ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দোহারে ভয় দেখিয়ে কিশোরী ধর্ষণ, বাড়িওয়ালা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০০:৩৬, ৬ জুলাই ২০২০

দোহারে ভয় দেখিয়ে কিশোরী ধর্ষণ, বাড়িওয়ালা গ্রেফতার

সংবাদদাতা, দোহার-নবাবগঞ্জ ॥ ঢাকার দোহার উপজেলায় হত্যার ভয় দেখিয়ে তেরো বছর বয়সী এক কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় করা মামলায় ধর্ষণে সহযোগিতা করার দায়ে এক নারীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে দোহার থানা পুলিশ। দোহার থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, শনিবার রাতে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রথম মামলায় একজন, দ্বিতীয় মামলায় দুইজন ও তৃতীয় মামলায় একজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পরপরই উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অপরাধে বাড়িওয়ালা সুমা (৩০) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করে রবিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি। স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাবা একজন রিক্সা চালক। তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। প্রায় চার মাস আগে স্ত্রী ও ১৩ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েকে নিয়ে ওই গ্রামের সুমাদের বাড়িতে ভাড়া আসেন তারা। এরপর একই গ্রামের সেলিম চোকদারের মেয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই সুবাদে মাঝে মধ্যেই তার সঙ্গে রাতে ঘুমাতে যেতেন ওই কিশোরী। ধর্ষিতা ও ভুক্তভোগী কিশোরী সাংবাদিকদের জানান, প্রায় আড়াই মাস আগে এক রাতে সেলিম চোকদারের মেয়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল সে। ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ করে সেলিম চোকদার এসে আমার মুখ চেপে ধরে আমাকে জোরপূর্বক বাড়ির পার্শ¦বর্তী একটি পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এ ঘটনা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান সেলিম চোকদার। এতেই ক্ষান্ত না হয়ে পরবর্তীতে সেলিম তার প্রতিবেশী বন্ধু কিয়ামউদ্দিন হওলাদার ও ইদ্রিস মোল্লাকে নিয়ে আমাকে ভয় দেখিয়ে আরও কয়েকবার ধর্ষণ করে। আর এ কাজে সহযোগিতা করে বাড়িওয়ালা সুমা। ওই কিশোরী আরও জানান, ধর্ষণের সময় ধর্ষকরা এ ঘটনা কাউকে না জানাতে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে হত্যার ভয় দেখাত। এছাড়াও স্থানীয় মুদি দোকানি তারা মিয়া আমার বাবার কাছে টাকা পাবে এ কথা বলে সুযোগ বুঝে আমাকে দোকানে ডেকে নিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন লজ্জা স্থানে হাত দিতেন। সম্প্রতি এ ঘটনা নাটকীয়ভাবে এলাকায় জানাজানি হয় একটি গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে। গত শুক্রবার বিলাসপুর ইউনিয়নের আলম বাজার এলাকায় রাধানগর গ্রামসহ আশপাশের অন্তত তিনটি গ্রামের কয়েক শ’ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে ওই কিশোরীর উপস্থিতিতে ধর্ষণের ঘটনা বিচারের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তরা সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় এবং ঘটনাটি আনুমানিক আড়াই মাস আগে হওয়ায় সমঝোতায় বাধার কারণ হয়। পরে এ সময় বিচারের দায়িত্বে থাকা সমাজপতিরা দোহার থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্তরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে সাংবাদিক ও নারী সমাজকর্মীদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি আমলে নিয়ে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে পৃথক তিনটি মামলা নেন দোহার থানা পুলিশ। মামলার বাদী ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্তরা তাকে প্রথমে টাকা দিয়ে ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে তাকে মেরে ফেলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। তিনি অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে দোহার থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই ঘটনায় ধর্ষণের কাজে সহযোগিতা করার দায়ে বাড়িওয়ালা এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ধর্ষকরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
×