জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার বাংলাদেশী সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে সহযোগিতা এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে কুয়েতের দুই আইন প্রণেতার বিরুদ্ধে। কুয়েতের আরবী পত্রিকা আল কাবাসের বরাত দিয়ে গাল্ফ নিউজ শনিবার এ খবর জানিয়েছে, তবে দুই কুয়েতী এমপির নাম তারা প্রকাশ করেনি। খবর বিডিনিউজের।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আল কাবাস জানিয়েছে, ওই দুই পার্লামেন্ট সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস। সেজন্য এমপি হিসেবে যে দায়মুক্তি তারা পান, তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হবে প্রসিকিউশনের তরফ থেকে। পাপুলের মদদদাতা হিসেবে কুয়েতের দুজন বর্তমান এবং একজন সাবেক এমপিসহ সাতজনকে চিহ্নিত করার কথা এর আগে জানিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তবে তাদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে প্রসিকিউশনের আবেদনে কুয়েতের সমাজ কল্যাণমন্ত্রী মরিয়ম আল আকিল ইতোমধ্যে দেশটির জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
গাল্ফ নিউজ জানিয়েছে, মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার আবেদন জানিয়েছিল পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস। এই তদন্তের অংশ হিসেবে কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক পরিচালককে ইতোমধ্যে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তার রিমান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশী এমপি পাপুলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কুয়েতের এক নারী ব্যবসায়ীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির বিচার বিভাগ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কুয়েতের শীর্ষস্থানীয় এক হোম ডেকর কোম্পানির মালিক ওই নারীকে ঘুষ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করার পর দুই হাজার দিনার জামানতে জামিন দেয়া হলেও তাকে দেশ ছাড়তে নিষেধ করা হয়। পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী হিসেবে চিহ্নিত কুয়েতী কর্মকর্তাদের একজন ওই নারী ব্যবসায়ীর ভাই। ওই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দেশটির সরকারী কৌঁসুলিরা। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশীর অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতী প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে। বাংলাদেশের এই এমপি কুয়েতী কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সে বিষয়ে রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তিনি, যা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সা¤্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির ওই হিসাবে ১৩৮ কোটি টাকা রয়েছে বলে এর আগে পাবলিক প্রসিকিউশনের বরাতে জানিয়েছিল কুয়েতী গণমাধ্যম।
বাংলাদেশেও পাপুলের অবৈধ সম্পদের খোঁজে তৎপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে পাপুল এবং তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে সংস্থাটি।
আগামী ৬ জুলাই এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত পাপুলকে কারাগারেই থাকতে হবে। অপরাধ প্রমাণ হলে পাপুলের পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে বলে লিখেছে কুয়েতের বিভিন্ন পত্রিকা।