ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ভিসি ও প্রো-ভিসির ‘অপকর্মে’ উদ্বিগ্ন রাবির ৫৮ শিক্ষক, অপসারণ দাবি

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৪ অক্টোবর ২০১৯

ভিসি ও প্রো-ভিসির ‘অপকর্মে’ উদ্বিগ্ন রাবির ৫৮ শিক্ষক, অপসারণ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যের ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান ও উপ-উপাচার্যের সঙ্গে চাকরি প্রত্যাশীর স্ত্রীর ‘দর কষাকষির’ অডিও ফাঁসের ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্যরা উদ্বিগ্ন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৫৮ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা শিক্ষকদের একজন অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ‘আমরা উদ্বিগ্ন’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার দুইটি পৃথক দুষ্কর্ম দেশের গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের সদস্য এবং সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়-জনদের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত ২৬ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তৃতার শেষে উপাচার্য ‘জয় বাংলা’, 'জয় বঙ্গবন্ধু' এবং ‘জয় হিন্দ' স্লোগানে বক্তৃতা শেষ করেন। এটি একটি পরিকল্পিত নকশা যা তিনি তার দুর্নীতি ও অপকর্ম থেকে জনদৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। উপাচার্যের ‘জয় হিন্দ’ বলার পক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর ইতোমধ্যে যে ধূর্ত ব্যাখ্যা গণমাধ্যমে হাজির করেছে তাতে প্রশাসনের দুরভিসন্ধি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক সহায়তাদানকারী প্রতিবেশী ভারতের রাজনৈতিক এবং সামরিক স্লোগান ‘জয় হিন্দ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক উচ্চারণ বাংলাদেশের রাষ্ট্র সত্ত্বার সাথে সাংঘর্ষিক। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার ফাঁস হয়ে ফোনালাপ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তিনি নিয়োগ বাণিজ্যে নিয়োজিত। বিষয়টি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের যে জনরব চালু আছে এই ফোনালাপ তার সত্যতা প্রমাণ করছে। উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিবেকহীন এই সমস্ত কর্মকা-ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের মানবিকতহীন ও নৈতিকতা বিবর্জিত এসব অপকর্মের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই। এছাড়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার সাম্প্রতিক বিবেকহীন আচরণ একই সঙ্গে তাদের নিয়োগ বাণিজ্যের তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করবেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্যরা দুর্নীতিবাজ এবং নিয়োগ বাণিজ্যের নিবেদিত প্রশাসকদের অপসারণ দাবি করছে।’ এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সুদীর্ঘকাল ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসসমূহ ও পরীক্ষাসহ সামগ্রিকভাবে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান। কিন্তু সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমে কিছু খবর ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কিছু কর্মকান্ড আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ মনে করে যে, যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষ তা অনুসন্ধান ও সুরাহা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন। তবে এইসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তথা পরীক্ষাসমূহ ও ক্লাসসহ শিক্ষার পরিবেশ যাতে বিঘিœত না হয় সে সম্পর্কে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও অভিভাবকবৃন্দকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
×