জনকণ্ঠ ফিচার ॥ ঢাকার দুর্ভোগ পুরনো। এত পুরনো যে, এ নিয়ে কথা বলা মানে সময় নষ্ট। এরপরও কথা হয়। কথা হচ্ছে। বিশেষ করে এখন এই রমজানে শহরের যে চেহারা একদম মেনে নেয়া যায় না। বিগত দিনের দুর্ভোগ বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেছে। যোগ হয়েছে নতুন বিড়ম্বনা। শহরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা। অসহনীয় যানজট। গাড়ির চাকা একদম ঘুরছে না। ঘুরছে না বললেই চলে। পায়ে হাঁটার পথও দখল হয়েছে নতুন করে। সেখানে উঠে এসেছে ইফতারসামগ্রীর দোকান। আর গ্রীষ্মের গরম তো এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে কথা বলছে না। দিনরাত ঘেমে ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষ। এ অবস্থায় প্রতিটি দিন যুদ্ধ করে কাটছে রাজধানীবাসীর। কিন্তু দেখার কেউ নেই। সব দেখে মনে হয় দেখার কেউ নেই।
যানজটের কথাটিই আগে আসে। সব সময়ই থাকে যানজট। কিন্তু এই রমজানে তা বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেছে। রোজা রেখে ক্লান্ত মানুষজন আগেভাগে কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে চান। ফলে সবার মাঝেই একটা তড়িঘড়ি লক্ষ করা যায়। কিন্তু যাত্রীদের যত তড়িঘড়ি তার থেকে অনেক বেশি যানজট। দুপুরের আগের এবং পরের সময়টা তো চরম দুর্ভোগের। এ সময় যারা রাস্তায় থাকেন তাদের হাতঘড়িটা শুধু চলে। গাড়ি চলে না। জীবন স্থবির হয়ে যায়। গত কয়েকদিন শহর ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় এমন ধারণা হয়েছে। বিকেল বেলাটা আরও বেশি যন্ত্রণার। এ সময় বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাকুল থাকেন সবাই। পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করতে ছুটেন। কিন্তু ততক্ষণে গণপরিবহনের সংখ্যা কমে যায়।
বুধবার বিকেলে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, মানুষ আর মানুষ। যেন দীর্ঘ মিছিল। সে তুলনায় গাড়ি অনেক কম। যে গাড়িগুলো আসছিল সেগুলো আগে থেকেই যাত্রীবোঝাই। এরপরও কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন। ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছিলেন। নারী যাত্রীরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকেও বাস না পেয়ে এক কর্মজীবী নারী খুব বিমর্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। নাম শিরিন আক্তার। বললেন, কাওরানবাজার মোড় থেকে চেষ্টা করছেন তিনি। এভাবে ফার্মগেট পর্যন্ত এসেছেন। তবু কোন বাসে উঠতে পারেননি! তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুলতানা বললেন, আমি মিরপুর যাব। অনেকটা পথ। আজকে মনে হয় বাসায় ইফতার করতে পারব না।
রমজানে আরও একদফা দখল হয়েছে ফুটপাথ। মৌসুমি দোকানদাররা রোজার প্রথম দিনটি থেকেই চুলো পেতে বসে গেছেন। বিশালাকার কড়াই বসিয়ে তাতে ছোলা, পেঁয়াজু ভাজায় ব্যস্ত তারা। রেস্তরাঁগুলোও সামনের দিকে এগিয়ে এসেছে। ফুটপাথ দখল করে ইফতারসামগ্রী সাজাচ্ছে প্রতিদিন। পথচারীদের এসব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এমনকি বেইলি রোডের মতো ব্যস্ত এলাকার ফুটপাথে দোকান বসেছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাঁটার কোন কোন রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ। শপিং করতে আসা লোকজন মূল রাস্তা ধরে হাঁটছেন। পথচারীদের একজন হাবিবুল আলম। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সহকারী পরিচালক। বললেন, গাড়ি পেছনে ফেলে এসেছি। পায়ে হাঁটবো সে অবস্থাও নেই।
এদিকে, ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এখনও চলছে কাটাছেঁড়া। এরই মাঝে প্রাক বর্ষা। হঠাৎ বৃষ্টি। ভারী বর্ষণ। মুহূর্তেই জল জমে পুকুর হয়ে যাচ্ছে। গর্তের মাটি তুলে রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখা হয়েছে। ফুটপাথ এলোমেলো। সোনারগাঁ হোটেলের পাশের ফুটপাথটি পর্যন্ত ব্যবহারের অনুপযোগী।
গরমের কথা তো না বললেই নয়। গ্রীষ্মের প্রথম দিন থেকেই অসহ্য গরম। এখনও অব্যাহত। তাপ প্রবাহের পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এই অসহ্য গরম। আবহাওয়াবিদদের মতে, বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পসহ বাতাস আসছে। তবে দখিনা বাতাসও স্বস্তি দিচ্ছে না। এখন সূর্য খাঁড়াভাবে তাপ বিকিরণ করছে। সেই তাপ ধরে রাখছে জলীয় বাষ্প। ফলে শরীর খুব ঘামছে। ঘামছে বটে। দ্রুত শুকোচ্ছে না।
এমন আরও নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে এক একটি দিন। নানা রকম যুদ্ধ করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। আছে কি?