ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের কাজ, ব্যয় বেড়েছে আরো ৩০ লাখ

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৭ মার্চ ২০২০

নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের কাজ, ব্যয় বেড়েছে আরো ৩০ লাখ

জাককানইবি প্রতিনিধি ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের (নির্মাণাধীন) সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাস্কর্যটির কাজ শেষ হওয়ার আগেই উদ্বোধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছাড় হওয়া দুটি ভাস্কর্যের কাজ ২০১৯ এর জুন জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সুতিয়া কর্পোরেশন। দুই ভাস্কর্য নির্মাণে মোট বরাদ্দ করা হয়েছিলো এক কোটি এক লাখ টাকা । যেখানে শিল্পী শ্যামল চৌধুরীকে দুটি ভাস্কর্য নির্মান বাবদ দেয়া হবে ৫৫ লাখ টাকা । অন্যদিকে ভাস্কর্যের দুই বেদি নির্মানে বরাদ্দ ছিলো ৪৩ লাখ টাকা যেটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান। ভাস্কর্য দুটির একটি বঙ্গবন্ধুর ও অন্যটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের। মাসের পর মাস বন্ধ থাকা দুটি ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের কোনটিই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি কিন্তু ব্যয় বেড়েছে ৩১ লাখ টাকা। নির্মাণ সময়ের বেশীর ভাগ সময় কাজ বন্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির উপর। এই অভিযোগ স্বীকার করে মেসার্স সুতিয়া কর্পোরেশন এর মালিক জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন নকশার পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার তাই আমাদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিন্তু নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধীক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন ভাস্কর্য নির্মাণে কয়েকজন শিক্ষার্থী নেতা অর্থনৈতিক সহযোগিতা চেয়েছে সেই সহযোগিতা প্রদান সম্ভব হয়নি বলেই কাজ বন্ধ ছিলো এখানে আমাদের কিছুই করার ছিলো না। কারা কাজ বন্ধ রেখেছিলো সেই নাম জানতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট দুই দপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান ও মোঃ মাহাবুবুল ইসলাম। ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে পরিকল্পনা দপ্তর প্রধান মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন- কাজ করতে ব্যয় বেশী হচ্ছে আর এখন দ্রুত কাজ হচ্ছে তাই ব্যয় বেড়েছে। ভাস্কর্য কাজে শ্যামল চৌধুরী ৫৫ লাখ আর বেদি সংশ্লিষ্ট কাজে সুতিয়া এন্টারপ্রাইজ পাবে ৪৬ লাখ টাকা তবে এখন ব্যায় বেড়ে প্রতিষ্ঠানটি পাবে মোট পঁচাত্তর লাখ টাকা। আট লাখ টাকার অমিল রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিকল্পনা দপ্তর প্রধান এর কথায়। বরাদ্দকৃত অর্থের বিষয়ে মেসার্স সুতিয়া কর্পোরেশন এর মালিক জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন কাজের চুক্তি অনুযায়ী ৪৩ লাখ টাকা এবং নকশা পরিবর্তন করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে যুক্ত হবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। স্নাতকোত্তর পড়ুয়া জাকির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন দায় সাড়া ভাবে কাজ শেষ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সারাবছর কাজ করতে দেখিনি কেবল উদ্বোধন করার জন্যে উদ্বোধন করা হচ্ছে । আমাদের জাতির জনকের ভাস্কর্যের কাজ এমনই হয়েছে যে নাড়া দিলে ভাস্কর্য নড়ে। এই অভিযোগটি আমি ডিপিডি মহোদয়কে দিয়েছি। ১৭ মার্চ সকাল ৯টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ফুল দেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ট্রেজারার অধ্যাপক জালাল উদ্দীন এর সামনেই বেদির পলেস্তরা ও বিভিন্ন জায়গার টাইলস খুলে পড়ে। এ বিষয়ে ঠিকাদার জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন সকাল ৮টা৩০ মিনিটে কাজ শেষ করেছি ৯টায় অনুষ্ঠান হলে এমন হতেই পারে। আমাদের কাজে কোন সমস্যা নেই। তবে ভাস্কর্যের পূর্ণ কাজ শেষে আশা করি ভালোই হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন- কাজ বন্ধ থাকলে ব্যয়ও বাড়ে আবার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ কাজও আটকে থাকে। এই জঘন্য কাজে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই সেই সাথে ভাস্কর্য সহ বিশ্ববিদ্যালয়য়ের স্থাপনা গুলোর নির্মাণ ব্যায় এর উপর তদন্ত করা উচিত সরকারের। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন- আমরাও শুনেছি কারা যেন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো। যে কাজটি নিন্দনীয়। অন্যদিকে ডিজাইন পরিবর্তনের কারনের ব্যয় বৃদ্ধি হতে পারে এই বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এখনো ভাস্কর্যের কাজ শেষ হয়নি এটি সত্য। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু ও নজরুল এর দুটি ভাস্কর্য নির্মাণ করার জন্যে ২০১৭-১৮ বছরে টেন্ডার হয়। যার মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের উদ্বোধন হলেও নজরুলের ভাস্কর্যের নেই কোন অগ্রগতি।
×