স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মহামারী করোনাভাইরাস সঙ্কটময় পরিস্থিতি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তায় রেখে এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ : ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’। প্রস্তাবিত বাজেটে করোনা থেকে মানুষ বাঁচানো এবং অর্র্থনীতিকে পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে আবেগ আছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এই বাজেটে চলমান পরিস্থিতিতে যে আবেগ আছে তা দরকার ছিল বলে উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ জনকণ্ঠকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো আবেগ আছে প্রচুর। আবেগ আছে মানুষকে করোনা থেকে বাঁচানোর। আবেগ আছে যারা অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের প্রথমে বাঁচানোর এবং পুনর্বাসিত করা। আবেগ আছে অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রেও। তবে আগামীর খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে কৃষিতে আরও বরাদ্দ বেশি দরকার বলেও জানান।
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এই কঠিন সময়ে আবেগ দরকার। এটিকে অর্থনৈতিক উত্তরণের বাজেট বলেছেন অর্থমন্ত্রী। আগে অগ্রগতির বাজেট হতো এবার উত্তরণের বাজেটে এই আবেগগুলো আছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। করোনার আগে আমাদের প্রবৃদ্ধি বিশ্বের ৩ নম্বরে ছিলাম, সামাজিক উন্নয়নগুলো হচ্ছিল। সারাবিশ্বে আমরা নন্দিত হয়েছি উন্নয়নের জন্য। এরপর করোনা আসল। বাংলাদেশসহ কোন বিশ্বই এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। সব দেশেই বিরুপ প্রভাব পরছে। আমাদের রেমিটেন্স রফতানি আমদানি সব কিছুতেই প্রভাব পরেছে। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক চাকা প্রায় বন্ধ। মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবেও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেকারত্ব বেড়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য এটি উত্তোরণের বাজেট। সে হিসেবে যে আবেগগুলোর কথা বললাম তা আছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, জরুরী ভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতে ৫২৯ কোটি টাকা প্রদান করেছি। চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মীসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য ৮৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়ও করোনা মোকাবেলায় থেকে বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করেন। স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ নিয়ে অর্থনীতিবিদ খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এবার হাসপাতাল, মাস্ক, পিপিই, অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের জন্য দেয়া এবারই প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছে। চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মীসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও করোনা মোকাবেলায় থোক বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা এসব এগিয়ে নিয়ে যাবে। আগে টেস্ট কম হতো এখন আরও বেশি হবে। টাকা যেন ব্যয় হয় সময় মতো সেটি বলব। করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে আবেগের সঙ্গে কাজের মিল আছে। স্বাস্থ্যখাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি বরাদ্দ যা বাজেটের প্রায় ৫ শতাংশ আর জাতীয় আয়ের ০.৯ শতাংশ। অংশ হিসেবে এখনও এক শতাংশের নিচে আছি। অন্যান্য অনেক দেশে আরও বেশি। এখানে বলা হয়, খরচ করা যায় না বরাদ্দ দিয়ে লাভ কি কিন্তু খরচ তো করতে হবে। এরপরও যে বরাদ্দ তাতে অবকাঠামো বৃদ্ধি স্থায়ী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনিতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যা বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ। এখানে অনেক মানুষ যারা দুস্থ হয়ে গেছে। তাদের সহায়তার জন্য এটি ইতিবাচক দিন। কৃষিখাতের বরাদ্দ নিয়ে অর্থনীতিবিদ বলেন, কৃষি, খাদ্য, মৎস্য এবং খাদ্য নিরাপত্তায় ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে ২১ হাজার ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ছিল। সে হিসেবে খুব বাড়েনি। এটি অতি সামান্য বেড়েছে। এটি আরও বেশি করা দরকার ছিল। কেননা বিদেশ থেকে টাকা দিয়েও খাদ্য পাওয়া যাবে না। নিজের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। বোরো ভাল হয়েছে, আউশ আমনে নজর দিতে হবে। অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনে নজর দিতে হবে। শিক্ষা খাতে কিছুটা অর্থ বেড়েছে। যা আপাতত মনে হচ্ছে ভাল। প্রবৃদ্ধি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি এই অর্থনীতিবিদ।
ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কল করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এদিকে, আগামী অর্থবছরে মোট বাজেটের ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ধরা হয়েছে। যেখানে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। তবে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান বাজেটে আগামী বছর ঘাটতি আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। আমরা টাকা পাব কোথায়, এবারই কম হয়েছে। আগামী অর্থবছর ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ধরা হয়েছে প্রতিবছরই কম হয় তা আরও কম হতে পারে। জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশের মতো ঘাটতি ধরলেও এই বছরে বর্তমান বাস্তবতায় সাত শতাংশেও সমস্যা নেই বলেন তিনি। ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিদেশ থেকে নেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যত কম নেয়া যায় সে কথাও বলেন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।