ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

রাজধানীর কালাচাঁদপুরে বাসাভাড়া না দিতে পারায় গারো পরিবারকে মারধর

প্রকাশিত: ১৯:০১, ১৮ মে ২০২০

রাজধানীর কালাচাঁদপুরে বাসাভাড়া না দিতে পারায় গারো পরিবারকে মারধর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকায় বাসা ভাড়া না পেয়ে একটি গারো পরিবারের চার সদস্যকে মারধোর ও বাসার বাইরে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. বেলাল হোসেন। রাত দশটার দিকে গুলশান থাকার দু’জন পুলিশ সদস্য গিয়ে আক্রান্তদেরকে বাসায় তুলে দিয়ে আসেন। তবে বাদীপক্ষের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাসার মালিক। এই ঘটনায় সোমবার বিকালে বাসার মালিক মো. নজরুল, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে গুলশানা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে, যার নম্বর ৭৬৯। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রকৃত ভিন্ন খাতে রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বাসার মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন হামলার শিকার গারো পরিবারটির সদস্যরা। রাজধানীর গুলশান থানাধীন কালাচাঁদপুর বড় মসজিদের কাছে ৯৯/ক হোল্ডিং নম্বরের বাসার ৫ম তলায় মেয়েদের নিয়ে থাকেন শুভ্রা ঘাগ্রা(৩৫)। তিনি সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাসার কারো চাকরি নেই। অর্থনৈতিক সংকট চলছে। প্রতিমাসের ১০ তারিখে বাসা ভাড়াবাবদ ১৪ হাজার টাকা(বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি বিলসহ) দিতে হয়। অনেক কষ্টে গত মাসের(এপ্রিল) ভাড়া পরিশোধ করতে পারলেও চলতি মাসের ভাড়া বকেয়া রয়ে গেছে। ১০ তারিখ চলে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন ভাড়ার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছেন বাসার মালিক মো. নজরুল ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম। আগামী ২০ তারিখে ভাড়া দেয়ার কথা বলে রেখেছি। কিন্তু গত ১৬ মে সকাল দশটায় ভাড়া না পেয়ে গালি দেয়াসহ অশোভন আচরণ করেন বাসার মালিক। তারই ধারাবাহিকতায় পরদিন ১৭ এপ্রিল বিকালে আমাদের বাসা থেকে বের করে দেয়াসহ শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে শুভ্রা ঘাগ্রা বলেন, রবিবার বিকালে নিকটস্থ দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বের হয় আমার দুই মেয়ে ঝুমু ঘাগ্রা(১৭) ও মৌ ঘাগ্রা(২০)। তাদের সঙ্গে ছিল আমার তিন বছরের নাতনি এরিসা। বাজার থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতে চাইলে মূল গেটে বাঁধা দেয় বাসার দারোয়ান। বাসায় ঢুকতে না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে বাসার মালিকের নির্দেশ রয়েছে বলে জানায় দারোয়ান। কল পেয়ে বাসার নিচে নেমে আসেন বাসার মালিক। গেটে পৌঁছেই বাসা ভাড়ার বিষয়টি তুলে বাসার মালিক অশোভন আচরণ করতে থাকেন। ততক্ষণে গেটের সামনে চলে আসেন বাসার মালিকের স্ত্রী ও ছেলে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাসার মালিক, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে ভাড়াটে দু’ মেয়ের উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। রাস্তায় ফেলে অনেকক্ষণ মারধোর করেন। শুধু তাই নয়, মারধোরের এক পর্যায়ে ঝুমু ঘাগ্রার গলা টিপে ধরে অনেকক্ষণ চাপ দিয়ে রাখের বাসার মালিকের ছেলে। গোলমাল শুনে নিচে নেমে এলে আমাকে (শুভ্রা ঘাগ্রা) গেটে আটকে দেয়া দেয়া হয়। চিৎকার করার পর গেট খুলে দিলে আমিও রাস্তায় চলে আসি। আমাকেও মারধোর করতে শুরু করেন তারা। আমাদের প্রত্যেকের শরীরের কাপড় ছিঁড়ে যায়। হামলার সময় তাঁরা আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে হাত দিয়েছেন। একপর্যায়ে আশেপাশের লোকজন এসে আমাদেরকে উদ্ধার করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে এবিষয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। কিন্তু পরে দেয়ার কথা হলে রহস্যজনক কারণে সাধারণ ডায়েরির দিতে গুলশান থানা পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা। রাত দশটার দিকে দুই পুলিশ সদস্য এলেও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই চলে যান। তারা আমাদের কোনো খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ করেন শুভ্রা ঘাগ্রা। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন মামলা দায়ের করতে গেলে নেয়নি গুলশান থানা পুলিশ। এমনকি সাধারণ ডায়েরিও গ্রহণ করা হয়নি। ঘটনার পরদিন ১৮ এপ্রিল বিকালে থানায় গিয়ে আরেকবার চেষ্টা করেও মামলা দায়ের করাতে পারিনি। তবে এদিন সাধারণ ডায়েরি রেখেছে গুলশান থানা পুলিশ। বাসার মালিক ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন শুভ্রা ঘাগ্রা। এ বিষয়ে রবিবার রাতে ঘটনাটির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. বেলাল হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুই পক্ষ বিপরীতমুখী কথাবার্তা বলছেন। বাইরের লোকজন নিয়ে বাসায় ঢুকতে মানা করাকে কেন্দ্র করে হাটাহাটির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বাসার মালিকপক্ষ। আর বাসার ভাড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদীপক্ষের লোকজন। বাসায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান মো. বেলাল হোসেন। বাদীপক্ষের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাসার মালিক মো.নজরুল এর স্ত্রী ফাতেমা বেগম সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, বাদীপক্ষের সকল অভিযোগ মিথ্যা। বাসার ভাড়া নিয়ে ঘটনা ঘটেনি। বারবার অনুরোধ করার পরও ওই ভাড়াটে পরিবারের সদস্যরা লকডাউন মানছেন না। ভবনের ভেতরে বহিরাগতদের নিয়ে ঢুকেন। লকডাউন পালন নিয়ে সৃষ্ট কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। শারীরিক নির্যাতন ও মারাত্মক আঘাত পাওয়র বিষয়টি বানোয়াট বলে অভিযোগ করেন ফাতেমা বেগম।
×