ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

গৌতম পাণ্ডে

সেলুলয়েডে বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১১ আগস্ট ২০১৬

সেলুলয়েডে বঙ্গবন্ধু

চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলে। কখনও এ জীবন হয়ে যায় ইতিহাসের দলিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তেমনই এক গল্পের অবতারণা করেছেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ‘পলাশী থেকে ধানম-ি’ নামের এ গল্পটি প্রথমে মঞ্চনাটক হিসেবে প্রদর্শিত হলেও পরবর্তীতে আনা হলো সেলুলয়েডের পর্দায়। শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টার লন্ডন নিবেদিত ‘পলাশী থেকে ধানম-ি’ প্রামাণ্য নাট্যচিত্রের চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নিজেই। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকা- এবং হত্যার পেছনে যে ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছিল, তা লেখায় তুলে আনেন তিনি। ২০০৪ সালে লন্ডনে নাটক হিসেবে প্রথম মঞ্চস্থ হয় এটি। এরপর ২০০৫ সালে এ সাহিত্যকর্মটি বন্দী করা হয় সেলুলয়েডে। একই বছর কাহিনীচিত্রটি প্রদর্শিত হয় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের মাঝে।নাট্যচিত্রের শুরুতেই নবাব আলীবর্দি খাঁর কবরের পাশে গিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। সেখানে চলে আসেন বঙ্গবন্ধু। দুজনের বক্তব্যের মাঝে উঠে আসে পলাশীর প্রান্তরে নবাবের পরাজয় ও পরবর্তীতে মৃত্যুর পেছনের ষড়যন্ত্রের কথা। পাশাপাশি ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পেছনের ষড়যন্ত্রও যেন একই চিত্রকল্প। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন, ‘এ কাহিনীর অধিকাংশ চরিত্র এখনও বেঁচে আছেন, ফলে আমাকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে ঘটনা বিন্যাশ ঘটাতে হয়েছে। যতদূর সম্ভব আমি ঘটনার বাস্তব সত্যের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি। এ জন্য নিজের সংগৃহীত তথ্য, নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যে রায় প্রকাশিত হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করেছি। ইচ্ছাকৃতভাবে কোন চরিত্রকে মসি-মলিন করার চেষ্টা করিনি।’এতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার ভূমিকায় অপু চৌধুরী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকায় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া বেগম মুজিব চরিত্রে লায়লা হাসান, শেখ হাসিনা চরিত্রে উর্মি মাজহার, শেখ রেহানা চরিত্রে ফাহমিদা হক (কলি), তাজউদ্দিন আহমেদ চরিত্রে প্রবীর কুমার সরদার, খোন্দকার মোশতাক আহমেদ চরিত্রে আলম খান, জেনারেল জিয়াউর রহমান চরিত্রে ড. আনোয়ারুল হক, শেখ ফজলুল হক মনির চরিত্রে কামারুলাহ সরকার কামাল, শেখ কামালের চরিত্রে বিশ্বরূপ বণিক, শেখ জামাল চরিত্রে কুমার বাপ্পা, শেখ রাসেল চরিত্রে মুন্না, সুলতানা চরিত্রে সোনালি ভট্টাচার্য, কুলসুম চরিত্রে পারভীন সুলতানা, আমিনুল হক বাদশা চরিত্রে আমিনুল হক বাদশাসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি হয়েছে আরেক প্রামাণ্যচিত্র ‘বিজয়ের মহানায়ক’। এটি একজন সাধারণ বাঙালির অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প। বঙ্গবন্ধুকে দেখা বা তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তাদের চোখে কেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু? এমন পরিকল্পনা থেকেই ‘বিজয়ের মহানায়ক’ নির্মাণ করা হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর সাহস, ব্যক্তিত্ব, কঠিন কোমলে মিশ্রিত হৃদয়, মানুষের জন্য অপার ভালবাসা ও দূরদর্শী নেতৃত্বসহ বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে তাঁর স্নেহধন্য সৌভাগ্যবানদের স্মৃতিচারণে। জয় বাংলা টিভি প্রযোজিত ও ইনার আই নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রে স্মৃতিচারণ ছাড়াও রয়েছে বাঙালীর হাজার বছরের কাক্সিক্ষত এই পুরুষের দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের দুর্লভ ছবি, দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ ও বিশ্বের খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর সাহসী সাক্ষাতকারগুলোর কিছু দৃশ্য। বিশিষ্ট চিত্র নির্মাতা মঈনুল হোসেন মুকুলের পরিচালনায় নির্মিত ৫৩ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্র গবেষণা, স্ক্রিপ্ট ও সমন্বয়ে ছিলেন সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা। প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেন জয়বাংলা টিভির কর্ণধার সালিমা শারমিন হোসেন।
×