ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নাটোরে তিন সহযোগীসহ কিলার বাবু শেখ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০২:৫৯, ২০ অক্টোবর ২০১৯

নাটোরে তিন সহযোগীসহ কিলার বাবু শেখ গ্রেফতার

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরে চার সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় নাটোর শহরের রেল ষ্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাবু শেখকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ধর্ষণশেষে হত্যাসহ ৮টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে। আর ৮টি হত্যাকান্ডের সাথেই সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায় সে। আজ রবিবার সকাল ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে আটককৃতদেরকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে এ তথ্য দেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম বার। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। প্রেস ব্রিফিংকালে ডিআইজি এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম বার জানান, গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় নারীসহ দুটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। হত্যাকান্ডের পরে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় রাজশাহী থেকে সিআইডি’র ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনা হয়। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় তদন্তভার অর্পণ করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার মোঃ আকরামুল হোসেন এবং বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদকে। তদন্তে নেমে গত ১৫ অক্টোবর নাটোরের সিংড়া থেকে রুবেলকে (২২) আটকের পর তার দেওয়া তথ্যমতে ওই দিন সন্ধ্যায় লালপুর উপজেলার চংধুপইল থেকে চুরি যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার ক্রেতা নাটোর শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী লিটন খাঁকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৬ অক্টোবর নাটোর রেলষ্টেশন এলাকা থেকে আসাদুল(৩৬)কে আটকের পর পুলিশ জানতে পারে যে, লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় চুরি ও খুনের ঘটনায় আসাদুলের সাথে রুবেল ও বাবু শেখ জড়িত ছিল। পরে ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় রেল ষ্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে কালু শেখকে গ্রেফতার করা হয়। ডিআইজি এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম বার আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ নাটোরের লালপুরের চংধুপইল গ্রামের সাবিনা পারভীন ওরফে সাহেরা(৩২)কে হত্যা, বাগাতিপাড়ার জয়ন্তীপুরের রেহেনা বেগম(৬০) কে হত্যা, নলডাঙ্গার বাঁশিলা পূর্ব পাড়া গ্রামের আমেনা বেওয়া(৬০), ২০১৪ সালের নলডাঙ্গার খাজুরা মোল্লাপাড়ার স্কুলছাত্রী মরিয়ম খাতুন লাবনী(১৩)কে ধর্ষণশেষে হত্যা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার বাঁশতৈল গ্রামের রুপ বানু(৪৫)কে হত্যা, একই জেলার সখিপুর থানার তক্তারচালা এলাকার সমলা(৬০)কে হত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এছাড়া তারই দেওয়া তথ্যমতে নঁওগা সদর থানাধীন ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন এবং তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে কালামকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিগলগলিয়া এলাকার বৃদ্ধা শেফালী খাতুন হত্যার রহস্য উন্মেচন করা হয়। তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সামগ্রিকভাবে মনে হয়েছে, মাছ মারার চেয়ে মানুষ মারা বাবু শেখের কাছে সহজ ছিল। নওগা জেলার রানীনগর থানার হরিশপুর গ্রামের মৃত জাহের আলীর ছেলে সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ নিজ এলাকায় অত্যাধিক চুরি করার কারনে এলাকাছাড়া হয়। পরে বাবু শেখ ও তার সহযোগীরা মাছ শিকারীর (জেলে) বেশ ধারণ করে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান রেকি করে বেড়াতো। পরে পরিকল্পনামাফিক সে সহযোগীদের নিয়ে সুবিধাজনক বাড়িতে প্রবেশ করে প্রথমে ভিকটিমদেও ধর্ষণ, হত্যা এবং পরে চুরি করে পালিয়ে যেত। প্রেস ব্রিফিংকালে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বড়াইগ্রাম সার্কেল হারুন-অর রশিদ, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈকত হাসান উপস্থিত ছিলেন।
×