কনক কর্মকার বাংলাদেশকে বিশ্বের মাঝে চিনিয়েছে ভিন্নভাবে। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ডধারী কনক কর্মকার। কনক কর্মকার পড়াশোনা করছে ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে তার রেকর্ড সংখ্যা সাত। ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং গিনেস রেকর্ড গড়ার গল্প নিয়ে সাক্ষাতকার নিয়েছেন- গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত
ডিপ্রজন্ম : ব্যালেন্সিংয়ের হাতেখড়ি শুরু হয় কিভাবে?
কনক কর্মকার : ছোট বেলা থেকে আমি ফুটবল ভাল খেলতাম। ফুটবল খেলতে খেলতে আমি ফুটবল ব্যালেন্সিং করতে চেষ্টা করতাম। দেহের বিভিন্ন অংশ দিয়ে যেমন- কপাল, হাঁটু, মাথা, পা ইত্যাদি দিয়ে ফুটবলকে শূন্যে বসিয়ে রাখতাম। ওই সময় থেকে আমি কপালে বিভিন্ন জিনিস রাখতে চেষ্টা করতাম। তখন থেকে আমার ব্যালেন্সিংয়ের হাতেখড়ি হয়।
ডিপ্রজন্ম : ব্যালেন্সিং শিখছেন কোথায়?
কনক কর্মকার : আমি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক সময় ব্যালেন্সিং ভিডিও দেখতাম। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি ব্যালেন্সিং শিখব। তখন নিজ উদ্যোগে ইউটিউব এর সহযোগিতায় ব্যালেন্সিং শুরু করলাম। এরপর ধীরে ধীরে অনুশীলনের মাধ্যমে একপর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যালেন্সিং শিখলাম।
ডিপ্রজন্ম : কাপ ও ফুটবল ব্যালেন্সিংয়ে এত দক্ষ হয়ে উঠলেন কিভাবে?
কনক কর্মকার : আমি যখন ফুটবল এবং গিটার দিয়ে ব্যালেন্সিং করতাম তখন হঠাৎ একদিন ইউটিউব এ দেখলাম একজন কপালে কাপ ব্যালেন্সিং করছিল। যেহেতু আমি ব্যালেন্সিং ভাল পারতাম সেহেতু আমি কাপ দিয়ে ইউনিক কিছু করার চেষ্টা করলাম। অবশেষে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর কপালের ওপরে কাপ ও ফুটবলের ব্যালেন্সিংয়ে দক্ষ হয়ে ওঠলাম।
ডিপ্রজন্ম : প্রথম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ার গল্পটা শুনতে চাই?
কনক কর্মকার : ছোট বেলা থেকে আমি ইউনিক কিছু করতে চেয়েছিলাম। আমার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। আমি ফুটবল কসরত এবং যে- কোন জিনিস কপালে ভাল ব্যালেন্সিং করতে পারতাম সেহেতু এ কাজগুলোর মাধ্যমে আমি আমার দেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন এক বন্ধুর সহযোগিতায় গিনেস বুক সম্পর্কে জানতে পারি, এরপরে গিনেস বুকে ব্যালেন্সিং এর ওপরে রেকর্ডগুলো অনুসন্ধান করতে শুরু করলাম। একটা সময় দেখলাম ইতালির রোকো মারকিউ তার কপালে ৫০০টি কাপ ব্যালেন্সিং করে নতুন গিনেস রেকর্ড তৈরি করে ওই সময় আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি এই রেকর্ডটি ভাঙ্গব। এরপর দীর্ঘ ৬ মাস কষ্টের পড় কপালে ৬০০ কাপ রেখে ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ এ প্রথমবারের মতো নিজের নাম গিনেস বুকে লিপিবদ্ধ করলাম।
ডিপ্রজন্ম : একে একে সাতটা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়লেন, এ নিয়ে বিস্তারিত বলুন?
কনক কর্মকার : বর্তমানে আমি ৭টি গিনেস রেকর্ডের মালিক যার মধ্যে ফুটবল, গিটার, বাস্কেটবল ইত্যাদি দিয়ে আমি এই ৭টি রেকর্ড সম্পূর্ণ করি। আমার রেকর্ডগুলো হলো-
1st Record: Most Cup balanced on the forehead is 1150.
2nd Record : Longest duration balanceing a guiter is 25 minute.
3rd Record : The most basketball neck catches in one minute is 36 time.
4th Record : Longest duration balancing a guitar on the chin is 15 minute 39 second.
5th Record: Most eggs balanced on back of hand is 15
6th Record : Longest duration balancing a lawnmower on the chin is 7 minute.
7th Record : Longest time balancing a football on the knee is 4 minute 6 second.
ডিপ্রজন্ম : রেকর্ড গড়ার পেছনের এমন কোন গল্প যা এখনও কোথাও বলা হয়নি?
কনক কর্মকার : আমি প্রতিটি রেকর্ড করার ক্ষেত্রে আমার বন্ধু বান্ধবের সহযোগিতা নিয়েছি। আমি মূলত মজার ছলে অনুশীলন করে থাকি।
ডিপ্রজন্ম : এতকিছু ভাঙার আছে কিন্তু আপনি রেকর্ড ভাঙতে গেলেন কেন?
কনক কর্মকার : সবকিছু ভাঙ্গলে তো আর গিনেস বুকে নাম লিখানো যায় না। তাই রেকর্ড ভাঙ্গতে হয়েছে। রেকর্ড ভাঙ্গার কারণে গিনেস বুকে নাম উঠেছে।
ডিপ্রজন্ম : গিনেস বুকে আসার ইচ্ছে জাগলো কেন?
কনক কর্মকার : আমার ইচ্ছে ছিল এমন কিছু করব যাতে দেশ ও বিদেশের সকল মানুষ আমাকে এক নামে চেনে, তাই ইউনিক কিছু করার মাধ্যমে নিজের নাম ও দেশের নাম বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।
ডিপ্রজন্ম : প্রথম যেদিন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড কমিটি ঘোষণা করলো আপনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী সেদিনের স্মৃতিচারণ করুন?
কনক কর্মকার : ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ এই দিনে আমাকে প্রথম গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ প্রথম রেকর্ডের জন্য স্বীকৃতি প্রদান করে। ওই দিন রাতে আমি মেইল এর মাধ্যমে জানতে পারি আমার নাম গিনেস বুকে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ওই সময়টা অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না, শুধু বলব ওই মুহূর্তটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।
ডিপ্রজন্ম : বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ডধারী কনক কর্মকার যখন শুনতে পান অনুভূতিটা কেমন হয়?
কনক কর্মকার : একজন মানুষের স্বপ্ন সত্যি হলে অবশ্যই সে অনেক খুশি হয়। ঠিক এমনটা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে। আমার একটা সময় স্বপ্ন ছিল আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ড ধারি হবো যেদিন থেকে আমার এই স্বপ্ন পূরণ হলো ওই দিন থেকে জীবনটা অন্যভাবে উপলব্ধি করতে শিখলাম। এখন অনেক মানুষে যখন আমাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ড ধারী বলে মনটা নিজের অজান্তে ভাল হয়ে যায়।
ডিপ্রজন্ম : পছন্দের এ্যাথলেটিক্স কারা? কাউকে অনুসরণ করা হয় কি?
কনক কর্মকার : আমি ফুটবল ফ্রি-স্টাইলার চডএ এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ড এর মালিক অংযৎরঃধ ভঁৎসধহ কে অনুসরণ করি।
ডিপ্রজন্ম : নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
কনক কর্মকার : আমি একজন সাধারণ মানুষ। বাবা মা ছোট বোন নিয়ে আমাদের ছোট একটি পরিবার। আমার বয়স ২০ বছর এবং আমি ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার ডিপার্টমেন্টের ৭ম পর্বের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন সামাজিক কাজেও বাংলাদেশে নতুন নতুন গিনেস রেকর্ডার তৈরিতে সাহায্য করে থাকি। ইতোমাধ্যে আমি বাংলাদেশে নতুন গিনেস রেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করেছি যাতে করে বাংলাদেশে নতুন নতুন গিনেস রেকর্ড তৈরি করা সহজতর হবে। গ্রুপটির নাম ঈৎবধঃড়ৎ এঁরহহবংং ডড়ৎষফ জবপড়ৎফ ভড়ৎ ইধহমষধফবংয.আমি ভবিষ্যতে পড়াশোনার পাশাপাশি আরও অনেকগুলো গিনেস রেকর্ড করতে চাই।
ডিপ্রজন্ম : সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে কে?
কনক কর্মকার : বন্ধু-বান্ধব এবং বড় ভাইরা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তাদের কারণে আমি আজ রেকর্ড করতে পেরেছি।
ডিপ্রজন্ম : ভবিষ্যতে নতুন কি রেকর্ড গড়ার পরিকল্পনা করছেন?
কনক কর্মকার : ব্যালেন্সিং ও ফুটবল দিয়ে আমি আরো অনেকগুলো রেকর্ড করতে চাই। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে গিনেস রেকর্ড করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে তবে আমি বাংলাদেশকে আরও অনেকবার বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাই।
ডিপ্রজন্ম : তরুণদের কাছে আপনার প্রত্যাশা?
কনক কর্মকার : স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যেতে হবে।
ডিপ্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
কনক কর্মকার : যেখানে গুণীদের কদর করা হবে প্রত্যেক মানুষ নিজের চেষ্টায় নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং মানুষের মাঝে কোন হিংসা থাকবে না, একজন বাঙালী হিসেবে আমরা গর্ব করতে পারি এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই।