ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রথম স্ত্রী হাজির!

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রথম স্ত্রী হাজির!

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম কদমা গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অনুষ্ঠান গিয়ে হাজির। এতে দ্বিতীয় বিয়ের অনুষ্ঠান ভন্ডুল হয়ে গেছে। মেয়ে পক্ষের দেয়া যৌতুকের এক লাখ টাকা ফিরত পেতে বর আবুল কাশেম (২৫) ও বরের বাবা হাফিজ উদ্দিন (৫৫) কে দুই দিন বাড়িতে আটক করে রাখে দ্বিতীয় বিয়ের আয়োজন করা কনের স্বজনরা। পুলিশে সোপর্দ করার প্রস্তুতি নিলে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টায় যৌতুক নেয়া টাকা ফিরত দেয় বর পক্ষের স্বজনরা। পরে বর ও বরের বাবাকে কনে পক্ষ দুই দিন পর ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় পশ্চিম পূর্বকদমা গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসী ও কনের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তরবালাপাড়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম (২৫) প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে বুধবার রাতে দ্বিতীয় বিয়ে করতে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে পশ্চিম কদমা গ্রামে যায়। সেখানে মকবুলের মেয়ে মনি বেগমের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। এই বিয়েতে কনে পক্ষ বরকে দুইলাখ টাকা যৌতুক দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ইতোমধ্যে বিয়ের আয়োজন করতে বর আবুল কাশেমকে যৌতুকের এক লাখ টাকা নগদ অর্থ অগ্রীম দিয়ে দেয়। কনের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন ঠিক ঠাক চলছিল। কিন্তু বাধসাধে প্রথম স্ত্রী। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর লোক মুখে পেয়ে যায় প্রথম স্ত্রী রোকাইয়া (১৭)। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের পূর্ব মূহুর্তে বুধবার রাতে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে হাজির। সেখানে প্রথম স্ত্রী রোকাইয়া(১৭) সকলকে জানায়, বিয়ে করতে আসা বর আবুল কাশেম তার স্বামী। দুই বছর আগে তার সাথে দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক প্রস্তাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুক দাবি করে স্বামী ও স্বামীর স্বজনরা। যৌতুক দিতে না পারায় তার উপর চলে নির্যাতন। এখন তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে এসেছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিবাহ রেজিষ্টার কাজী হামিদ জানান, প্রথম স্ত্রী বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে স্ত্রী দাবি করে স্বামীর বিয়েতে তার সম্মতি নেয়া হয়নি। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ বলে জানায়। কাজী সাহেব বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যায়। কনে পক্ষ এই প্রতারক বরের সাথে বিয়ে ভন্ডুল করে দেয়। কিন্তু বরকে দেয়া অগ্রীম যৌতুকের এক লাখ টাকা বরের স্বজনদের কাছে ফিরত চায়। বরের স্বজনরা তাৎক্ষনিক টাকা দিতে পারে না। এতে শুরু হয় বাকবিতন্ডা ফলে ঘটনা বেগতিক দেখে বর পক্ষের স্বজনরা বিয়ে বাড়ি থেকে কৌশলে একে একে চলে যায়। কনের বাবা যৌতুক হিসেবে দেয়া অগ্রীম টাকা ফিরত চায়। বর, বরের বাবা ও স্বজনরা তাৎক্ষনিক টাকা ফেরত দিতে পারে না। তখন কনে পক্ষ বর ও বরের বাবাকে আটক করে রাখে। এই নিয়ে সমঝোতা করতে দুই দিন ধরে কনে পক্ষ ও বরপক্ষের বাড়িতে চলে দফায় দফায় বৈঠক। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। ফলে ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোহর উদ্দিনকে কনের বাবা বিষয়টি জানায়। তিনিও চেষ্টা করে সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সিদ্ধান্ত দেয় বর ও বরের বাবাকে থানায় সোপর্দ করতে। এতেই কাজ হয়ে যায়। পুলিশের কাছে গ্রেফতার এড়াতে অবশেষে বরের স্বজনরা টাকা ফিরত দিতে রাজি হয়ে যায়। পরে বর ও বরের বাবাকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় কনে পক্ষ ছেড়ে দেয়। বর ও বরের বাবা নিজবাড়িতে চলে আসে। বিষয়টি ভেলাগুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহর উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনায় পশ্চিম কদমা ও চন্দ্রপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিয়ের বাড়িতে উপস্থিত সকলে প্রথম স্ত্রীর সাহসীকতার প্রশংসা করেছে। স্বামীর নির্যাতন ও বিয়ে ঠেকাতে নারীদের সাহসী হতে হবে। প্রতিবাদী হতে হবে। নিজেকেই ভুমিকা নিতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই সমাজ হতে নারী নির্যাতন ও নারী পুরুষের বৈষম্য দুর হবে। হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ভেলাগুড়ির ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তার এলাকায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করতে এসে বর ও বরের বাবাকে আটকে কনে পক্ষ আটক করে রেখেছে। তাদের থানা সোপর্দ করতে নিয়ে আসবেন। বর ও বরের বাবাকে থানায় নিয়ে আসা হয়নি। পরে তাকে জানানো হয়। বিষয়টি উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংষা হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষ কোন ধরণের অভিযোগ দায়ের করেনি। কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। তবে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
×