অনলাইন ডেস্ক ॥ ছিলেন মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে। কিন্তু পরবর্তী কালে ভেঙেছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সব বিধিনিষেধ। সমাজের চোখে যা আপাত ‘নিষিদ্ধ’, সেটাই আপন করে নিয়েছিলেন নিজের জীবনে। তাই বলে, তার প্রভাব নীনা গুপ্তা পড়তে দেননি নিজের জীবনে।
নীনার জন্ম দিল্লীতে, ১৯৫৯ সালের ৪ জুন। লরেন্স স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে নীনা সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর ও এম ফিল করেন। তারপরের গন্তব্য ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা। নীনার প্রথম ছবি ‘সাথ সাথ’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি তিনি সমান ধারায় অভিনয় করেছেন সমান্তরাল ঘরানার ছবিতেও। ‘গান্ধী’, ‘মির্জা গালিব’, ‘ইন কাস্টডি’, ‘মাণ্ডি’, ‘সূরয কা সাতওয়া ঘোড়া’, ‘দৃষ্টি’-র মতো ছবিতে নীনার কাজ প্রশংসিত হয়। ‘ওহ ছোকড়ি’-র জন্য তিনি সেরা সহ অভিনেত্রীর বিভাগে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর অভিনীত বাণিজ্যিক ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’, ‘খলনায়ক’ এবং সাম্প্রতিক কালের ‘বাঁধাই হো’।বড় পর্দার সঙ্গেই নীনা কাজ শুরু করেছিলেন টেলিভিশনে। তাঁর প্রথম কাজ ‘খানদান’। তারপর ‘যাত্রা’, ‘ভারত এক খোঁজ’, ‘শ্রীমান শ্রীমতি’, ‘লেডিজ স্পেশাল’-এর মতো টেলিভিশন শো-এ নীনাই ছিলেন প্রধান মুখ।
ভিভ রিচার্ডস ছাড়াও নীনার জীবনে এসেছেন বহু পুরুষ। কেরিয়ারের শুরুতে অলোকনাথের সঙ্গে নীনার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তবে এই সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর পণ্ডিত যশরাজের ছেলের সঙ্গে নীনার সম্পর্ক নাকি গড়িয়েছিল এনগেজমেন্ট অবধি। কিন্তু বিয়ে হয়নি। যশরাজের ছেলের তরফেই নাকি আপত্তি ছিল। তাই এনগেজমেন্ট এগোয়নি বিয়েতে। আটের দশকের শেষে ভিভের সঙ্গে আলাপ নীনার। তাঁদের প্রেম বা নিজের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা, কোনওটাই লুকিয়ে রাখেননি নীনা। তিনি বা ভিভ, দু’জনের কেউ বিয়ের বন্ধনে যেতে চাননি। ১৯৮৯ সালে জন্ম ভিভ ও নীনার একমাত্র মেয়ে মাসাবার। একাই বাবা ও মায়ের ভূমিকা পালন করে মেয়েকে বড় করেন নীনা। ভিভের সঙ্গেও মাসাবার সম্পর্ক ভাল। বিবাহিত জীবনে আরও দু’টি মেয়ে আছে ভিভের। তাঁরা হলেন মাতারা এবং মালি। ভারতের মতো দেশে আটের দশকে সিঙ্গল মাদার হওয়া মুখের কথা ছিল না, বারবার স্বীকার করেছেন নীনা। তবে তাই বলে তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে। জীবনের প্রতি ধাপে নীনা চলেছেন নিজের শর্তেই। ২০০২ সালে তাঁর সঙ্গে আলাপ দিল্লীর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বিবেক মিশ্রের সঙ্গে। ছ’বছর প্রেমপর্বের পরে দু’জনে বিয়ে করেন ২০০৮ সালে। আমেরিকায় এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিবেকের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করেন নীনা। বিবেকের সঙ্গে নীনা আমেরিকায় গিয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বিয়েতে। সেখানেই নীনাকে প্রোপজ করেন বিবেক। নীনা ‘হ্যাঁ’ বলাতে ওখানেই ঝটিতি বসে বিয়ের আসর। বিয়েতে মায়ের পাশে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল কিশোরী মাসাবার। নীনার প্রথম বিয়ে হলেও বিবেকের এটা দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে নীনার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। নীনা জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে আগাগোড়াই ইচ্ছে ছিল বিয়ে না করে থাকার। কিন্তু মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ার পরে একাকিত্ব আর নিঃসঙ্গতা তাঁকে বাধ্য করে ৪৯ বছর বয়সে জীবনের আদর্শ, সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে।
সূত্র : আনন্দাবাজার পত্রিকা