স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আকস্মিক টর্নেডোতে দুটি উপজেলার পাঁচটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা নাসিরনগরের ৪টি ও সরাইল উপজেলার ১টি গ্রামে টর্নেডো আঘাত হানে। এতে শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছ পালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ঘর ও গাছ চাপায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে ও জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মোঃ সোহেল মিয়া নামে বুড়িশ্বর থেকে নাসিরনগর যাওয়ার পথে বাতাসের কবলে পড়ে মারা যান। সোহেল মিয়া বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মেম্বার হাবিবা বেগমের দেবর। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বাতাসের চোটে তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন এবং মারা যান। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তরা এখন খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছে। স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বুড্ডাপাড়া ও নাসিরনগর উপজেলার সদরের পশ্চিমপাড়া এবং আশুরাইল বেনীপাড়া, শ্রীঘর গ্রামের ওপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যায়। এতে দেড় শত ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক মিনিটের টর্নেডোতে বেশকিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি এবং গাছপালা ও বিদ্যুত ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশুরাইল গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, সকালে আমরা যার যার কর্মে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি আকাশ কালো হয়ে প্রচন্ড বাতাস শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের ঘর বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে যায়। প্রাণ বাঁচানোর জন্য পরিবারের লোকজন নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যায়। কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত আশুরাইল গ্রামের মিঠুন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ঘরে ওপরের টিনের চাল ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়। আমি ব্যথা না পেলেও আমার ছেলের পা ভেঙ্গে যায়। প্রবীণ বৃদ্ধ বরজু মিয়া বলেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন বিকট শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে। দেখি পূর্ব দিক থেকে প্রচন্ড বেগে বাতাস এসে হিসকে টান দিয়ে বসত ঘরটিকে মাটির নিচে শুইয়ে দেয়। ঘরের ভেতরে সব আসবাপত্র দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত আউশ মিয়া বলেন, আমার বসতঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে। একদিকে করোনার কারণে ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারছি না। কিভাবে ঘর ঠিক করব সেই টাকাও নেই। সরকার যাতে আমাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে। গৃহবধূ সন্দরবানু বলেন, কোথায় যাব, কি খাব এ নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি। করোনার কারণে কোন কাজকর্ম নেই। সংসারে অভাবই ছাড়ছে না। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমরা সরেজমিন ঘুরে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নগদ টাকা, চাল ও ঢেউটিন দেয়া হবে। নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী জানান, ঝড়ে কাঁচা-পাকাসহ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করছি।