ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জামালপুরে রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম ॥ গ্রামবাসীর তোপের মুখে কাজ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৩:২১, ৯ নভেম্বর ২০১৯

জামালপুরে রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম ॥ গ্রামবাসীর তোপের মুখে কাজ বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুর সদরের কেন্দুয়ায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাকা রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠায় গ্রামবাসীর তোপের মুখে কাজ বন্ধ রাখতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছে এলজিইডি। রাস্তাটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বিনন্দেরপাড়া থেকে নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তাটি পাকা ও প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেয় এলজিইডি। দরপত্রের মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি কাজটি পায় জয়েনভেঞ্চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিই-এমই-এই (জেভি)। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চুক্তিতে কাজটি করছেন সাব-ঠিকাদার কামরুল ইসলাম। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে না পারায় তারা প্রথম দফায় গত ১৪ জানুয়ারি আবেদন করে সময় বর্ধিত করেন। এরপর দ্বিতীয় দফা নেয়া সময়ও গত ৩০ অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে। কাজ শেষ না করেই এলজিইডি অফিসের সাথে যোগসাজস করে ইতিমধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিলও উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শর্তানুযায়ী চার ফুট প্রশস্ত এই রাস্তার কাজের মধ্যে ইটের খোয়া আর বালি দিয়ে ছয় ইঞ্চি পুরু করে ম্যাকাডম কাজ করার কথা থাকলেও মাত্র তিন থেকে চার ইঞ্চি পুরো করে নিম্নমানের ইটের খোয়া এবং বালি কম দিয়ে মাটি মিশিয়ে ম্যাকাডম করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে তিন ফুট করে মাটি কেটে প্রশস্ত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। রাস্তার দুই পাশে পুকুর, ডোবা বা ঢালু স্থানে প্যালাসাইটিং নির্মাণের কথা থাকলেও কোথাও তা করা হয়নি। ম্যাকাডম কাজ শেষে প্রায় দেড় বছর ধরে ফেলে রাখায় রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে এবং রাস্তার দুই পাশে অনেক স্থানে মাটি ধ্বসে গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কাজটির দ্বিতীয় দফা বাড়ানো সময় গত ৩০ অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে। এরপর চলতি মাসে অনেকটা নষ্ট হয়ে যাওয়া ওই ম্যাকাডমের ওপর ২৫ মিলিমিটার পুরু করে বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দিয়েই করিয়ে নিতে উদ্যোগ নেন সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো: রমজান আলী। জানা গেছে, সেই নিম্নমানের ম্যাকাডমের ওপর ৫ নবেম্বর থেকে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। একদিন পরেই স্থানীয় মোল্লাপাড়ায় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী রাস্তাটির কয়েকটি স্থানে শাবল দিয়ে ম্যাকাডম খুঁড়ে খুবই নিম্নমানের কাজের নমুনা দেখতে পান। গ্রামবাসী মনে করছে নিম্নমানের ম্যাকাডম কাজের ওপর কার্পেটিং করা হলে রাস্তাটি বেশিদিন টিকবে না। কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ করে নতুন করে রাস্তার ম্যাকাডম কাজ সম্পন্ন করে তারপর কার্পেটিংয়ের কাজ করার দাবি জানান তারা। খবর পেয়ে সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো: রমজান আলী মোল্লাপাড়ায় গিয়ে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলেন। তিনি নিজেও নিম্নমানের ম্যাকাডমের অস্তিত্ব পান। একই সাথে তিনি রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ রাখতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেন। এরপর থেকে সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক তোতা জানান, জামালপুর-ঢাকা মহাসড়কের সাথে যুক্ত গ্রামীণ জনপদের পুরনো রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাটি নির্মাণ কাজ খুবই নিম্নমানের হচ্ছে। এত রাস্তাটি বেশিদিন টিকবে না। রাস্তাটি নতুন করে ভালোমতো ম্যাকাডম ও কার্পেটিং করে নির্মাণ করা দরকার। সংশ্লিষ্ট কাজের সাব-ঠিকাদার মো: কামরুল ইসলাম বলেন, রাস্তা নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। গ্রামবাসী সেখানে খারাপের কথা বলছেন প্রয়োজনে সেখানে ম্যাকাডম ঠিক করে দেওয়া হবে। এলজিইডির জামালপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো: রমজান আলী জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রামবাসীর ফোন পেয়ে মোল্লাপাড়ায় রাস্তার কাজ দেখতে গিয়েছি। সেখানে বেশ কয়েক স্থানে ম্যাকাডম কাজ নিন্মমানের হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমি ঠিকাদারকে কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
×