ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নরসিংদির যুবককে অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন, গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নরসিংদির যুবককে অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন, গ্রেফতার ৪

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নরসিংদিতে যুবক মোঃ রাসেল (২৮)কে অপহরণের পর দশ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত এক নারীসহ অপহরণকারি চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১ সদস্যরা। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নরসিংদি জেলা সদর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ অভিত মিয়া (২৮), মোঃ পাপ্পু মিয়া (২৮), মারিয়া আক্তার মন্টি (২৩) ও মোঃ বাদল মিয়া (৫৮)। গ্রেফতারকৃত আসামীরা নরসিংদী জেলার সদর থানার স্থায়ী বাসিন্দা। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব-১১ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ অপহরণকারি চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন এলাকার বিত্তবান ব্যক্তিদের কৌশলে অপহরণের পর শারীরিক নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ বাবদ মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। রাসেলের স্ত্রী সুন্দরি নারী মন্টি ইতোপর্বে আরো চার পাঁচটি বিয়ে করে ওই স্বামীদেরও একইভাবে নির্যাতন ও জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে র‌্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। রাসলের সাথে পারিরারিক বিরোধের জের ধরেই স্ত্রী মন্টি, শ্বশুর ও স্ত্রীর বড় ভাইয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ আদায় করতে রাসেলকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। মূলত সৌদি প্রবাসী রাসেলের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই মন্টি তাকে বিয়ে করে। সংবাদ সম্মেলনে মোঃ আলেপ উদ্দিন আরো জানান, একই উদ্দেশ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণকারি চক্রের সাত আটজন ব্যক্তি রাসেলকে নরসিংদি আদালতের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে রাসেলকে তারা অচেতন করে একটি ফ্ল্যাট বাসায় নিয়ে গ্রেফতারকৃতসহ অপহরণকারি সদস্যরা দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে শারীরিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে রাসেলের পরিবারের সাথে দুই লাখ টাকা দফরফা হলে বিকাশের মাধ্যমে ষাট হাজার টাকা আদায় করে অপহরণকারিরা। অবশিষ্ট টাকা আদায় করতে পরদিন ২৯ ডিসেম্বর তারা রাসেলকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে বের হয়। মাঝপথে রাসেল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বললে তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এসময় রাসেল ডাকাত বলে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অপহরণকারিরা তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে অপহরণকারিরা রাসেলকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করে এবং মামলা না করতে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। কিছুদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে রাসেল নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে গিয়ে অপহরণের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব চারজনকে আটক করে। নির্যাতিত রাসেল গণমাধ্যমকে জানান, তাকে নির্যাতনের লোমহর্ষক ভিডিও ধারণ করে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে টাকা আদায় করে নেয় অপহরণকারী চক্র। এই ভিডিওচিত্র দেখে তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। রাসেল গণমাধ্যমের কাছে তাকে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অপহরণকারি চক্রের সদস্যদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন সরকারের কাছে।
×