স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে দাপট দেখাচ্ছে লিভারপুল। গত কয়েক মৌসুমে জার্গেন ক্লপের শিষ্যদের পারফর্মেন্স মুগ্ধ-বিমোহিত করেছে গোটা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের। ২০১৮-১৯ মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জেতে অলরেডরা। গত মৌসুমে দীর্ঘ তিন দশকের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপাও নিজেদের শোকেসে তুলে জার্গেন ক্লপের দল। স্বপ্নের এই ট্রফি নিজেদের করে রাখার জন্য এবারও আত্মপ্রত্যয়ী ইংলিশ জায়ান্টরা। সেই লক্ষ্যেই যেন নতুন মৌসুমের মিশন শুরু করেছে লিভারপুল। প্রিমিয়ার লীগে লিডসের বিপক্ষে জয় দিয়ে মৌসুম শুরুর পর রবিবার তাদের দ্বিতীয় ম্যাচেও অনায়াস জয় তুলে নিয়েছে অলরেডরা। সাদিও মানের দুই গোলের সৌজন্যে স্টামফোর্ড ব্রিজে এদিন তারা ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে স্বাগতিক চেলসিকে। আর এটাই প্রমাণ করে যে ব্লুজরা এখনও প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
চেলসির গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগার আরও একটি মারাত্মক ভুলের খেসারতে এদিন ৫৪ মিনিটেই পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় চেলসির। অন্যদিকে ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে জর্জিনহোর দুর্দান্ত পেনাল্টি রুখে দিয়ে লিভারপুল গোলরক্ষক এ্যালিসন বেকার প্রমাণ করেছেন কেন তিনি চ্যাম্পিয়ন দলের এক নম্বর গোলরক্ষক। এই জয়ের ফলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে শীর্ষে থাকা এভারটন, আর্সেনাল ও ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে সমান পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চার নাম্বারে অবস্থান করছে লিভারপুল। লিভারপুল ছাড়াও এদিন প্রিমিয়ার লীগে বড় জয় তুলে নেয় শক্তিশালী টটেনহ্যাম হটস্পার, ব্রাইটন এবং লিচেস্টার সিটি।
গত মৌসুমে দাপুটে পারফর্মেন্স করে প্রিমিয়ার লীগের চ্যাম্পিয়ন হয় লিভারপুল। আর শীর্ষে থাকা লিভারপুলের থেকে ৩৩ পয়েন্ট পিছিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে চেলসি। নতুন মৌসুমে তাই তাদের একটাই লক্ষ্য যেভাবেই হোক পুনরায় লীগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করা। সেজন্য এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার মার্কেটে সর্বোচ্চ ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে তারা। কিন্তু রক্ষণভাগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পজিশনের দিকে না তাকিয়ে শুধু ফরোয়ার্ড লাইন শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত হয়তো বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। ফ্র্যাংক ল্যাম্পার্ডের দলের হয়ে খেলতে আসা থিয়াগো সিলভা মূল দলে খেলার জন্য এখনও ফিট হতে পারেননি। রক্ষণভাগের দুর্বলতা তাই দলে রয়েই গেছে। আর লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচে এটাই পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গেল মৌসুমে ৫৪ গোল হজম করা চেলসি প্রথমার্ধেই লিভারপুলকে সামলাতে হিমশিম খেয়েছে। যদিওবা প্রথমার্ধে কোন গোলের দেখা পায়নি কোন দলই। তবে মোহাম্মদ সালাহর ক্রস থেকে রবার্তো ফিরমিনোকে আটকাতে গিয়ে চেলসি ডিফেন্ডার ক্রিস্টেনসেকে বেগ পেতে হয়েছে। লিভারপুলের আধিপত্য বজায় থাকলেও প্রথমার্ধে সবচেয়ে সেরা সুযোগটি পেয়েছিল স্বাগতিক চেলসিই। টিমো ওয়ার্নার অবশ্য সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। জর্ডান হেন্ডারসনের ক্রস থেকে মানেকে আটকাতে গিয়ে প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে ফাউল করে বসেন ক্রিস্টেনসেন। রেফারি পল টিয়ারিন প্রথমে তাকে হলুদ কার্ড দেখায়। কিন্তু ভিএআর-এর সহায়তায় শেষ পর্যন্ত ক্রিস্টেনসেনকে লাল কার্ড দেখান ম্যাচ রেফারি। এর ফলে দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় চেলসিকে ১০ জন নিয়েই খেলতে হয়।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই প্রতিপক্ষের জালে ঝড় তুলে লিভারপুলের সাদিও মানে। মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানেই চেলসির জালে দুইবার বল জড়ান তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের ৫০ মিনিটেই প্রথম এগিয়ে যায় লিভারপুল। রবার্তো ফিরমিনোর ক্রস থেকে শক্তিশালী হেডে দলকে প্রথম গোল উপহার দেন সেনেগাল তারকা। তার চার মিনিট পর কেপার বাজে একটি পাসে মানে বল পেয়ে খালি জালে জড়ালে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় জার্গেন ক্লপের দল। এর পরের সময়টাতে আর কোন দল গোল না করতে পারলে দুই গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে অলরেডরা। সফরকারী দল লিভারপুলের বিপক্ষে এদিন অভিষেক ঘটে থিয়াগো আলকান্তারার। ইনজুরি আক্রান্ত হেন্ডারসনের জায়গায় দ্বিতীয়ার্ধের ৪৫ মিনিটে মাঠে নামেন তিনি।