ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আসন্ন নির্বাচনে পুরুষ জঙ্গীদের চেয়ে ভয়ঙ্কর হতে পারে নাম পরিচয় গোপন করতে এরা জাতীয় পরিচয়পত্র করেনি

আত্মঘাতী দশ নারী ॥ জঙ্গীবাদে মদদ জামায়াত শিবিরের

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২০ অক্টোবর ২০১৮

আত্মঘাতী দশ নারী ॥ জঙ্গীবাদে  মদদ জামায়াত শিবিরের

গাফফার খান চৌধুরী ॥ জামায়াত-শিবিরের হাত ধরেই জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে ইসলাম ধর্মের প্রতি অন্ধ অনেক তরুণ-তরুণী। গত দুই বছরে জঙ্গী হিসেবে গ্রেফতার ৩৩ জন ছাত্রীই উচ্চবিত্ত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত তরুণী। তারা সবাই জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রী শাখার সদস্য ছিল। তারা সংগঠনটির হয়ে কাজ করার একপর্যায়ে আস্তে আস্তে উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে অন্তত ১০ জন আত্মঘাতী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে। এসব নারী জঙ্গী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরুষ জঙ্গীদের চেয়ে মারাত্মক হতে পারে। এরাই নির্বাচনে বড় ধরনের ফ্যাক্টর। নাম পরিচয় গোপন করতে আত্মঘাতী নারী জঙ্গীরা জাতীয় পরিচয়পত্র করেনি। এ কারণে তাদের মনিটরিংয়ের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এরাই সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ। গত দুই বছরে গ্রেফতার নারী জঙ্গীদের অধিকাংশই জামিনে মুক্ত হয়ে আবার জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এমনই দুই নারী জঙ্গী মৌ ও মেঘলা ওরফে মেঘনা নরসিংদীর একটি জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেফতার হয়েছে। আত্মঘাতী অপর নারী জঙ্গী মনির মৃত্যু হয়েছে। তিনজনই ২০১৬ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে ছাড়া পেয়ে নারী জঙ্গীরা আস্তানা গড়ে তুলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী পরোক্ষভাবে জঙ্গীদের মদদ জোগাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। গত ১৫ অক্টোবর নরসিংদীর মাধবদীর ছোট গদাইরচর গাঙপাড় এলাকার নিলুফা ভিলা ও সদর উপজেলার শেখেরচরের দীঘিরপাড় এলাকার বিল্লালের বাড়িটিতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। শেখেরচরের আস্তানায় আকলিমা আক্তার মনি ও তার স্বামী আবু আব্দুল্লাহ বাঙালী নিহত হয়। নিলুফা ভিলা থেকে গ্রেফতার হয় খাদিজা আক্তার মেঘলা ওরফে মেঘনা ও মৌ নামের দুই নারী জঙ্গী। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত নারী জঙ্গী মনি ও গ্রেফতার মেঘলা এবং মৌ ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়েছিল। জামিন পাওয়ার পর তারা নিজ বাড়িতে না গিয়ে নরসিংদীর ওই দুইটি বাড়িতে ভাড়ায় ওঠে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলে জঙ্গী কর্মকা- চালাচ্ছিল। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর নাজমুল ও হাফেজের সহায়তায় বাসা দুইটি ভাড়া নিয়েছিল তারা। নাজমুল ও হাফেজকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৬ সালের ২১ জুলাই জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের আমীর মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসান (২৭) টঙ্গী থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে আসে নারী জঙ্গীদের বিশাল নেটওয়ার্ক থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য। হাসান জানায়, সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে নারী সদস্যরা নিয়মিত চাঁদা দেয়। চাঁদার টাকা নব্য জেএমবির পুরুষ শাখাকেও বিভিন্ন অপারেশন চালাতে দেয় তারা। নারী জঙ্গীদের চাঁদার হার তাদের আর্থিক সার্মথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। হাসানের তথ্যমতে, ওই বছরই ঢাকার মগবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় আত্মঘাতী নব্য জেএমবির নারী জঙ্গী স্কোয়াডের সদস্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ইসতিসিনা আক্তার ঐশিকে (২৩)। গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বেসরকারী মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী আকলিমা রহমান ওরফে মনি (২৫), ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মৌ (২২) ও খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা ওরফে মেঘনাকে (২৩) গ্রেফতার করে র‌্যাব। নরসিংদীর জঙ্গী আস্তানায় নিহত নারী জঙ্গী মনিও গ্রেফতার হওয়া দুই নারী জঙ্গী মেঘলা ও মৌ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, নিহত মনি ২০১৪ সাল থেকে জঙ্গীবাদে জড়িত ছিল। তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া মাহমুদুল হাসান ওরফে তানভীরের হাত ধরে সে জঙ্গীবাদে জড়িয়েছিল। দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে সে দলকে বড় করার উদ্যোগ নিয়েছিল। পাশাপাশি সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাঁদা সংগ্রহ করছিল। চাঁদার টাকা মাহমুদুল হাসানের নিকট পৌঁছেও দিত। মনি গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার স্থানীয় রেনেসা প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুলে ১৯৯৮ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল। ২০০২ সালে তৃতীয় শ্রেণী পাস করে। ২০০৩ সালে সে সাইনবোর্ড এলাকার হাজী আহাম্মদ আলী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়ে ২০০৪ সালে পঞ্চম শ্রেণী পাস করে। ২০০৫ সালে উত্তরা হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ২০১০ সালে জিপিএ ৪.১৯ পেয়ে এসএসসি পাস করে। ২০১০ সালে হলি সাইন্স কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ২০১২ সালে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। এরপর বিভিন্ন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে চেষ্টা করে ভর্তি হতে না পেরে ২০১৩ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ^বিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে পড়ত। মানারত ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি আরবী অধ্যয়ন করার নামে তার নেতৃত্বে নারী জঙ্গীরা বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতো। সেসব জায়গায় নতুন জেএমবির দাওয়াতী কার্যক্রম চালাত। মনির তথ্য মোতাবেক ঢাকার মগবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশীকে। তার মাসিক চাঁদা ছিল ১২ হাজার টাকা। সে ১০১৩ সাল থেকে জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। নতুন জেএমবির নারী ইউনিটের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঐশী ও মনির কাছ থেকে আসত। ঐশী ১৯৯৮ সালে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তার এমবিবিএস শেষ হয়। ওই বছরের জুন থেকেই ডিএমসিতে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিল। তার পিতা ডাঃ বিশ্বাস আকতার হোসেন (৫৮) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। মা ডাঃ নাসিমা সুলতানা (৪৮) ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের গাইনি বিভাগে কর্মরত। মনি ও ঐশীর তথ্য মোতাবেক রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ার জনতা হাউজিং থেকে গ্রেফতার হয়েছিল ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মৌ। সে আবারও নরসিংদী থেকে গ্রেফতার হয়েছে। মৌ কিন্ডারগার্টেনে লেখাপড়া শুরু করে। মিরপুর-২ নম্বরে অবস্থিত ইসলামীয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করে। এরপর ২০১২ সালে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত বিসিআইসি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। মেডিক্যাল ও ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য ইউসিসি (ফার্মগেট শাখা) কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। ২০১৩ সালে মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসি বিষয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। অনার্স শেষ বর্ষ সপ্তম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত ছিল। সে পাঁচ বছর ধরে জঙ্গীবাদে জড়িত। মৌ জঙ্গীবাদে জড়ায় মনির মাধ্যমে। সম্প্রতি নরসিংদী থেকে গ্রেফতার মেঘলা ওরফে মেঘনা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে মনি ও মৌর মাধ্যমে। মেঘনা সুরিহারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ২০০৪ সালে ৫ম শ্রেণী পাস করে। ২০০৬ সালে আহম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১১ সালে জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে এসএসসি পাস করে। পরবর্তীতে ঢাকা ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে ২০১৩ সালে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। এরপর ২০১৩ সালে মোঃ রোকনুজ্জামানের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। মেঘনা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত ছিল। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে জামায়াতের ১২৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। তার মধ্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অন্যতম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা জামায়াতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও রয়েছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম। নিহত নারী জঙ্গী মনি ও গ্রেফতার হওয়া মেঘলা এবং মৌ মানারাতের ছাত্রী ছিল। এরা ছাড়াও সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া নারী জঙ্গীদের সবাই কোন না কোন সময় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সদস্য ছিল। এসব নারী জঙ্গী ছাড়াও পুরো জঙ্গীবাদকে বিশেষভাবে সহযোগী করার অভিযোগ উঠেছে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সারাদেশে নাশকতার সঙ্গে জড়িত জামায়াত-শিবির নেতাদের বিরুদ্ধে। এসব নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর, সরকারী সম্পদ নষ্ট, হত্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। এদের মধ্যে পল্টন থানার একাধিক মামলার আসামী জামায়াত কর্মী মনিরুজ্জামান গ্রেফতার হয়েছিল। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করে। তার বিরুদ্ধেও পলাতক জঙ্গীদের দিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। রহস্যময় এই জামায়াত কর্মী পিরোজপুর জেলার ভা-ারিয়া থানার মেদিরবাদের জাহাঙ্গীর আলম ফারুকীর ছেলে। রহস্যজনকভাবে সে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। মনিরুজ্জামানের সঙ্গে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলার আসামি হিসেবে আছেন ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক, ছাত্র শিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, ঢাকা মহানগর ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতারা। সূত্রটি বলছে, এক সময় ইসলামী ব্যাংকের কর্মচারী ছিলেন তিনি। তার স্ত্রীও জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ইসলামী ব্যাংকের কর্মচারী অথচ অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক এই দম্পতি। জঙ্গীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে তার চাকরি চলে যায়। পরে বিদেশী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হন। তার বিপুল অঙ্কের টাকার সুনির্দিষ্ট কোন উৎসের সন্ধান মেলেনি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নামে বিদেশ থেকে টাকা এনে জঙ্গীবাদের পেছনে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে। বিদেশ থেকে আসা টাকার একটি বড় অংশ হাতিয়ে নিয়ে তিনি বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হন। সেই টাকায় তিনি ঢাকার গোড়ানে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। র‌্যাব সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় গ্রেফতার নারী জঙ্গীরাও পুরুষ জঙ্গী ও তাদের নানাভাবে সহায়তাকারী ছাড়াও দশ নারী জঙ্গীর নাম প্রকাশ করেছে। নারী জঙ্গীরা হচ্ছে, সাফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনুবা ওরফে তাহিরা, সায়লা ওরফে শাহিদা, সালেহা ওরফে পুতুল, দিনাত জাহান ওরফে নওমী ওরফে বানী, তানজিলা ওরফে মুন্নী, আলিয়া ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলী, মনিরা জাহান ওরফে মিলি ও ছাবিহা ওরফে মিতু। তাদের অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এসব তাদের ছদ্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রকৃত নাম জানার চেষ্টা চলছে। অনেক নারী জঙ্গী আত্মঘাতী হওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র করেনি। এ জন্য তাদের সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী হামলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিজের শরীরে বোমা বেঁধে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে নিহত হওয়া জঙ্গী সাইফুল ইসলামের সার্বিক খরচ জোগানোর দায়ে নারী জঙ্গী হুমায়রা চলতি বছরের ৪ এপ্রিল গ্রেফতার হয়। হুমায়রা ওরফে নাবিলার স্বামী তানভীর ইয়াসির করিমও নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত। ইয়াসির করিম ২০১৭ সালের ১৯ নবেম্বর গ্রেফতার হয়। স্বামীর অবর্তমানে এবং জেএমবির নারী শাখার শীর্ষ নেত্রী হিসেবে হুমায়রা তৎপরতা অব্যাহত চালিয়ে যাচ্ছিল। হুমায়রা নব্য জেএমবির মূল সমন্বয়ক আকরাম হোসেন খান নিলয় গ্রুপের মূল অর্থদাতা। হুমায়রা রাজধানীর একটি বিলাসবহুল শপিং মলের মালিকের মেয়ে। ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেন। পরে মালয়েশিয়ার একটি ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন। তার স্বামী তানভীরও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তানভীরের সঙ্গে পরিচয়। স্বামীর হাত ধরে তিনিও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েন। হুমায়রাও জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংস্থার সদস্য ছিল। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী নারী জঙ্গীদের চাঁদার হার নির্ধারিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী ডাঃ ঐশী মাসিক চাঁদা ১২ হাজার টাকা। নারী জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আছে। তারা জঙ্গী প্রশিক্ষণের জন্য নারী জঙ্গীদের পাকিস্তান পাঠাত। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটের একটি হোটেল থেকে নব্য জেএমবির সদস্য হিসেবে আত্মঘাতী প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য পাকিস্তান যাওয়ার প্রস্তুতিকালে দুই জোড়া নবদম্পতি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, মারজিয়া আক্তার ওরফে সুমি (১৯) ও তার স্বামী মোঃ শরিফুল ইসলাম ওরফে সুলতান মাহমুদ তাপস ওরফে মাহমুদ (১৮) এবং মোঃ আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিনুল (৩৪) ও তার স্ত্রী নাহিদ সুলতানা (৩০)। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে জানান, দুই দম্পতিই সংগঠনের সিদ্ধান্তে বিয়ে করে উচ্চতর জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিতে পাকিস্তানে যাচ্ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে তাদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর কথা ছিল। তারা থ্রিমা ও টেলিগ্রাম গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপ দুইটির মূল কাজ হচ্ছে, বাছাইকৃত জঙ্গীদের দিয়ে দেশের ভেতরে অপারেশন চালানো। অপারেশন সফল হলে তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া। এই গ্রুপে আফিফ, কাইফ, জাইশান ও মফিজ নামের চার জঙ্গীর জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। চারজনের এই গ্রুপটি ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে আছে। নাহিদ সুলতানা নারায়ণগঞ্জ সরকারী তুলারাম কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। সশরীরের উপস্থিত থেকে সাক্ষী হয়েছিল, তাদের বিয়ে দিয়েছিল মাদারীপুরে হিন্দু শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টার প্রধান আসামি পরবর্তীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গী ফাইজুল্লাহ ফাহিম। নাহিদের তথ্যমতে, দেশে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কয়েকটি গ্রুপ আছে। যারা হত্যাসহ আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। বিদেশে থাকা নব্য জেএমবির নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী জঙ্গীদের যোগাযোগ আছে। তাদের কাছ থেকেও এদেশীয় জঙ্গীরা অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছে। র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলছেন, নারী জঙ্গীদের দেয়া তথ্য মোতাবেক ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট জেএমবির মহিলা শাখার পুরুষ প্রশিক্ষক কানাডা থেকে আসা রাশেদুজ্জামান রোজসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দুই দম্পতির সঙ্গে রাশেদুজ্জামান রোজসহ অন্যদের যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
×