ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

জামালপুরে ৩৩ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার এক পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৩০ আগস্ট ২০১৬

জামালপুরে ৩৩ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার এক পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ২৯ আগস্ট ॥ ‘দেশ স্বাধীনের আগে থেইকাই আমরা একটা হিন্দু পরিবার এহানে আছি। আওনার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান তালুকদার ওরফে বাবু তালুকদারের লোকেরা নানা ছলছুতোয় মাঝে মধ্যেই আঙ্গরে নির্যাতন করে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। বাড়ি থেইকা উচ্ছেদের ভয় দেখায়। বাড়িভিটার অনেক জমি চেয়ারম্যান তার গু-া দিয়ে বেদখল কইরা নিছে। বাকিটাও বেদখলের পাঁয়তারা করতাছে’- কথাগুলো বলেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের প্রয়াত মধুসূদন সূত্রধর ওরফে খোকারামের ছেলে লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর। একই সময় তার মা ষাটোর্ধ বিধবা শেফালী রানী বলেন, ‘সাতটা পোলাপাইন রাইখা স্বামী খোকারাম অনেক আগেই মারা গেছে। এরপর থেকে আঙ্গর ওপরে বাবু তালুকদার ও তার লোকজনের নির্যাতন বেড়ে গেছে। আঙ্গরে যেন কোন মান-ইজ্জতও নাই। বাবু তালুকদার মাঝে মধ্যেই আঙ্গরে বাড়িঘর ছাইরা ভারত যাবার কয়। বাবু তালুকদার আঙ্গরে বাড়িভিটার ৭০ শতাংশ জমি বেদখলের জন্য তার পোষা লোক দিয়ে আঙ্গরে বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। পুলিশ ঘুষ খাইয়া মিথ্যা মামলা নেয়। মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে না এবং মামলার খবরও দেয় না। অথচ মামলার চার্জশীট দিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। চেয়ারম্যান ও তার লোকজনদের মিথ্যা মামলায় নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়ে দুই মেয়েসহ আমরা তিনজন কয়দিন আগেও হাজত খাইটা আইলাম।’ একই সংখ্যালঘু পরিবারের একজন নিরীহ সদস্য কবি-সাংবাদিক প্রদীপ চন্দ্র মম। তিনি সব সময়ই লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অথচ তিনিও কিছুদিন যাবত মিথ্যা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর একপর্যায়ে রবিবার বিকেলে হাজতে গেছেন। সংখ্যালঘু পরিবারের ওই নিরীহ সদস্য কবি-সাংবাদিক প্রদীপ চন্দ্র মম বলেছেন, ১৯৮৩ সাল থেকে আমাদের নিজ বসত-ভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাবু তালুকদার। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আমার পিতা প্রয়াত মধুসূদন সূত্রধর ওরফে খোকারামের জমিজমা জবরদখল করে বাবু তালুকদার। পরে ওই জমিতে বাবু তালুকদার তার চাচাত ভাই স্বপন তালুকদারকে জোরপূর্বক ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়। এছাড়াও আমাদের পরিবারটির বিরুদ্ধে বাবু তালুকদারের লোকজন একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। গত বছর বাবু তালুকদারের নির্দেশেই হায়তালি বাদী হয়ে আমাদের একই পরিবারের চার মহিলা ও দুই পুরুষ সদস্যকে মিথ্যা মামলার আসামি করেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকাও রহস্যজনক। আওনা ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা বেল্লাল হোসেন জানান, বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে বারবার মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। নির্যাতিত পরিবারের প্রভাবশালী প্রতিপক্ষরা জমিজমার কাগজপত্র দেখায় না। এ ব্যাপারে আওনার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান তালুকদার বাবু বলেন, ‘আমি নিজে সংখ্যালঘু পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি প্রদান করিনি এবং ওই পরিবারের জমিও আমি নিজে বেদখল করিনি। তবে কিছুদিন আগে দৌলতপুর গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা একই গ্রামের মুসলিম পরিবারের সদস্য মোঃ হায়তালিকে মারধর করে। ওই ঘটনায় হায়তালি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে একজন মুসলিম পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি হায়তালিকে কিছুটা সহযোগিতা করেছি মাত্র।’
×