ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাগেরহাটে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট স্থাপন

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ১৭ জুন ২০২০

বাগেরহাটে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট স্থাপন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের পাঁচ উপজেলায় ৭৫টি ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছে। দুর্যোগপ্রবন লবনাক্ত উপকূলীয় এ জেলায় সুপেয় ও নিরাপদ পানির তীব্র সংকট সমাধানে ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানিকে শতভাগ জীবানুমুক্ত করে বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের মাঝে সরবরাহ করা হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের এ উদ্যোগকে স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের “ ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধনের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি, বাগেরহাট ও ফরিদপুর জেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প” এর মাধ্যমে বাগেরহাট জেলায় ৭৫টি ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে কচুয়া উপজেলায় ৯, মোরেলগঞ্জে ২৫, শরণখোলায় ১৮, মোংলায় ১৪ এবং চিতলমারী উপজেলায় ৯টি ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এ বছরের ৩০ আগস্টের সকল ইউনিটের কাজ শেষ হবে। আধুনিক প্রযুক্তির প্রতিটি ইউনিট স্থাপনে প্রায় ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পুকুর বা ভূ-উপরিস্থ যেকোন উৎস থেকে বৈদ্যুতিক মটরের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করা হবে। ওই পানি কোন রাসয়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ৪টি ধাপে পরিশোধনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরবরাহ ট্যাংকিতে যাবে। ওই ট্যাংকিতে পানি সরবরাহের জন্য দুটি ট্যাব থাকবে। এসব ট্যাব থেকে মিনিটে ১৬ লিটার হিসেবে ঘন্টায় ৯৬০ লিটার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে। যা এলাকার বিপুল পরিমান মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করবে বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী এফ এম ইসমাইল হোসেন আশা প্রকাশ করেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলার মাইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে সুপেয় পানির ব্যাপক সংকট রয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী সরবরাহ পেলে পানির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মোরেলগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী এমডি মনিরুল ইসলাম বলেন, মোরেলগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা লবনাক্ত। এই উপজেলার জন্য ২৫টি ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট বরাদ্দ হয়েছে। যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, জেলার সব থেকে বেশি লবনাক্ত ও ঝুকিপূর্ন উপজেলা শরণখোলা। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট পানির চাহিদা মেটাবে। তবে চারটি ইউনিয়নের বিপুল পরিমান জনসংখ্যার এই উপজেলার জন্য ১৪টি ইউনিট যথেষ্ট নয়। তিনি এখানে আরও বেশি ইউনিট স্থাপনের দাবি করেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের শরণখোলা উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী এসএম মেহেদী হাসান বলেন, এই উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুপযোগী। ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট এই উপজেলা মানুষের জন্য একটি সময় উপযোগী উদ্যোগ। রাসয়নিক পদার্থ্য ছাড়াই ভূ-উপরস্থি পানিকে ৪টি ধাপে পরিশোধন করে সরবরাহ করা হবে। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এদিকে জেলার ৯টি উপজেলার শুধু ৫টিতে সুপেয় পানির জন্য এই প্রকল্প থাকায় অন্য উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও সাধারণরা তাদের এলাকায়ও এই প্রকল্প সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন। রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের সুদেব গোলদার বলেন, আমাদের এই উপজেলায়ও এ ধরণের মেশিন বসালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি উপকৃত হত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী এফ এম ইসমাইল হোসেন বলেন, “ ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধনের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি, বাগেরহাট ও ফরিদপুর জেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’র মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার ৫টি উপজেলায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ৭৫টি ন্যানো ফিল্টেশন ইউনিট স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছে। ৩০ আগস্টের মধ্যে সব ইউনিটের কাজ শেষ হবে। প্রতিটি ইউনিট থেকে ঘন্টায় ৯৬০ লিটার পানি বিনামূল্যে পবে স্থানীয়রা। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠির সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ হবে। কাজ শেষে এই প্রকল্প দেখভালের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সংলিষ্ট এলাকার গন্যমান্যদের নিয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি করা হবে। যারা এই ফিল্টেশন ইউনিটটিকে পরিচালনা করবেন। এদের মাধ্যমে এই ইউনিটের বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য মেইনটেন্যান্স ব্যয় পরিচালিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×