ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিখোঁজ রাবি শিক্ষার্থীর খোঁজ জঙ্গী আস্তানায়, হতবাক বাবা

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ১৫ জুন ২০২০

নিখোঁজ রাবি শিক্ষার্থীর খোঁজ জঙ্গী আস্তানায়, হতবাক বাবা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার জঙ্গী আস্তানায় গোপন বৈঠকের সময় র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার আনসার আল ইসলামের চার সদস্যের মধ্যে আব্দুর রহমান (২১) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি বগুড়ার শাহজাদপুর উপজেলার পলিপলাশ গ্রামে। বাবার নাম ইয়াছিনন আলী। শুক্রবার থেকে সে নিখোঁজ ছিলো বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। বিভাগের শিক্ষকরা পরিবারের মাধ্যমে অবগত হয়ে তাকে খোঁজাখুঁজিও করছিলেন। সংশ্লিষ্ট থানায় জিডিও করা হয়েছিলো। এর মধ্যেই রবিবার দুপুরে র‌্যাব রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা গোদাগাড়ী উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আব্দুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব বলছে- তারা আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জঙ্গী অস্তানায় অভিযানে চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে উগ্রবাদী বই। রাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেজাউর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার আব্দুর রহমানের বাবা আমাকে ফোন করে তার সন্তান নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানান।’ পরিবারের বরাত দিয়ে অধ্যাপক রেজাউর রহমান জানান, আব্দুর রহমান ও তার ছোটভাই আব্দুর রাকিব বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে শফিউদ্দিন ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকতেন। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর থেকে আব্দুর রহমান ও তার ছোট ভাই বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নেয়া এবং মেস ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহীতে আসেন আব্দুর রহমান। আব্দুর রহমানের ছোট ভাই আব্দুর রাকিব বিনোদপুরের ইসলামিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার যখন তার ভাই রাজশাহীতে আসেন, তখন বাড়িতে বলে এসেছিলেন- শুক্রবার দুপুরে তিনি আবার বাড়ি ফিরে যাবেন। তবে শুক্রবার দুপুর পেরিয়ে গেলেও বাড়ি না যাওয়ায় তাকে ফোন করা হয়। তবে মোবাইল বন্ধ পান তারা। তিনি আরও বলেন, ‘সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ভাইয়ের ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম। তাই তার বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিতে শুরু করি। কিন্তু কেউ রাজশাহীতে নেই জানিয়ে শিক্ষকদের জানাতে বলেন। আমরা পরে শিক্ষকদেরকে বিষয়টি অবগত করি। অন্য আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও খোঁজ নিয়ে না পেয়ে শনিবার আমি, বাবা এবং মামা রাজশাহীতে যাই।’ রাকিব বলেন, ‘আমরা রাজশাহীর মতিহার থানায় গিয়ে নিখোঁজ বিষয়ে জিডি করি। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ছিলেন। জিডি করেও খোঁজাখুঁজি করি। না পেয়ে সন্ধ্যার পর বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। পথিমধ্যে রাত ৮টার দিকে একটি নম্বর থেকে কল আসে। এক ব্যক্তি বলেন- ‘আব্দুর রহমান আমাদের হাতে জিম্মি আছে। রাকিব আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। নিজস্ব জমিজমাও নেই। আমরা দুইভাই রাজশাহীতে এক মেসে থেকে পড়াশোনা করি, অনেক খরচ। আমার ভাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। কিন্তু কোনো দিন কোন দল বা সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে দেখিনি। আব্দুর রহমানের বাবা ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভাল। ও কখনও রাজনীতি করে না। আমার ছেলে জঙ্গী সংগঠনে যুক্ত এটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমাকে গোদাগাড়ী থানা থেকে ফোন করে ডাকা হয়েছে। এতে তিনি হতবাক হয়েছেন বলে জানান। র‌্যাব রাজশাহীর কোম্পানী অধিনায়ক এটিএম মাইনুল ইসলাম বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেফতার চার জঙ্গি পরিত্যক্ত একটি বাথানবাড়িতে গোপন বৈঠক করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বইও উদ্ধার করা হয়।
×