স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ করোনা পরিস্থিতিতে যশোর বিদ্যুৎ সেক্টরে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিল নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। মিটারে তাদের ব্যবহৃত ইউনিট কম থাকলেও মাস শেষে দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল। যা প্রদান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন গ্রাহকরা। অথচ কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে আনুমানিক এ বিল পরবর্তীতে সমন্বয় করে নেয়া হবে।
যশোর ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তাদের ৮৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে ডিভিশন-২ এ ৪৩ হাজার ৭৪৬ জন ও ডিভিশন-১ এ ৪২ হাজার ৪৩০ জন। শহরের বিপুল সংখ্যক এ ভিআইপি গ্রাহক নিয়ে তাদেরকে হিমশিম খেতে হয়। যদিও বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে পৌছাতে তাদের কোন সমস্যা নেই। তবে সমস্যায় ফেলেছে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি। এর থেকে তারা উত্তরণের কোন পথ পাচ্ছে না। এ কারণে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সেক্টরে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে শীঘ্রই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। শহরের বিদ্যুৎ গ্রহকরা অভিযোগে জানিয়েছেন, তাদের কাছে গত প্রায় চার মাস যাবৎ ভৌতিক বিল পাঠানো হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কমার্শিয়াল বিলের ক্ষেত্রে এ ঘটনা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বা সরকারি নির্দেশনায় কোন কোন মাসে স্বল্প পরিসরে খোলা হচ্ছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের বিদ্যুৎ বিল কম উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। প্রতিমাসেই তাদেরকে অতিরিক্ত বিলের বোঝা টানতে হচ্ছে। এ বিল পরিশোধ করতে গিয়ে তারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। গ্রাহকরা বলছেন, গত মার্চ মাস থেকে প্রায় চার মাস যাবৎ মিটারম্যানরা তাদের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে না। তারা অফিসে বসেই আনুমানিক বিল করেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের কাছে পৌছে দিচ্ছেন। যা বাস্তবে মিটার রিডিংয়ের সাথে কোন মিল থাকছে না। শহরে লকডাউনের এ পরিস্থিতিতে তাদের মিটারে যদি ১শ’ ইউনিট বিল উঠে থাকে, তাহলে তারা এ বিলই পরিশোধ করবেন। কিন্তু তা হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে আড়াইশ’ ইউনিটের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অথচ মিটারে থাকছে ১শ’ ইউনিটের বিল। এ বিল দেখে গ্রাহকরা অবাক হচ্ছেন। অথচ তাদের কোনকিছুই করার থাকছে না। বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকরা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলছেন আগামী মাসে বিল সমন্বয় করা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যা তাই থাকছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগে জানান। এ বিষয়ে যশোর ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্তমান ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সরকার সবাইকে ঘরে থাকার নিদের্শনা দিয়েছে। অফিস আদালতও স্বল্প পরিসরে করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ কারণে আমরা মিটারম্যানদের গ্রাহকের বাড়িতে বাড়িতে পাঠিয়ে উভয়কে করোনা ঝুঁকিতে ফেলতে চাইনি। কিন্তু কাজতো থেমে থাকেনি। এরই প্রেক্ষিতে তারা অফিসে বসেই বিদ্যুতের সকল গ্রাহকের আনুমানিক বিল তৈরি করেছেন। এ কাজে কারো হয়তো বিল কম বেশি হতে পারে। অবশ্য বাড়িতে ব্যবহৃত বিলের ক্ষেত্রে তেমন কোন তারতম্য হয়নি। দু’একটি ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ বিল প্রস্ততকারীরা বুঝতে পারেননি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে বিদ্যুৎ ব্যয় কম হবে ও বিল কম করতে হবে। অনুমান বিলে এ বিষয়টি তাদের নজরে আসা উচিত ছিল। তারপরও যদি কারো বিল বেশি হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই আগামীতে এ বিল সমন্বয় করে নেয়া হবে। এ নিয়ে বাড়তি কোন ঝামেলা বা সংশয় থাকবে না। গ্রাহকরা অযথা এ নিয়ে ভয় পাচ্ছে ও ভৌতিক বিল বলে আখ্যা দিচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বিদ্যুতের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে সূত্রটি দাবি করেছে। এ বিষয়ে ওজোপাডিকো ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করীম বলেন, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যশোরে কোন কোন গ্রাহকের অভিযোগ ছিল। তবে তা গত মে মাসের বিলে সমন্বয় করে নেয়া হয়েছে। চলতি জুন মাস থেকে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, জুন মাস থেকেই মিটারম্যানরা ঝুঁকি নিয়ে হলেও গ্রাহক পর্যায়ে গিয়ে মিটার রিডিং সংগ্রহ করেছে। সে হিসেবেই তারা এ মাস থেকে বিল করছে। তারপরও যদি কারো বিলে এ জাতীয় সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে তিনি অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।