অনলাইন রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের চলমান সংকটের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধকোটি পরিবারের দুই কোটির অধিক মানুষকে মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ভয়াবহতার মধ্যে দেশের মানুষের পাশে দাড়াঁতে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬০পরিবারের মাঝে বিএনপি নেতাকর্মীরা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। এতে মোট দুই ৭ লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ মানুষ উপকৃত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে গরিব মানুষের বাসা-বাড়িতে ঈদ উপহার ও নগদ অর্থও পৌঁছে দিয়েছে বিএনপি। মার্চের ২০ তারিখ থেকে মে’র ২০ তারিখ পর্যন্ত এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
শনিবার সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে রাজশাহী বিভাগে তিন লাখ ৩ হাজার ৯৬০টি পরিবারের ১২ লাখ ১৫ হাজার ৮৪০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৭৯৩টি পরিবারের ২২ লাখ ৮২ হাজার ৩৭২ জন, কুমিল্লা বিভাগে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৮টি পরিবারের ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮৩২ জন, রংপুর বিভাগে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৭১ টি পরিবারের ৯ লাখ ৭৬ হাজার ২৮৪ জন, ঢাকা বিভাগে ১৯ লাখ ৫ হাজার ১০টি পরিবারের ৭৬ লাখ ২০ হাজার ৪০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুই লাখ ৩৭ হাজার ২৪১টি পরিবারের ৯৪ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৬৮ হাজার ২৩৫টি পরিবারের দুই লাখ ৭২ হাজার ৯৪০ জন, খুলনা বিভাগে তিন লাখ ৬৯ হাজার ১০২টি পরিবারের ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭৬ জন, সিলেট বিভাগে দুই লাখ ১৬ হাজার ১৬৯টি পরিবারের ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭৬ জন, ফরিদপুর বিভাগে ৭১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭৪০ জনকে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়।
যুবদলের পক্ষ থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার ৭০২টি পরিবারের ৯ লাখ ২২ হাজার ৮০৮ জন, স্বেচ্ছাসেবক দল এক লাখ ৬৫ হাজার ৭৩০টি পরিবারে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৯২০ জন, ছাত্রদল তিন লাখ ৬৯ হাজার ৮৬২টি পরিবারের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪৮ জন, কৃষকদল ১৯ হাজার ১৬৫টি পরিবারের ৭৬ হাজার ৬৬০ জনকে, মহিলা দল ১৫ হাজার ৫৩০টি পরিবারের ৬২ হাজার ১২০ জন, শ্রমিক দল পাঁচ হাজার ৭৭৫টি পরিবারের ২৩ হাজার ১০০ জন, জাসাস ১২ হাজার ৩৭৫টি পরিবারে ৪৯ হাজার ৫০০ জন, তাঁতী দল ১০ হাজার ৩০০টি পরিবারের ৪১ হাজার ২০০ জন, মৎস্যজীবী দল ১৫ হাজার ৮৮৭টি পরিবারের ৬৩ হাজার ৫৪৮ জন, ওলামা দল পাঁচ হাজার ৬০টি পরিবারের ২০ হাজার ২৪০ জনসহ মোট ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬০টি পরিবারের দুই কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ জনকে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে বলে সমগ্র জাতি প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু সরকার সবাইকে হতাশ করেছে। দেশের মানুষের উদ্বেগ ছিল দুটি বিষয় নিয়ে-স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি। করোনাভাইরাস দেশের স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামো ও অব্যবস্থাপনার আসল চিত্রটাই সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বই নতুন করে ভাবছে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। অথচ নতুন বাজেটে স্বাস্থ্যখাত অগ্রাধিকার পেয়েছে আট নম্বরে। অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় মাত্র তিন হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেয়া হলো জিডিপির মাত্র ০.৯% মাত্র। অথচ স্বাস্থ্যখাতে আমরা জিডিপির ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, থোক বরাদ্দের ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ তৈরি, ভেন্টিলেটর কেনা, দেশের সব মানুষের দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া যাবে তার ভরসা কতটা দিতে পারবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। একই সঙ্গে বলতে চাই, স্বাস্থ্যখাতে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বিগত ১২ বছরে। যদি দুর্নীতি না হতো, তাহলে বিগত ১২ বছরে যে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল এই খাতে, তা দিয়ে প্রত্যেক বিভাগীয় ও জেলা শহরে আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সম্বলিত আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরা যেত।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় করোনা পর্যবেক্ষণ দলের আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহামুদ টুকু এবং ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।