ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

শিক্ষা আইন হবে কবে

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ৫ অক্টোবর ২০১৯

 শিক্ষা আইন হবে কবে

শিক্ষা শুধু কোন সমাজ এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সূচকই নয়, প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারও। প্রাসঙ্গিক এই ব্যবস্থাটি সময়ের যৌক্তিক দাবিতে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হয়ে থাকে। পুরনো শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক আবশ্যকীয় পর্যায়। নতুন শিক্ষানীতির সঙ্গে জড়িত আইনী কার্যক্রমও অত্যন্ত জরুরী। আর এই বিধিবিধান যদি দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে পড়ে কিংবা মাঝপথে আটকে যায় তাহলে পুরো ব্যবস্থাপনাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আইনী কার্যবিধির ব্যত্যয় নতুন শিক্ষানীতির এক অচলাবস্থা। কারণ শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কর্মসূচীতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে প্রাসঙ্গিক আইনী বৈধতার গুরুত্ব। ২০১০ সালে নতুন শিক্ষানীতি প্রবর্তনের পর শিক্ষা আইন জরুরী হয়ে পড়লে পরবর্তী বছর ২০১১ সালে শিক্ষা আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়। গত ৯ বছরে এই আইন মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত না হয়ে এক অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন খসড়াটি চূড়ান্ত করতে পারছে না সে ব্যাপারে হরেক রকম আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। ধারণা করা হচ্ছে নোট, গাইড, কোচিংসহ শিক্ষা বাণিজ্যের এক শক্ত সিন্ডিকেট এমন আইন তৈরিতে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায় রীতিমতো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কোচিং সেন্টারসহ বিশেষ বাণিজ্য গোষ্ঠী আইনী খসড়া চূড়ান্ত করতে মন্ত্রণালয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। এসব প্রভাবশালী বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ের নির্লিপ্ততার সুযোগে আইনী কাঠামোকে দুর্বল করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মূলত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতার মধ্যেই শিক্ষা আইনের সঙ্কট দূরীভূত করা সম্ভব হয়নি গত নয় বছরে। সঙ্গত কারণে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্যসহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা শিক্ষা আইনের এই পশ্চাদপসরণকে উদ্বিগ্ন আর উৎকণ্ঠায় প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছেন। কতিপয় স্বার্থান্বেষী চক্র তাদের হীনম্মন্যতার পরিচয় দিয়ে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের আইনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যাচ্ছে। ২০১১ সালের শিক্ষা আইনকে পুনরায় পর্যালোচনা করে আরও সময়োপযোগী করা হবে। প্রয়োজনে আইনের সংস্কার ও নতুন শক্ত বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হবে যাতে কোন ধরনের অবৈধ ব্যবসা, বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হতে না পারে। দশটি শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিশেষ বিশেষ ধারাকেও বিবেচনায় আনা হবে। ২০১৭ সালেও হরেক রকম গোঁজামিল দিয়ে যে খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে খসড়াটি নাকচ করে ফেরত পাঠায়। নতুন পর্যালোচনার নিরিখে আইনী খসড়া মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পরামর্শকদের নিয়ে বুধবার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও চলছে। তবে শিক্ষা আইনে যেসব অবেধ কর্মসূচীকে নিষিদ্ধ ও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ঠিক সে জায়গায় বিধি নিষেধকে কঠোর অবস্থানে রাখা হবে। শিক্ষানীতিই শিক্ষা আইনকে তার নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। নীতিতেই তেমন প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটিবিচ্যুতি নিরসন করা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় সুষ্ঠু কার্যক্রমকে বিধিবদ্ধ করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষানীতিই তার কাক্সিক্ষত অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেও পাশ কাটিয়ে শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পেশ করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিক্ষার ক্ষেত্রে যতটা অর্জন হয়েছে শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের অভাবে পুনরায় তা সঙ্কটের আবর্তে পড়তে পারে। সবকিছুর জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন বিলম্বিত শিক্ষা আইনের অতিসত্বর অনুমোদন।
×