ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শেয়ারবাজারে লেনদেন হাজার  কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে মূল্য সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ফলে এক বছরের মধ্যে বাজারটিতে সর্বোচ্চ লেনদন হলো। আর সবকটি মূল্য সূচকের উত্থানের মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকল বাজার। প্রাতিষ্ঠানিক, ও ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে হারানো পুঁজি ফিরতে শুরু করেছে। লেনদেন বৃদ্ধির দিনে আগের দিনের চেয়ে বাজারমূলধন বেড়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সোমবারে ডিএসইতে ৯৭৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির পর বাজারটি সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে ৯৮৪ কোটি ২১ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর বাজারটিতে আর সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়নি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়ার পর থেকেই প্রতিদিনই লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেকটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ কমাতে ডাকঘর সঞ্চয় স্ক্রিমের সুদের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনায় নতুন করে শেয়ারবাজারে পুঁজি আসতে শুরু করেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার থেকে নিজেদের দূরে সরেছিলেন তারাও এখন আগামীতে শেয়ারবাজার ভাল হবে এমন প্রত্যাশায় ফিরতে শুরু করেছেন। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার লেনদেনের গতি বেড়ে ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর সোমবার তা আরও বেড়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া সুবিধার পর লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে। এদিকে লেনদেনের সঙ্গে প্রতিদিন বাড়ছে মূল্য সূচক। সোমবার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যদিও লেনদেন শুরুর কিছু সময় পর শেয়ার বিক্রির চাপে সূচকের পতন ঘটে। আগের দিনের তুলনায় সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে যাওয়ার পর সূচকের তীর ওপরে উঠে যায়। দিনশেষে উর্ধমুখীই থাকে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৯৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৩ পয়েন্টে এসেছে। সবকটি সূচকের সঙ্গ বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৮টির। আর ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সবাই আশান্বিত হয়েছে। তার নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে; যে তারল্য সংকট ছিলো সেটা কেটে যাবে। আরেকটি বিষয় বাজারের উত্থানের পেছনে কাজ করেছে। সেটি হচ্ছে, শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত ছিল। অনেক ভালো ভালো শেয়ারের দামও অনেক কমে গিয়েছিল। সে জায়গা থেকে বাজারে উল্লম্ফন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। মোট কথা বাজারে আস্থা ফিরে আসছে। যে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারা আবার ফিরতে শুরু“ করেছে। তবে এই মুহূর্তে সবাইকে ‘দেখেশুনে’ বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন আজিজুল ইসলাম। সোমবারে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জ হোলসিমের শেয়ার। বহুজাতিক কোম্পানিটির লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় সারাদিনে মোট ৩৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুলনা পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। ২১ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে - এডিএন টেলিকম, ওরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সামিট পাওয়ার। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ৯২ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৫২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৮৫টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×