নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্ষেতগুলোতে বাতাসে দুলছে ধানের শীষ। মাঠে-মাঠে রোপা আমন মৌসুম দেখে কৃষকের মুখে ফুটছে উজ্জ্বল হাসি। ধুধু চোখে নজর কাড়ছে রোপা আমন ধানের ক্ষেত। কৃষকের কাঙ্খিত স্বপ্নের এ ক্ষেতে আশাতীত ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরজেমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া মাঠ সেজেছে সবুজ ও হলুদ রংয়ে। ধানের গন্ধে ভরে উঠছে গ্রামীণ জনপদ। মাঠজুড়ে কৃষকের ফলানো সোনা রং ধানের ছড়াছড়ি। বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন এবং প্রতি বিঘায় অতন্ত ১৫ থেকে ১৭ মন ধান উৎপাদন হবে এমন আশা করছেন এ উপজেলার কৃষকরা। এ সময় কৃষক ও দিন মজুররা দলবদ্ধভাবে জমিতে ধান কাটার ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদেরকে নানাভাবে সাহযোগিতা করছেন তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও। ইতিমধ্যে আগাম ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে।
ধনবাড়ী উপজেলার কয়ড়া গ্রামের কৃষক আজহারুল ইসলাম জানান, এ বছর আট বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। এমন সুন্দর ধানের ফলন দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে। এ বছর সার ও বিদ্যুতের কোনো সংকট না থাকায় খুবই ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। চাতুটিয়া গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। গতবারের তুলনায় আমি এবার আশানুরুপ ভালো ফলন পাচ্ছি। তবে নিচু জমিগুলেতে ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্য পুরো দমে শুরু হবে ধান কাটা।
এদিকে বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য না থাকায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তাদের দাবি, বাজারে বর্তমানে ধান ৬৩০ থেকে ৬৭০ টাকা দরে কেনাবেচা চলছে। ধানের মূল্য কমপক্ষে ১ হাজার টাকা যেন থাকে সে ব্যাপারে সারকারের সুদৃষ্টি কামানা করেছেন। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিশ্রম আর ব্যয় করা হয়। সে তুলনায় ধানের মূল্য তারা পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে ধান চাষের আগ্রহও হারিয়ে ফেলছেন অনেক কৃষক। বর্তমান সরকার যেমন করে সার-বীজ, কীটনাশক ও বিদ্যুতের ঘাটতি মিটিয়েছে, তেমনই ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রন্তিক কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচে যাবে।
ধনবড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ধনবাড়ী উপজেলা একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। উপজেলায় এবার কৃষক ১০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমিতে কৃষক ধানি গোল্ড, তেজ, উপশি, হাইব্রিড-ব্রি- ১১, ৩৪, ৪৯, ৫১, ৭১, ৭৫, ৮৭ ও বিনা-১৭ এবং স্থানীয় জাতের রোপা আমন ধান রোপন করেছেন। অনেক জমিতে পোলাওয়ের ধান হিসেবে পরিচিত সুগন্ধি খিরসাপাত ও কালিজিরা ধান চাষ করছেন। সুগন্ধি ধানের বাজার মূল্য সব সময় বেশি। বর্তমানে মাঠে-মাঠে ধান পাকতে শুরু করেছে। এবার ধানের রোগবালাই নেই বললেই চলে। কৃষকেরা আগাম ব্যবস্থা নেয়ায় কোন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েনি। কৃষকরা অনেক আশা ভরসা নিয়ে নতুন উদ্যোমে অধিক পরিমাণ জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাহবুবুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ফসল এবার অর্জন করতে পারবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোন ক্ষতি হয়নি। কৃষকরা যেন ভালোভাবে ফসল উৎপাদন করতে পারে তারজন্য আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা ফসলী মাঠে গিয়ে নানা ধরণ পরামর্শ দিয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য ৭ একর জমিতে বীজতলা তৈরী করে চারা উৎপাদন করে উপজেলার ৪২০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।