আনোয়ার রোজেন ॥ সাইকেল চলছে। কেউ কারও পাশে নয়, বরং এক সারিতে। একজনের পেছনে আরেকজন। প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ সাইকেলের একটি সারি। এভাবে এক সারিতে এগিয়ে গেছেন এক হাজার ২শ’ জন সাইক্লিস্ট। উদ্দেশ্য একটাই- বিজয়ের ৪৫ বছরপূর্তি স্মরণীয় করে রাখতে ‘চলন্ত সাইকেলের দীর্ঘতম একক সারি’ তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বাংলাদেশের নাম লেখানো। প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে এ সাইকেলযাত্রা। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছে বিডিসাইক্লিস্ট নামের একটি সংগঠন। শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন ৩০০ ফুট রাস্তায় তৈরি হয় চলন্ত সাইকেলের এ দীর্ঘতম সারি।
জানা গেছে, এ রেকর্ডের সূচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর ৯১৪ জন সাইক্লিস্ট নিয়ে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম ওঠাতে সমর্থ হয় দেশটি। রেকর্ডটি টিকে থাকে পাঁচ বছর। পুনর্মিলন ও শান্তি প্রসারের উদ্দেশ্যে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাইকেল ফেডারেশন ২০১৫ সালে ৯৮৪ জন সাইক্লিস্টের সারি তৈরি করে রেকর্ডটি নিজেদের করে নেয়। এবার সময় আমাদের। বিডিসাইক্লিস্টের উদ্যোগে এ রেকর্ডটি এবার হবে বাংলাদেশের। এ প্রসঙ্গে বিডিসাইক্লিস্টের মডারেটর ফুয়াদ আহসান চৌধুরী শুক্রবার জনকণ্ঠকে বলেন, সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সাইক্লিং জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে ২০১১ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে বিডিসাইক্লিস্ট। প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ দিনগুলোতে সাইক্লিস্টদের নিয়ে আনন্দ উদযাপনের রাইড আয়োজন করা হয়। এবারের বিজয় দিবসে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি বিশ্বজয়ের।
রেকর্ডের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি জানান, এ আয়োজনের প্রস্তুতি চলে গত ৬ মাস ধরে। আড়াই হাজার রেজিস্টার্ড সাইক্লিস্ট নিয়ে ট্রায়াল ও সিলেকশনের পর এক হাজার ২শ’ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। গিনেস বুকের কিছু নিয়ম-কানুন ও নির্দেশিকা আছে। রেকর্ড বুকে নাম ওঠাতে হলে সেগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হয়।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে সাইকেল আরোহীরা বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের সামনের রাস্তায় জড়ো হতে থাকেন। প্রথমে আড়াই হাজার সাইকেল আরোহীর অংশগ্রহণে শুরু হয় ‘বিজয় রাইড’। নানা বয়সী আর শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষ এ সাইকেলযাত্রায় অংশ নেন। রেকর্ড গড়ার সাইকেলযাত্রা শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। আগেই জানা ছিল, এটি সাধারণ কোন সাইকেল শোভাযাত্রা নয়, বরং টেকনিক্যাল রাইড। রেকর্ড গড়তে হলে এক সারিতে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে যেতে হবে। আয়োজকরা অবশ্য পাড়ি দিয়েছেন প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক। ৩০০ ফুট রাস্তা ধরে বালুর ব্রিজ পার হয়ে আবার ৩০০ ফুট এসেই এ যাত্রা থামে। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয়টি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে পুরো সাইকেলযাত্রার নিরবচ্ছিন্ন (আনকাট) ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবক পুরো সাইকেলযাত্রা মনিটরিং ও সুপারভিশনের দায়িত্বে ছিলেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও যাচাইকাজ শেষে জানা গেছে, প্রিলিমিনারি লাইনে এক হাজার ১৮৬ জন সাইক্লিস্ট নিয়ম মেনে সারিবদ্ধভাবে সাইকেল চালিয়েছেন, যা নতুন রেকর্ড গড়ার জন্য যথেষ্ট। ফুয়াদ আহসান চৌধুরী জানান, গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে আয়োজনের সব খুঁটিনাটি তথ্য পাঠানো হবে। আশা করছি, আগামী পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে রেকর্ড গড়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলবে।
ঢাবিতে সাইকেল র্যালি ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ‘আমার সোনার বাংলাদেশ সবার চাইতে বেশ’ সেøাগানে সাইকেল র্যালি করেছে বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ। শুক্রবার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে র্যালিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। র্যালির উদ্বোধন করেন সাবেক সেনাপ্রধান রাষ্ট্রদূত লে. জে. এম হারুন অর রশীদ।