দশম অধ্যায়
একাত্তরের দিনপঞ্জি
( গত সোমবারের পর)
২৯ জুলাই : লন্ডনে বাংলাদেশের ডাক টিকেটের প্রদর্শনী। এমপি এবং প্রাক্তন ডাকমন্ত্রী জন স্টোনহাউস ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।
১ আগস্ট : নিউইয়র্কে পণ্ডিত রবিশংকরের অনুরোধে জর্জ হ্যারিসন কর্তৃক বাংলাদেশ কনসার্ট মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত। বিটলের সঙ্গে রবিশংকর, আলি আকবর খান ও ডায়লান টমাসের অংশগ্রহণ।
১ আগস্ট : এনবিসি টেলিভিশনে সাপ্তাহিক ‘কমেন্টস’ প্রোগ্রামে এ এম এ মুহিতের বক্তব্য উপস্থাপনা ডযু ও য়ঁরঃ চধশরংঃধহ ঊসনধংংু
৫ আগস্ট : পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান সমস্যা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশিত। শ্বেত মিথ্যাচার বলে সারা বিশ্বে এইটি পরিচিতি।
৫ আগস্ট : ওয়াশিংটন প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি এ এম এ মুহিতের সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কের পাকিস্তান দূতাবাস ও মিশনের সকল বাঙালী কূটনীতিবিদ ও অন্যান্য কর্মচারীদের মোট ১৪ জনের আনুগত্য পরিবর্তন করে বাংলাদেশের পক্ষে ঘোষণা।
৯ আগস্ট : জেনারেল ইয়াহিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার ঘোষণা।
৯ আগস্ট : সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারত বন্ধুত্ব চুক্তি সম্পাদিত।
১১ আগস্ট : ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ।
১৬ আগস্ট : পশ্চিম পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালী জেলখানায় বিশেষ আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের দেশদ্রোহ ও পাকিস্তান ভাঙ্গনের ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি শুরু হয়। শেখ মুজিব অভিযোগ শুনেই আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন উদ্যোগ নেবেন না বলেই জানিয়ে দেন যদিও সরকার ব্যারিস্টার এ কে ব্রোহিকে আসামি পক্ষের উকিল নিয়োগ করে। ট্রাইব্যুনালের সদস্য ছিলেন চেয়ারম্যানসহ তিনজন সামরিক কর্মকর্তা এবং একজন বেসামরিক জেলা জজ।
২১ আগস্ট : করাচীর অদূরে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমানে করে পলায়নের প্রচেষ্টা ব্যর্থ ও তার শাহাদাতবরণ।
২১ আগস্ট : চট্টগ্রামে পাকিস্তানের দুটি জাহাজ ‘আল আব্বাস’ এবং ‘হরমুজ’-এ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা বিস্ফোরণ ঘটায়।
৩ সেপ্টেম্বর : পূর্ব পাকিস্তানে জেনারেল ইয়াহিয়া ড. আবদুল মুত্তালিব মালিককে লাট সাহেব নিযুক্ত করেন।
৮ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পরামর্শক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা। (১) সভাপতি মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
(২) আহ্বায়ক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ
সদস্য (৩) অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (ন্যাপ নেতা)
(৪) মণি সিং (কমিউনিস্ট পার্টি নেতা)
(৫) মনোরঞ্জন ধর (কংগ্রেস নেতা)
(৬) মনসুর আলী (আওয়ামী লীগ নেতা)
(৭) এ এইচ এম কামরুজ্জামান (মুজিবনগর সরকার প্রতিনিধি)
১১ সেপ্টেম্বর : অসন্তুষ্ট ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তাজউদ্দীন আহমদের পদত্যাগ দাবি। দাবিটি হলো- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি পদত্যাগ করবেন।
১৭ সেপ্টেম্বর : লাট সাহেব আবদুল মুত্তালিব মালিকের দশ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন।
১৮ সেপ্টেম্বর : নয়াদিল্লীতে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত।
১২ অক্টোবর : বাংলাদেশ নৌবাহিনী এমভি প্রকাশ এবং এমভি পদ্মা নামে দুটি নৌযান নামাল।
১২ অক্টোবর : জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর পরিকল্পনা ঘোষণা। ৭৮টি জাতীয় পরিষদের আসন শূন্য ঘোষণা এবং ২৩ ডিসেম্বরে উপনির্বাচনের ঘোষণা। নবগঠিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর।
১৩ অক্টোবর : প্রাক্তন লাট সাহেব এবং রাজাকার হিসেবে ঘৃণিত আবদুল মোনেম খান বনানীতে তার নিজগৃহে মুক্তিযোদ্ধা দলের পিস্তলের গুলিতে নিহত।
২০ অক্টোবর : জাতিসংঘ মহাসচিবের পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে পরিদর্শক নিযুক্তির প্রস্তাব। যুদ্ধে লিপ্ত সৈন্যরা তাদের নিজের সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে।
২৪ অক্টোবর : ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯ দিনব্যাপী পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব রাজধানী ব্রাসেলস, ভিয়েনা, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, প্যারিস ও বন ভ্রমণ। তিনি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি এবং ভারতে বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী সমস্যার সমাধানের জন্য আবেদন করেন।
৩ নবেম্বর : ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র বোমা বর্ষণে বিকলকরণ এবং চট্টগ্রামে বৃহৎ তেলবাহী জাহাজ ধ্বংস।
৫ নবেম্বর : জুলফিকার ভুট্টোর চীন ভ্রমণ। পাকিস্তানের সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানদের নিয়ে চীনের সহায়তা কামনা।
১১ নবেম্বর : বেলোনিয়া এলাকায় অবশেষে পাকিস্তানী অস্তিত্বের বিলোপ সাধন।
১৭ নবেম্বর : ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফ্যু জারি।
২২ নবেম্বর : ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে ‘আত্মরক্ষামূলক আক্রমণ’ শুরু।
৩ ডিসেম্বর : পাকিস্তানের ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা।
৩ ডিসেম্বর : ভারতীয় বিমানবাহিনীর আখড়ায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ব্যর্থ আক্রমণ।
৩ ডিসেম্বর : ভারতে বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ৯৯.৮ লাখ।
৪ ডিসেম্বর : জাতিসংঘে পাকিস্তানের উদ্যোগে ও মার্কিন সমর্থনে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব রাশিয়ার ভেটোতে নাকচ।
৫ ডিসেম্বর : রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি এবং বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত হলো না।
৫ ডিসেম্বরে : যুদ্ধবিরতির জন্য আমেরিকার দ্বিতীয় উদ্যোগে প্রস্তাব। রাশিয়ার দ্বিতীয় ভেটোতে ব্যর্থ।
৬ ডিসেম্বর : ভারতের বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দান।
৭ ডিসেম্বর : যশোর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাকিস্তানীদের পলায়ন। শত্রুমুক্ত যশোর এলাকায় আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবর্তন শুরু।
৭ ডিসেম্বর : ভুটানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান।
৭ ডিসেম্বর : নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং জুলফিকার ভুট্টোকে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইয়াহিয়ার ঘোষণা। তারা দায়িত্ব নেবেন ২৭ ডিসেম্বরে।
৮ ডিসেম্বর : ভারত বাংলাদেশ বাহিনীর যৌথ কমান্ড ঘোষণা।
৯ ডিসেম্বর : প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মার্কিন সপ্তম বহরকে চট্টগ্রামে ধাবিত হওয়ার নির্দেশ প্রদান।
১০ ডিসেম্বর : ইন্দো বাংলাদেশ বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান হিসেবে লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নিযুক্তি।
১১ ডিসেম্বর : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার অনুমোদন নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর ডা. আবদুল মুত্তালিব মালিক এবং পূর্বাঞ্চলের সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আত্মসমর্পণের আবেদন জানালেন জাতিসংঘের ঢাকা প্রতিনিধি পল মার্ক অরির কাছে (চধঁষ গধৎপ ঐবহৎু)। কিসিঞ্জারের উদ্যোগে এই আত্মসমর্পণের আবেদন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রত্যাহার করলেন।
১২ ডিসেম্বর : মার্কিন নৌবাহিনী বাংলাদেশ উপকূলের ২৪ মাইলের মধ্যে পৌঁছাল।
১৩ ডিসেম্বর : হেনরী কিসিঞ্জারের উদ্যোগে তৃতীয় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আবারও রাশিয়ার ভেটোতে ব্যর্থ হলো।
১৪ ডিসেম্বর : ঢাকায় মৌলবাদীদের জঘন্য হত্যালীলার তা-ব।
খুঁজে খুঁজে দেশের সেরা সন্তানদের ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা। লাট ভবনে ভারতীয় বাহিনীর বোমা হামলা। গবর্নর ডা. মালিক পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ এলাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আশ্রয় নিলেন।
১৬ ডিসেম্বর : বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ। জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজির রেসকোর্স ময়দানে ৯১ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ।
১৮ ডিসেম্বর : ঢাকার রায়ের বাজারে কতিপয় বুদ্ধিজীবীদের বিকৃত মরদেহ উদ্ধার।
২১ ডিসেম্বর : ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মুজাফফর আহমদের সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠনের আবেদন।
২২ ডিসেম্বর : কলকাতা থেকে বাংলাদেশ সরকারের সব নেতৃবর্গের ঢাকায় আগমন।
২৪ ডিসেম্বর : ইসলামাবাদের অদূরে সিহালা বিশ্রামাগারে ভুট্টো মুজিব বৈঠক। ভুট্টো জানালেন যে, তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছেন। বাংলাদেশ, ভারত ও রাশিয়ার দখলে চলে গেছে।
২৬ ডিসেম্বর : ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ঢাকা-কলকাতার মধ্যে নিয়মিত বিমান সেবা প্রদান শুরু করে।
২৭ ডিসেম্বর : শেখ আবদুল আজিজ, ফণি ভূষণ মজুমদার, আবদুস সামাদ আজাদ এবং জহুর আহমদ চৌধুরী মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেন।
২৭ ডিসেম্বর : ভুট্টো মুজিব দ্বিতীয় বৈঠক ভুট্টো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রসত্তার আবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু জানালেন যে, তিনি বাংলাদেশের অবস্থা না দেখা পর্যন্ত ও সেখানে নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের সঙ্গে আলোচনা না করে কোন মতামত দিতে পারবেন না।
২৮ ডিসেম্বর : অধ্যাপক ইউসুফ আলী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।
৩রা জানুয়ারি ১৯৭২ : করাচী জনসভায় ভুট্টোর প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুকে কি মুক্ত করা যায়।
৭ জানুয়ারি : ভুট্টো-বঙ্গবন্ধু বৈঠক। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা।
বঙ্গবন্ধুর অবস্থান- বাংলাদেশে কি হয়েছে সেটা ঠিকমতো জানা ও দেশের লোকের সঙ্গে না বুঝে তার পক্ষে কোন মতামত দেয়া সম্ভব নয়।
৮ জানুয়ারি : রাতে পিআইএ বিমানযোগে বঙ্গবন্ধুর অনির্দিষ্ট যাত্রাপথে রওনা। ড. কামাল হোসেন ও তার পরিবার তার সফরসঙ্গী। ভোর বেলা তারা জানলেন যে, তারা লন্ডনে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ সরকারও তখন অবহিত হলো।
৯ জানুয়ারি : লন্ডন ক্ল্যারিজ হোটেলে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এওয়ার্ড হীতের সঙ্গে মোলাকাত।
১০ জানুয়ারি : ব্রিটিশ বিমানে বঙ্গবন্ধু ঢাকার পথে দিল্লীতে নামলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ তাকে দিল্লীতে অভ্যর্থনা করলেন।
দিল্লীতে বিমান তেল সংগ্রহ করার পর ঢাকার পথে যাত্রীদের নিয়ে উড়াল দিল, অপরাহ্ণে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। (সমাপ্ত)