ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায়

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে প্রটোকল দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ৮ আগস্ট ২০১৯

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে প্রটোকল দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারপতিসহ সাংবিধানিক পদধারীদের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে আগের মতো প্রটোকল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে আদালত বলেছে, ‘রাষ্ট্র ও সমাজের মুখপাত্র হিসেবে আমরা সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করি। এ দায়িত্বশীলতা বিশদ, সত্যের প্রতিফলন এবং এটা সম্পূর্ণ হতে হবে।’ জনস্বার্থে দায়ের করা এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত একটি অবকাশকালীন হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একরামুল হক টুটুল। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মামুন মাহবুব ও তাপস বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডিএজি অমিত কুমার তালুকদার। গত ৩১ জুলাই ‘রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ ভিআইপি নন’ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের এ মন্তব্যকে কোন কোন গণমাধ্যমে আদালতের আদেশ বলে প্রচার করা হয়। এরপর হাইকোর্টের একজন বিচারককে খুলনা সফরের সময় প্রটোকল দেয়ার অনুরোধ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মোঃ শাহীনুর রহমান এই রিট আবেদন করেন। আদালতের আদেশের পর আইনজীবী একরামুল হক টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, কিছু সংবাদমাধ্যম প্রটোকল নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চকে মিসকোট করে সংবাদ প্রচার করেছে। পরে একজন বিচারপতির সফর নিয়েও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হযেছে। এতে সুপ্রীমকোর্ট এবং সাংবিধানিক পদাধিকারীর মর্যাদা ক্ষুণœ করা হয়েছে, এটাই আমি শুনানিতে বলেছি। সুপ্রীমকোর্ট একটি সাংবিধানিক সংস্থা হওয়ায় রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী বিচারপতিরাও প্রটোকল পান। সেই প্রটোকল না দেয়ায় আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে ফেনীর সাবেক জেলা জজ মোঃ ফিরোজ আলমকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের অক্টোবরে তৎকালীন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ফেনী যান। বিষয়টি অবহিত করার পরও ফেনীর জাজশিপ থেকে কোন প্রতিনিধি আসেননি বা যোগাযোগও করেননি। এরপর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর হাইকোর্ট ফেনীর জেলা জজ মোঃ ফিরোজ আলমসহ তিনজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। এর বিরুদ্ধে ফিরোজ আলম আপীলে আবেদন করেন, যা ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি খারিজ হয়। আদালত অবমাননার রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় প্রদান করে। অপর দুজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আদালত অবমাননার দায়ে ফেনীর সাবেক জেলা জজ মোঃ ফিরোজ আলমকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সাতদিনের কারাদ- প্রদান করে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের ভ্রমণ ও পরিদর্শনের ক্ষেত্রে প্রটোকল ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছে আদালত, যা সার্কুলার আকারে জারি করতে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইন সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চের রায়ে বিচারপতিদের ভ্রমণ ও পরিদর্শনের ক্ষেত্রে প্রটোকল ব্যবস্থা নিয়ে চারদফা নির্দেশনাও দেয়া হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, (১) ছুটির দিনে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি কোন জেলা সদরে পরিদর্শন, ভ্রমণ বা সফরে গেলে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার অন্তত একজন বিচারিক কর্মকর্তা সফরকারী বিচারপতিকে সার্কিট হাউস বা তার অবস্থানের জায়গায় অভ্যর্থনা জানাবেন। জেলা ও দায়রা জজ সে সময় জেলা সদর দফতরে অবস্থান করলে অবশ্যই তাকে সফরকারী বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে হবে। (২) সপ্তাহের কোন কর্মদিবসে অফিস চলাকালে সুপ্রীমকোর্টের কোন বিচারপতি সফরে গেলে জাজ ইনচার্জ নেজারত তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। তবে আদালতের কার্যক্রম শেষে জেলা দায়রা জজ অথবা তার অনুপস্থিতে একজন বিচারিক কর্মকর্তা সফরকারী বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। (৩) সফরকারী বিচারপতি উপজেলা বা গ্রামে অবস্থান করলে জাজ ইনচার্জ নেজারত অথবা একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তার দেখভাল করবেন। (৪) সফরকারী বিচারপতির বিদায়ের সময় জেলা ও দায়রা জজ বা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা তাদের প্রতিনিধিদেরও সে সময় উপস্থিত থাকতে হবে।
×