ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশে আইএস অনুচর ও তাদের নীলনক্সা

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে আইএস অনুচর ও তাদের নীলনক্সা

ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) কাছ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সহায়তা পেতেই সম্প্রতি জেএমবি কয়েকটি নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়েছে। আর বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা রয়েছে বলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রগুলো নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মূলত বাংলাদেশে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর হস্তক্ষেপ করার পথ সুগম করে দিতেই এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জেএমবির চালানো নৃশংস এসব হত্যাকা-ের অর্থের যোগান এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত ইসলামী দল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে জঙ্গী প্রশিক্ষণে থাকা বাংলাদেশী জেএমবি সদস্য ও দেশ দুইটির বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন এবং বাংলাদেশস্থ পাকিস্তান দূতাবাস ও পাকিস্তানের কিছু রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় বিপথগামী উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। সম্প্রতি আইএসের বেশ কয়েক বাংলাদেশী সমন্বয়ক ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কয়েক পাকিস্তানী জেএমবি সদস্য ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সম্প্রতি আইএস-যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার সময় গ্রেফতার হয় সিলেটের একটি সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জেএমবি সদস্য হিফজুর রহমান (২২), নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আসিফ আদনান (২৬) ও ফজলে এলাহী তানজিল (২৪)। আদনানের পিতা সুপ্রীমকোর্টের সাবেক বিচারক। আর তানজিলের মা ওএসডি থাকা যুগ্ম সচিব। এদের দেয়া তথ্যের সূত্রধরে ঢাকা থেকে একে একে গ্রেফতার হয় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান ইবনে হামদান (২৪), আইএসের সমন্বয়ক সাখাওয়াতুল কবির (৩৫) ও নজরুল ইসলাম এবং আইএসের অনুসারী জেএমবি সদস্য আনোয়ার হোসেন বাতেন (৩২), রবিউল ইসলাম (৩৫), জেএমবির আঞ্চলিক সমন্বয়ক বহুজাতিক কোম্পানি কোকাকোলার প্রধান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আইএসের সমন্বয়ক মোঃ আমিনুল ইসলাম বেগ (৪৫) ও ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক সাকিব বিন কামাল (৩৮)। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, গ্রেফতারকৃত সমন্বয়করা আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহ করছিলেন। ২০ তরুণকে সংগঠিত করেছিলেন তারা। যারা আইএসে যোগদানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে হিফজুর, আদনান ও তানজিল গ্রেফতার হওয়ায় পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরপরই থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃত ইবনে হামদান বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল কায়েদা ও আইএসের নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ করছিলেন। বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে গোপন তৎপরতার পাশাপাশি আইএসের সদস্য সংগ্রহে জড়িত ছিলেন তিনি। আইএসের সদস্য হিসেবে রিক্রুট করার ক্ষেত্রে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও হিযবুত তাহ্রীরের প্রশিক্ষিত সদস্যদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হতো। কারণ তারা অতিমাত্রায় হিংস্র। সদস্যদের নতুন করে প্রশিক্ষণ ও সার্বিক তৎপরতা চালাতে ব্যয় হওয়া অর্থের যোগান দিত সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম। গাজীপুরের ছয়দানা নামক এলাকায় বহুতল ভবনের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত এ্যালুমিনিয়ামের মই তৈরির বিশাল কারখানা রয়েছে নজরুল ইসলামের। এছাড়া পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে থাকা জেএমবি সদস্য ছাড়াও দেশ দুইটি বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ নজরুল ইসলামের কারখানার নামে ও সরাসরি তার নামে পাঠানো হতো। এসব অর্থ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় মুজাহিদীনদের হাত ঘুরে সীমান্ত পথে হুন্ডির মাধ্যমে নজরুল ইসলামের হাতে আসত। দেশ দুইটি থেকে অর্থ পাঠানোর মূল কাজটির তদারকি করতেন গ্রেফতারকৃত সাখাওয়াতুল কবির ও তার ভায়রা ইজাজ ওরফে কারগিল। ইজাজ ও কবির জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সাবেক সদস্য জেএমবির কারাবন্দী আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের মেয়ের জামাই। ২০০৬ সালে মহাখালী তিতুমীর কলেজে পড়ার সময় ইজাজের সঙ্গে সাখাওয়াতুল কবিরের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তারা দু’জন জেএমবি আমির সাইদুর রহমানের দুই মেয়েকে বিয়ে করেন। ২০০৯ সালে দুই ভায়রা জঙ্গী প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তানে যান। যোগদান করেন আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদায়। মতবিরোধের কারণে সাখাওয়াতুল কবির আল কায়েদা ছেড়ে আইএসে যোগ দেন। আইএসের মতাদর্শ বিধর্মীদের দাওয়াত দেয়া। ইসলামের ছায়াতলে না এলে তাদের হত্যা করা। জঙ্গী প্রশিক্ষণকালে তারা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত ইসলামী দলটির সরাসরি ছত্রছায়ায় জেএমবির নেতৃত্বে কাজ চলছে। এর সঙ্গে অন্য জঙ্গী সংগঠনগুলো কাজ করছে। তারা ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) যুগপৎ বোমা হামলা চালিয়েছিল। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংস্থা তাদের কথায় এবং এ সংক্রান্ত তথ্যে সন্তুষ্ট হয়ে বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেয়া শুরু করে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অধিকাংশ জঙ্গী সংগঠন এবং বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ দেয়। অর্থ পাওয়ার পথ সুগম করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত বাংলাদেশের ইসলাম দলটি এবং বাংলাদেশস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের কতিপয় বিপথগামী উর্ধতন কর্মকর্তা। ইজাজ ও সাখাতওয়াতুল কবির জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সদস্য এবং জেএমবির আমিরের মেয়ের জামাতার হওয়ার সুবাদে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। ইজাজ ও সাখাওয়াতুল কবির পাকিস্তানে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং বাংলাদেশের জেএমবির কাছে নিয়মিত অর্থ পাঠানোর কাজটি করছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পাকিস্তানের পাখতুনখাওয়াব প্রদেশের পেশোয়ারের সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি পাবলিক স্কুলে ৬ জঙ্গী সশস্ত্র বোমা হামলা ও গুলি চালায়। এতে ১৪২ ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও ৮ শিক্ষক নিহত হন। এক শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ দৃশ্য দেখতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে জঙ্গীরা। ওই শিক্ষক মারা যাওয়ার পর ক্লাসে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর চালানো সাঁড়াশি অভিযানে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের ওয়াজিরস্তানে একটি জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বাংলাদেশের চার জেএমবি সদস্যসহ বহু জঙ্গী নিহত হন। নিহত চার বাংলাদেশী জঙ্গীর মধ্যে রয়েছেন গ্রেফতারকৃত জেএমবি আমির সাইদুর রহমানের মেয়ের জামাই ও সাখাওয়াতুল কবিরের ভায়রা সাজ্জাত ওরফে ইজাজ ওরফে কারগিল, সাখাওয়াতুল কবিরের ভাগ্নি জামাই অভি, ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃত জেএমবির প্রশিক্ষিত সদস্য বাতেনের বোন জেএমবির মহিলা শাখার সদস্য পাকিস্তানে অবস্থিত ফাতেমার স্বামী জেএমবি সদস্য সায়েম ও সায়েমের দুলাভাই জেএমবির সক্রিয় সদস্য শামীম। ইজাজ মারা যাওয়ায় সার্বিক কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়ে সত্য। তবে থেমে থাকেনি। এমনকি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন সংস্থা ও জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছ থেকে বাংলাদেশের জেএমবির কাছে অর্থ পাঠানোও বন্ধ হয়নি। তার প্রমাণ মিলেছে চলতি বছরের ২৯ নবেম্বর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পাকিস্তানী নাগরিক ইদ্রিস শেখ ও মোঃ মকবুল শরীফ এবং আটকেপড়া পাকিস্তানী মোঃ সালাম ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এ্যাসিসটেন্ট ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোস্তফা জামান গ্রেফতার হওয়ার পর। গ্রেফতারকৃতরা ভারতীয় ও পাকস্তানী জালমুদ্রা পাচারে জড়িত। ইদ্রিসের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের কাজে ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী বিশেষ স্পাই মোবাইল। যেটি সাধারণত কোন দেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যবহার করে থাকে। স্পাই মোবাইল ফোনটি ঢাকাস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) ফারিনা আরশাদ ও পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। ইদ্রিস ও মকবুল শরীফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন। জবানীতে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তারে ঢাকাস্থ পাকিস্তান দূতাবাস এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনেক কর্মকর্তার জড়িত থাকা এবং অর্থায়ন করার বিষয়টি। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তার ও এ জন্য অর্থায়ন করার সঙ্গে ঢাকাস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের মহিলা গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফারিনা আরশাদ ও পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক পদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার সরাসরি জড়িত বলেও জিজ্ঞাসাবাদে ইদ্রিস জানায়। ফারিনা আরশাদ বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাতে সরাসরি ইদ্রিস আলীকে নগদ টাকা দিতেন। তিনি ফারিনা আরশাদের গাড়িতে চড়ে নানা গোপন তথ্য আদান-প্রদান করতেন। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাতে পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পাকিস্তানী নাগরিকদের কাজে লাগানো হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানী গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই এমন অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক পদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশে ইদ্রিসকে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে পাঠিয়ে জেএমবির কার্যক্রম বাড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে জেএমবি ও রোহিঙ্গাদের পাকিস্তানে পাঠানো, সেখানে উচ্চতর জঙ্গী প্রশিক্ষণ এবং আবার তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িত করার সার্বিক কাজটি দেখভাল করত ইদ্রিস আলী, নিহত ইজাজ, সাখাওয়াতুল কবির, ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইবনে হামদানসহ পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অনেকেই। এই চক্রটির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আর তাতে মদদ দিচ্ছে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংস্থা। এ জন্য পাকিস্তান থেকে তৈরি হওয়া জালটাকা ও জালমুদ্রা বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- দুর্বল করে দেয়ার পাশাপাশি জালরুপী সীমান্তপথে ভারতে পাচারের কারণে সেদেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর নীলনক্সা চলছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, জেএমবির প্রশিক্ষক শামীন মাহফুজ গ্রেফতারের পর তার তথ্যমতে, বান্দরবানের থানচিতে ১৫ একর জায়গার ওপর একটি জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সন্ধান মেলে। সেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গবেষণাগারও ছিল। সেখানে অন্তত ২শ’ জঙ্গীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যাদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হিযবুত তাহ্রীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এছাড়াও ছাত্র শিবির থেকে হিযবুত তাহ্রীরে যোগদান করা বেশকিছু সদস্যও সেই ক্যাম্পে ট্রেনিং করেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অধিকাংশই এখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আল কায়েদা ও আইএসসহ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ভারি সমরাস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাদের অর্থায়ন করা হচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন সংস্থা ও জঙ্গী সংগঠনগুলোর তরফ থেকে। বিশ্বের একটি অন্যতম প্রভাবশালী দেশ পরোক্ষভাবে বেশ কয়েকটি এনজিওর মাধ্যমে তাদের অর্থায়ন করছে। জঙ্গী কার্যক্রম ও অর্থায়নের বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশে জঙ্গী অর্থায়ন করার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। একই বিষয়ে র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী জঙ্গীদের বিষয়ে বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ সর্তকবার্তা দেয়া আছে। তারা যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে এবং দেশে প্রবেশ করা মাত্র তাদের যাতে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় এ জন্য সর্বক্ষণিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। জঙ্গীরা নিজেরাই মূলত চাঁদা দিয়ে ফান্ড গঠন করে থাকে। ইদানীং নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে অর্থ যোগাড় করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া বিদেশ থেকেও জঙ্গী অর্থায়ন হয়ে থাকে। তবে সেটি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে। অনেক ব্যক্তি বিভিন্ন দেশে থেকে বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনকে অর্থায়ন করে থাকেন। এমন বেশ কিছু তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। থানচির ট্রেনিং ক্যাম্পের জন্য ব্যয় হওয়া প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রকল্পের নেপথ্য কারিগরদের সন্ধান চলছে। যদিও এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন দেশের তরফ থেকে বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোকে অর্থায়ন করার কোন তথ্য-প্রমাণাদি তারা পাননি। এ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।
×