ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১

ফুলবাড়িয়ার সিটি সুপার মার্কেটে দেশী বিদেশী জুতার সমাহার

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১৬ মে ২০১৯

 ফুলবাড়িয়ার সিটি সুপার মার্কেটে দেশী বিদেশী জুতার সমাহার

রহিম শেখ ॥ বছরজুড়েই জুতার চাহিদা থাকলেও রোজার ঈদে তা কয়েকগুণ বাড়ে। আর এ চাহিদা মেটাতে পুরান ঢাকার কারখানা ও গুলিস্তানের পাইকারি সব মার্কেটে চলছে জোর প্রস্তুতি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জুতা কিনতে আসছেন পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। ঈদবাজার ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে রাত-দিন পরিশ্রম করে জুতা তৈরি করছেন কারিগররা। ক্রেতা আকর্ষণ এবং প্রখর রোদ ও বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে এবার জুতার ডিজাইন, আকৃতি ও রঙে ভিন্নতা আনা হয়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে বিদেশী জুতার আধিপত্য বেড়েছে। জানা গেছে, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানসংলগ্ন ফুলবাড়ীয়ায় রয়েছে কয়েকটি জুতার পাইকারি মার্কেট। এগুলো হচ্ছে- সিটি সুপার মার্কেট, জাকের সুপার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও সিদ্দিক বাজার সমবায় মার্কেট। এ মার্কেটগুলোতে সর্বমোট ২ হাজার ৩০০ পাইকারি জুতার দোকান রয়েছে। এছাড়া গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটে রয়েছে খুচরা দোকান। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন জুতো সংগ্রহ করতে। এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি গুলশান, ধানম-ি ও উত্তরার বড় বড় শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসে যেসব জুতো স্যান্ডেল শোভাবর্ধন করছে তার প্রায় ৬০ শতাংশের যোগান দেন এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নন-লেদার ও প্লাস্টিকের অধিকাংশ জুতা আসে চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে। তবে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার, মালিটোলা, নাজিরাবাজার, আলুবাজার, বংশাল, নবাবগঞ্জ ও ইসলামপুরে তৈরি দেশী জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। বুধবার জুতার বৃহত্তম বাজার ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এ মার্কেটের এক থেকে সাত তলা পর্যন্তই জুতার শোরুম। রয়েছে কয়েকশ জুতার দোকান। এগুলোর মধ্যে আফজাল সুজ, তানিশা সুজ, সম্রাট সুজ, রংধনু সুজ, স্বদেশ সুজ, মাসুম সুজ, রুমান সুজ, ডিলাক্স সুজ, পদ্মা সুজ, যমুনা সুজ, কাজী সুজ, সিকদার সুজ, ঝর্ণা সুজ ও মিলন সুজসহ বিভিন্ন কোম্পানির দেশী জুতার দোকান। এর বাইরে এ মার্কেটে প্রায় অর্ধশত বিদেশী জুতার দোকান রয়েছে। তবে সিংহভাগ দোকানই দেশী জুতার। এসব দোকানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শব-ই-বরাতের পর থেকেই জুতার পাইকারি বেচাকেনা চলছে। পুরো রমজান মাসই এ বেচাকেনা চলবে। এদিন কোন কোন দোকানে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। শিশু ও নারী-পুরুষের জন্য বাহারি ডিজাইনের জুতায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ দোকানগুলো। রাজধানীসহ দেশের অন্য এলাকার খুচরা বিক্রেতারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন নতুন ডিজাইন ও সাশ্রয়ী দামের জুতার জন্য, যাতে ঈদবাজারে ভাল মুনাফা হয়। এবার প্রখর রোদ ও বর্ষা মৌসুমে ঈদ উৎসব পালনের কথা মাথায় রেখে দেশীয় কারখানায় তৈরি জুতা শোরুমগুলোতে স্থান পেয়েছে। ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটে কথা হয় সিলেটের ব্যবসায়ী হাফিজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দেশী জুতার পাশাপাশি এখন বিদেশী জুতারও চাহিদা বেড়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হয় এই রোজার সময়। তিনি বলেন, ‘শব-ই-বরাতের পর থেকে এ পর্যন্ত তিন বার জুতা কিনতে এসেছি। ঈদের আগে আরও একবার কিনতে আসব।’ ফুলবাড়িয়া মার্কেটের তানিশা সুজের স্বত্বাধিকারী মোঃ মাসুম শেখ জনকণ্ঠকে জানান, পাইকারিতে জুতা বিক্রি শুরু হয়েছে শব-ই-বরাতের পর থেকেই। এবার প্রস্তুতিও ভাল ছিল। ঈদে ব্যবসা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, এখনও সেভাবে বিক্রি জমে উঠেনি। তবে দুই-একদিনের মধ্যে বিক্রি জমে উঠবে বলে তিনি জানান। স¤্রাট সুজের হাফিজুর রহমান জানান, এ মার্কেটে দেশি জুতা বেশ ভাল চলছে। তবে এবার বিদেশী জুতারও বেশ চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, এত বড় মার্কেটের সামনে মাল পরিবহনের জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেই। তার ওপর মার্কেটের সামনের রাস্তাকে টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে পুরো ফুলবাড়িয়া এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়, যা ব্যবসার জন্য অনেক ক্ষতিকর। এদিকে পুরান ঢাকার পাদুকা পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের পাইকারি বাজার ধরতে বিরামহীন কাজ চলছে। ক্রেতাদের পছন্দসই নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা তৈরি করছেন কারিগররা। ঈদবাজার ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে দিনরাত্রি পরিশ্রম করে জুতার কাজ করছেন তারা। শোরুমগুলোতেও বাহারি সব ডিজাইনের জুতার পসরা সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। ব্যবসায়ীর জানান, বিগত ঈদ মৌসুমে দোকানভেদে প্রতিদিন ২ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। এবার ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। জুতা আমদানির ক্ষেত্রে মূলত চীন ও থাইল্যান্ডের ওপর নির্ভর করে স্থানীয় আমদানিকারকরা। তবে বিদেশী জুতা দেশী জুতার বাজারে প্রভাব ফেলে না বলে মনে করেন জুতা ব্যবসায়ীরা। তবে বিদেশ থেকে যে জুতাগুলো আসে সেগুলোর মান যে খুব ভাল তা নয়। চীন, থাইল্যান্ড থেকে যে জুতা আসে সেগুলো ঐসব দেশের নিম্নমানের জুতা বলে জানান স্থানীয় জুতা প্রস্তুতকারকরা। এ সম্পর্কে লেদার টেকের স্বত্বাধিকারী মাসুদ আহমেদ বলেন, এটা স্বীকার করতে হবে চায়নার জুতার ডিজাইন আমাদের জুতা থেকে অনেক ভাল।
×