ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলার তৈরির ব্যতিক্রমী যে উদ্যোগ ...

প্রকাশিত: ১০:০০, ২০ মার্চ ২০২০

তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলার তৈরির ব্যতিক্রমী যে উদ্যোগ ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তৃণমূল থেকে ফুটবলার তৈরি না হলে দেশের ফুটবলে কখনই উন্নতি বা ভাল ফল সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরাম (বিএফএসএফ) তৃণমূল থেকে দক্ষ ফুটবলার তৈরির এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। আয়োজন করেছিল অনুর্ধ-১৪ একাডেমি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। অনেক সাড়া জাগানো এ ধরনের টুর্নামেন্ট দেশের ভবিষ্যত ফুটবলারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছিলেন ফুটবলবোদ্ধারা। কেন, তার বিশদ বিবরণ জনকণ্ঠকে দিয়েছেন বিএফএসএফ সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জুবায়ের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব ফুটবল একাডেমিগুলো আছে, সেগুলো মূলত চরমভাবে অবহেলিত। ডিএফএ, ডিএসএ, ক্রীড়া পরিদপ্তর, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ... কারোর কাছ থেকেই কোন ধরনের সহযোগিতা পায় না। এছাড়া বাংলাদেশের কোথাও তাদের নিবন্ধনেরও কোন ব্যবস্থা নেই। তারা সারা বছর শুধু অনুশীলনই করে যায়। কোন প্রতিযোগিতামূলক আসরে অংশ নিয়ে যে নিজেদের নৈপুণ্যের মানোন্নয়ন ঘটাবে এবং কোন প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে যাবে, তারও কোন সুযোগ নেই। এসব চিন্তা করেই আমরা চেয়েছি এসব একাডেমিগুলোকে এক কাতারে নিয়ে এসে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও তাদেরকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করার। এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাছাই করে একাডেমিগুলোকে নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আয়োজন করি বিএফএসএফ অনুধ্ব-১৪ একাডেমি কাপ ফুটবল। পৃষ্ঠপোষকতা করে বসুন্ধরা কিংস। আমরা প্রাধান্য দিয়েছি সেইসব একাডেমিগুলোকে, যাদের খেলোয়াড়রা খেলোয়াড়রা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় দল, বিপিএল, বিসিএল, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে খেলেছে। একাডেমি নিয়ে এ ধরনের ফুটবল টুর্নামেন্ট এর আগে বাংলাদেশে কখনই হয়নি। শুধু নতুন ফুটবলার নয়, নতুন ফুটবল সংগঠক তৈরির ক্ষেত্র হিসেবেও এই আসরটি একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এই আসরটি ঢাকার বাইরে যেকোন স্থানেই আয়োজন করা যেত। তবে যেহেতু ঢাকা হচ্ছে দেশের ফুটবলের প্রাণকেন্দ্র, তাই ঢাকাতেই ১২টি একাডেমিকে নিয়ে প্রতিযোগিতাটি সফলভাবে আয়োজন করে বিএফএসএফ। ভেন্যু হিসেবে বেছে নেয়া হয় পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামকে। কেননা এখানে খেলা হলে প্রচুর দর্শক সমাগম হয়। আরেকটি ব্যাপারÑ এই আসরটি পাইওনিয়ার লিগের আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে একাডেমিগুলোর খেলোয়াড়দের খেলা মাঠে এসে নিয়মিত দেখেছেন বিভিন্ন পাইওনিয়ার দলের কোচ-কর্মকর্তারা। পরে দেখা গেছে একাডেমি কাপে অংশ নেয়া ১৮০ ফুটবলার পাইওনিয়ার লিগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছে। ... মোট কথা পাইওনিয়ার লিগে যে আটটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল, তার মধ্যে ৬টি দলে এবং সুপার লিগের ২০টি দলের মধ্যে ১০টি দলেই ছিল একাডেমি কাপ ফুটবলের খেলোয়াড়রা! বিএফএসএফ-এর আরেকটি কৃতিত্বের কথা জানান জুবায়ের, গতবার একাডেমি কাপ আয়োজনের দুই মাস আগে আমরা বাছাই করা প্রতিটি দলের এলাকায় গিয়ে একাডেমির খেলোয়াড়দের প্রকৃত বয়স যাচাইয়ের ওপর (মেডিক্যাল টেস্ট) সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছিলাম। পরে ওই ১৮০ খেলোয়াড় যখন পাইওনিয়ার লিগে অংশ নেয়, তারা কেউই বয়স জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়নি। আরেকটি তথ্য জানান জুবায়ের, একাডেমি কাপে খেলা দুজন খেলোয়াড়ের কথা বিশেষভাবে বলতে চাই, যারা পরে পাইওনিয়ার লিগে এফসি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার হয়ে খেলেছিল। ওই লিগের সুপার লিগ পর্বে তাদের খেলা দেখে বাফুফের এক বয়সভিত্তিক দলের কোচ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, ওই দুই খেলোয়াড়কে বাফুফের একাডেমিতে নেবেন। এছাড়া সাইফ যুব একাডেমিও যোগাযোগ করে একাডেমি কাপ খেলা তিন ফুটবলারকে তাদের একাডেমিতে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এগুলো অবশ্যই ইতিবাচক দিক। আশা করবো অন্যান্য একাডেমির এমন আরও অনেক খেলোয়াড়ই বাফুফেসহ অন্য আরও ভাল একাডেমিতে ডাক পাবে। তাহলেই আমাদের একাডেমি কাপ আয়োজন করাটা স্বার্থক হবে। জুবায়ের আরও যোগ করেন, একাডেমি কাপের খেলোয়াড়রা বিএফএফ জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেছে। আশা করি ওরা আগামীতে বিভিন্ন ধাপে অতিক্রম করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে বা জাতীয় দলে খেলতে পারবে। গতবার একাডেমি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন প্রসঙ্গে জুবায়েয়ের ভাষ্য, গতবার আসরটি আয়োজন করতে অনেক অর্থ খরচ হয়েছিল। খেলাগুলো পাঁচটি ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলাম। খেলোয়াড়দের সবাইকে জার্সি, পার্টিসিপেশন মানি, প্রতি ম্যাচে ম্যাচ ফি দিয়েছি। এবার কিন্তু পাইওনিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে কোন প্রাইজমানি দেয়া হয়নি। অথচ আমরা একাডেমি কাপের দুই ফাইনানলিস্ট দলকে মাঠেই যথাক্রমে নগদ ১ লাখ ও ৫০ হাজার টাকা করে প্রাইজমানি দিয়েছি। বসুন্ধরা কিংস আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে সাহায্য করেছিল। আশা করছি এবারও তারা আমাদের পাশে থাকবে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে বিপিএল ফুটবল শেষ হলেই আমরা দ্বিতীয়বারের মতো একাডেমি কাপ আয়োজন করবো। যদিও করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে সব ধরনের ফুটবল এখন বন্ধ আছে। তবে আশা করছি দেশ ইনশাল্লাহ অচিরেই ভাইরাসমুক্ত হবে এবং সেপ্টেম্বরেই আমরা আসরটি আয়োজনে সক্ষম হবো। বিএফএসএফ গতবার প্রথমবারের মতো আসরটি আয়োজন করতে গিয়ে হয়তো কিছু ভুলত্রæটি করে থাকতে পারে, আশা করি এবার সেগুলো আর হবে না। ঢাকায় যেখানে মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠ, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব মাঠ, বেরাইদের ফরটিস মাঠের মতো উন্নতমানের মাঠ আছে, সেখানে পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামেই কেন আসরটি করতে হবে? জুবায়েরের ব্যাখ্যা, যে মাঠগুলোর কথা বললেন, কোন সন্দেহ নেই, সেগুলো অনেক ভাল মাঠ। কিন্তু আমরা চেয়েছি এমন একটি মাঠ, যেখানে দর্শকরা ভিড় করে খেলা দেখবেন। পল্টনের আউটার স্টেডিয়াম হচ্ছে তেমনই একটি আদর্শ মাঠ। তাই এই মাঠেই আসরটি আয়োজন করতে চাই। প্রথমত এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মাঠ। দ্বিতীয়ত এই মাঠে খেলে অনেক ফুটবলার তারকা হয়েছেন। তাছাড়া এখন তো পল্টনের মাঠ নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। ফলে খেলাও অনেক ভাল হবে। গতবার তো প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে খেলা চালাতে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছিল। জুবায়ের জানান, আমরা চাচ্ছি এবার সম্পূর্ণ নতুন ১২টি দল নিয়ে একাডেমি কাপ আয়োজন করতে, যেন নতুন দলগুলো নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পায়। সবশেষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফের) প্রশংসা করেন জুবায়ের, গত আসর আয়োজনে বাফুফে আমাদের ভাল মানের রেফারি ও বল দিয়েছে, তাদের মাঠকর্মী চান্দু মাঠ প্রস্তত করে দিয়েছেন। এজন্য আমরা বাফুফের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। আশা করবো এবারও বাফুফে আমাদের একইভাবে সাহায্য করবে। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, অদূর ভবিষ্যতে এই আসরটি যেন বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু হয়ে, ধাপে ধাপে ঢাকায় এসে চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বোপরি আসরটি পরিধির যেন আরও বিস্তৃতি ঘটে। এটাই আমার প্রত্যাশা।
×