স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘এন’ ব্লকে গড়ে উঠছে এক অত্যাধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স। মাত্র কয়েক মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে উন্নতমানের ড্রেনেজ সিস্টেমসহ ফুটবল স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়েছে। বসুন্ধরা কিংস এই মাঠে একাধিক প্রীতি ম্যাচও খেলেছে। কেবল ফুটবলই নয়, ক্রিকেট ও হকি স্টেডিয়াম, ফুটসাল, বাস্কেটবল, ভলিবল ও কাবাডি কোর্ট, গলফ ড্রাইভিং রেঞ্জ, শুটিং ও আরচারি রেঞ্জ, সুইমিং পুল, জিমন্যাশিয়াম ... সবই আছে বসুন্ধরা মাল্টি স্পোর্টস এ্যারেনাতে। এই কমপ্লেক্সের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সুবিধা নিতে পারবেন সহজেই।
বসুন্ধরা কিংস এরই মধ্যে ফুটবলে সাড়া জাগিয়েছে। হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের মিশনে আবির্ভাবের কয়েক বছরের মধ্যেই অনেকটা সফল হয়েছে ক্লাবটি। দেশের মাটিতে সফল হওয়ার পর তাদের লক্ষ্য এবার এশিয়া জয় করা। কিংস ছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালনায় ফুটবলের উন্নয়নে ছুটে চলেছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া ইভেন্টের স্পন্সর হিসেবে বড় ভূমিকা রাখছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
বাংলাদেশকে আবারও দক্ষিণণ এশিয়ার ক্রীড়াজগতে দাপুটে অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি ছিলেন তারকা হকি খেলোয়াড়। তার বড় ভাই আবদুস সাদেক ক্রীড়াঙ্গনের কিংবদন্তি।
প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর চলছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। সম্পূর্ণ আধুনিক একটা ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের পাশ ঘেঁষেই হবে দৃষ্টিনন্দন এক লেক, যার নীল জলরাশি সবুজ-শ্যামল ছায়াঢাকা কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। ভলিউমজিরো আর্কিটেক্টের ডিজাইনে এ কমপ্লেক্স বিভক্ত দুটি জোনে। নর্থ জোনে এএফসির শর্ত মেনে ১০ হাজার দর্শকের গ্যালারিসহ ফুটবল স্টেডিয়াম থাকছে। প্রীতি ক্রিকেট আয়োজনের জন্যও থাকছে স্টেডিয়াম। এছাড়া এই জোনে আছে একটি ফুটসাল কোর্ট এবং ইনডোর গেমস ও সুইমিং পুল কমপ্লেক্স। দুটি সুইমিং পুল থাকছে এখানে। একটি আট লেনের ৫০ মিটারের, অন্যটি ছয় লেনের ২৫ মিটারের। নর্থ জোনের চেয়ে বেশ বড় আকারের হচ্ছে সাউথ জোন। এখানে ১৫ হাজার দর্শকের গ্যালারিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সব সুবিধাই থাকবে এখানে। অনুশীলন মাঠের পাশাপাশি আলাদা নেট প্র্র্যাকটিসের ব্যবস্থাও থাকছে। সাউথ জোনে হবে একাডেমি এবং ক্লাব বিল্ডিং, যেখানে ডরমেটরিতে ৪০০ থেকে ৫০০ জনের আবাসনের সুব্যবস্থা থাকবে। এই একাডেমি ঘিরে অনেক বড় স্বপ্ন দেখছে বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকউটিভ ডিরেক্টর, হেড অব এ্যাকাউন্টস এ্যান্ড ফিন্যান্স এবং বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘একাডেমি হচ্ছে খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। এখান থেকেই দুর্বলতা কাটিয়ে একজন খেলোয়াড় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তত করবেন। অসাধারণ এই ক্রীড়া কমপ্লেক্স বদলে দেবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস। সফলতার এক নতুন পথে ছুটতে শুরু করবে বাংলাদেশ।’
এখানেই শেষ নয়। আর্টিফিশিয়াল টার্ফে খেলা হবে হকি, টেনিস, বাস্কেটবল, ভলিবল, স্কোয়াশ, মাল্টিপারপাস স্পোর্টস, কাবাডি এবং একটি ফুটসাল কোর্ট থাকবে বসুন্ধরা মাল্টি স্পোর্টস এ্যারেনার সাউথ জোনে। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন ল্যান্ডস্কেপ পার্ক আর মাল্টিপারপাস স্টুডিও তো থাকছেই। দর্শকরা খেলা দেখার পাশাপাশি পার্কে ভ্রমণের বিনোদনও পাবেন এখানে। সাউথ জোনে এসবের পাশাপাশি গড়ে উঠছে পেশাদার ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্য আধুনিক মাঠ। এসব মাঠে থাকবে ব্রডকাস্ট কোয়ালিটির ফ্লাডলাইট। সবমিলিয়ে এইস্পোর্টস এ্যারেনা চোখ ধাঁধিয়ে দেবে ক্রীড়ামোদীদের।
বসুন্ধরা কিংসের হোম ভেন্যু এখনও নীলফামারীতেই আছে। ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান আশা করেন, এক মৌসুম পরই কিংসের হোম ভেন্যু বসুন্ধরায় নিয়ে আসা হবে। অভিষেক মৌসুমেই পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়া বসুন্ধরা কিংস হোম গ্রাউন্ডের দিক দিয়েও ইতিহাস গড়তে চলেছে। কেননা পেশাদার লিগের কোন ক্লাবেরই ঢাকায় নিজস্ব হোম গ্রাউন্ড নেই। কিংসই প্রথম এই ধারা শুরু করতে চলেছে।
এশিয়ায় খুব বেশি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নেই। ফিলিপাইন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইসরায়েলেরই কেবল ক্রীড়া কমপ্লেক্স আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের দেরাদুনের ক্রীড়া কমপ্লেক্সকেই সবচেয়ে বড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বেসরকারি উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স হতে যাচ্ছে বসুন্ধরা মাল্টি স্পোর্টস এ্যারেনা। আর এই কমপ্লেক্স নিয়ে এখনই ক্রীড়াঙ্গনের বিশেষজ্ঞরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। অত্যাধুনিক এই কমপ্লেক্স থেকে ভবিষ্যতে হাজারও দক্ষ ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসবে, যারা বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বমঞ্চে উড়িয়ে গৌরব বয়ে আনবে।