ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পাথরঘাটায় দুই ছাত্রীকে মারধর ও হাত কেটে ফেলার হুমকি কিশোর গ্যাংয়ের

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৯ মার্চ ২০২০

পাথরঘাটায় দুই ছাত্রীকে মারধর ও হাত কেটে ফেলার হুমকি কিশোর গ্যাংয়ের

সংবাদদাতা, পাথরঘাটা, বরগুনা ॥ বরগুনার পাথরঘাটায় দুই ছাত্রীকে মারধর করে হাত কেটে ফেলার হুমকি এং প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে সপ্তম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়ার হুমকি দিয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যাং বখাটে সৈকত ও রুবেল ওরফে কালা রুবেল। গত শনিবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীকে সবশেষ সময় বেধে দিয়ে বখাটেরা এ হুমকি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র কাইফি মো. সাফওয়ান ও ইমনকে একাধিকবার মারধর করে আহত করে ও হাত কেটে ফেলার হুমকিও দেয়। এঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাকরা। কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান সৈকত আওয়ামী প্রজন্মলীগের পাথরঘাটা পৌর শাখার সভাপতি। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় কাইফি মো. সাফওয়ান ও ইমনকে মারধরের কারণ জানতে গেলে কাইফির বাবা কাকন মোল্লাকে অপমান করে বখাটেরা। রোববার (৮ মার্চ) রাত সাড়ে আটটার দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন মুন্সিরহাট বাজারে বখাটেরা লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনা তাৎখনিক ছড়িয়ে পরলে এলাকায় উত্তেজনা ও এলাকাবাসির মধ্যে খোভ বিরাজ করে। এন.আই.খান রেসিডেন্সিয়াল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিল এবং একাধিক এলাকাবাসি জানান, কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীকে ইভটিজিং করে সৈকত, রুবেল ওরফে কালা রুবেলসহ কয়েকজন বখাটে। ছাত্রীরা বিষয়টি আমাদের জানায় এবং এর প্রতিবাদ করে বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীর ছাত্র কাইফি মো. সাফওয়ান ও ইমন নামে দুই ছাত্র। প্রতিবাদ করায় ওই দুই ছাত্রকে মারধর করায় বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে শালিসী করে মিলিয়ে দেয়া হয়। পরে এর জের ধরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পুনরায় ওই দুই ছাত্রকে মারধর করে। কাইফি দশম শ্রেনীর ছাত্র ও একই বিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষক রফিকুল ইসলাম কাকন মোল্লার ছেলে ও ইমন ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এন.আই. খানের ভাতিজা। তিনি আরও জানান, বখাটেদের মারধর ও উৎশ্রীঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার শালিসী বৈঠক হলেও বখাটেরা বখাটেপনা চালিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি পাথরঘাটা থানায় মৌখিক জানানো হয়। পরে রবিবার রাতে এক অভিভাক তার ছেলেকে মারধরের বিষয়টি জানতে আসলে মুন্সিরহাট বাজারে আসার পরেই বখাটেরা ওই অভিভাবককে অপমান করে। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায় উত্তেজনা বিরাজ ও ক্ষোভে ফেটে ওঠে। বখাটেদের উৎপাতের কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ও শিখকরা আতঙ্কিত রয়েছে ও নিরাপত্তহীনতায় রয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর এক ছাত্রী প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে এসিড নিক্ষেভ করে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয় বখাটে সৈকত ও রুবেল। সবশেষ দুদিন আগেও ওই ছাত্রীকে প্রেমে রাজি না হলে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করে এবং এসিড দিয়ে মুখ পুড়ে দিবে বলে জানান ওই ছাত্রী। ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলে যেতে ভয় পাই, আমাকে পথে পেলেই আটকিয়ে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিবে। ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। আপনাদের (সাংবাদিকের) কাছে কথা বলার পরই হয়তো আমাদের উপর হামলা চালাবে। স্থানীয় কিবরিয়া, ইলিয়াছসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, সৈকত ও রুবেল ওরফে কালা রুবেল কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান। এরা সঙ্গবদ্ধ কিশোর গ্যাং। তারা এলাকায় ৮ থেকে ১০ জন সব সময় একসাথে বখাটেপনা করে এবং নেশায় আসক্ত। কয়েকদিন আগে সৈকত মাদক মামলায় জেল থেকে জামিনে বের হয়। জামিনে বের হয়েই মিনারা বেগম নামে এক নারীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে, বর্তমানে তিনি পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসায় রয়েছে। মিনারা বলেন, আমার স্বামী স্থানীয় জব্বারের কাছে পাওনা টাকা চাইতেই আমার স্বামীকে না পেয়ে আমাকে ভারী লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে, পরে তাদের সাথে থাকা চাকু বের করে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত ওসি) মো. সাইদ আহমেদ বলেন, আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। এরকমের অপরাধ করলে আইনের ফাক দিয়ে এড়াতে পারবেনা। তিনি আরও জানান, রাতেই আমাদের পেট্টোলিং টিম কাজ করেছে। পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, বিষয়টি আমরা আগে থেকেই জানি। ওদের জালায় এলাকাবাসি অতিষ্ট। আমরা ওদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×