন সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহীন আনাম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপক্ষিত ছিলেন নারীপক্ষের নাসরিন হক। সেমিনার সঞ্চালনা করেন বিডিসিএসও প্রসেসের রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রুলফাও রাজশাহীর আফজাল হোসাইন, এডাবের একেএম জসিম উদ্দীন, চ্যানেল আই রংপুর প্রতিনিধি মেরিনা লাভলি, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বরিশাল ব্যুরোর জহিরুল ইসলাম, দর্পন কুমিল্লার বাসন্তী সাহা, বিএনএনআরসি’র এএইচএম বজলুর রহমান, সিডস রংপুরের সারথী সাহা, রংপুরের মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, বরিশালের আইসিডিএ-র আনোয়ার জাহিদ এবং কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দ।
শিরীন হক তার বক্তব্যে বলেন, দেড়শ বছর আগে বেগম রোকেয়া যে সাহস দেখিয়েছিলেন, জাতি হিসেবে নারীর অধিকার পুনরুদ্ধারে আমাদের সেই সাহস আবার দেখাতে হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে এই কোভিড মহামারীর সময়ে মুনাফার লোভ এবং দুর্নীতি এত পরিমাণে বেড়েছে যে সরকারি ও প্রাইভেট উভয় খাতে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, আমাদের সংবিধানে স্বাস্থ্যকে শুধু মৌলিক চাহিদা হিসেবে উল্লেখ করা আছে। একে সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
শাহীন আনাম বলেন, যে জাতি মানুষের মুক্তি ও অধিকারের জন্য নিজের জীবন দিয়ে যুদ্ধ করল, সেই জাতি আবার কী করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও প্রান্তিক মানুষের জমি দখল এবং তাদের অধিকার হরণের সময় নীরব থাকে? এটি অত্যন্ত লজ্জার।
বাসন্তী সাহা বলেন, মতামত প্রকাশের অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার। ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট এর জন্য একটি বড় বাধা।
একেএম জসিম উদ্দীন বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের নানা সংকট থাকার পরও এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমরা আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়েছি। আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব বলতে গেলে কিছুই পালন করেনি, তবু তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে সরকারকে দোষারোপ করছে এবং সরকারের উদারতার ভুল ব্যাখ্যা করছে।
জহিরুল ইসলাম জুয়েল মৎসজীবীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারের মৎস সম্পদ বাড়ানোর নীতি দরিদ্র জেলেদের সারা জীবনের সম্পদ জাল ও নৌকা ধ্বংস করে দিয়ে তাদের আরো দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মেরিনা লাভলি তার এলাকার সরকারি স্বাস্থ্য সেবার দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, কোভিডের কারণে রংপুরে নতুন করে প্রায় দশ লাখ মানুষ দারিদ্রের মধ্যে নিপতিত হয়েছে।
রেজাউল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, সুশীল সমাজের অংশ হিসেবে এনজিও সমূহকে আর শুধুমাত্র সেবাপ্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। নাগরিক অধিকার ও দাবি আদায়ের ব্যাপারে তাদের উ”চকণ্ঠ হতে হবে। সমাজের পরিবর্তনের জন্য সকল পক্ষের সাথে মতবিনিময়ের জন্য তাদের জায়গা তৈরি করতে হবে। তবে, এজন্য তাদের নিজেদেরই আগে পরিবর্তন করতে হবে।