বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সদ্য সমাপ্ত জলবায়ু সম্মেলনের ফলকে হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছে নাগরিক সমাজ। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্লাইমেট এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কের ও নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাই বাংলাদেশকে এ ফোরামের নেতৃত্ব দেয়ার কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিনিধিগণ আরও বলেন, আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাশিত ফল আনয়নে ব্যর্থ হওয়ায় জলবায়ু সম্মেলনের প্রতি স্বল্পোন্নত ও জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোর আস্থা হ্রাস পেয়েছে। এই সম্মেলনের ফল থেকে এটা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, জলবায়ু সম্মেলন মূলত দূষণকারী দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষার কাজ করছে। এমতাবস্থায় সরকারকে আগামী ডিসেম্বর ২০২০ এ অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলনে সরকারকে নিজস্ব সক্ষমতা, স¤পদ ও অর্থায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের প্রতি নজর দিতে হবে।
‘মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলন এবং নাগরিক সমাজের পর্যবেক্ষণ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্স স্ট্যাডিসের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুডের জিয়াউল হক মুক্তা, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মোঃ শামসুদ্দোহা, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনের ফলের ওপর পর্যবেক্ষণসমূহ উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের উপ-পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক।
ড. আতিক রহমান বলেন, এ সকল লোক দেখানো আলোচনা-সমঝোতায় বিশ্বের বিপদাপন্ন মানুষ, দেশ ও গ্রহের নিরাপদ করার চেয়ে রাজনীতি ও জীবাশ্ম-জ্বালানির স্বার্থ বড় হয়ে উঠেছে। এই অপরাজনীতি করছে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলের মতো ধনী দেশগুলো এবং তারা আবারও বিজ্ঞানকে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে লাখ লাখ বিপদাপন্ন মানুষকে রক্ষা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে।
আমিনুল হক বলেন, মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত কপ-২৫ ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরে চলা জলবায়ু সম্মেলন হলেও অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে এটি কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি এবং সার্বিকভাবে আয়োজনটি হতাশার মাধ্যমেই শেষ হয়েছে। প্রধান দূষণকারী দেশগুলো কিভাবে ২০২০ সালের মধ্যে তাদের গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের উচ্চাকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করবে সেই পরিকল্পনা উত্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি ব্যবস্থাপনায় অর্থায়নের ব্যাপারে উন্নত দেশগুলো তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। অথচ অধিক বিপদাপন্ন ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশা করেছিল। যে কারণে, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রুলবুক এখনও আলোর মুখ দেখেনি।